মতিঝিল থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম টিপু এবং কলেজছাত্রী সামিয়া আফনান প্রীতি হত্যার ঘটনায় গ্রেপ্তার সুমন শিকদার মুসাকে ১৫ দিনের রিমান্ডে চাইবে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। শুক্রবার (১০ জুন) আদালতে হাজির করে রিমান্ড তার চাওয়া হবে।

শুক্রবার (১০ জুন) দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার।

এ কে এম হাফিজ আক্তার বলেন, এ ডাবল মার্ডারের ঘটনায় বগুড়া থেকে গ্রেপ্তার শুটার মাসুম মোহাম্মদ ওরফে আকাশের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে মূল পরিকল্পনাকারী ও সমন্বয়কারী হিসেবে মুসার নাম আসে। পরে জানা যায় মুসা ঘটনার আগেই ১২ মার্চ দেশ ছেড়ে সংযুক্ত আরব আমিরাত চলে যান।

তার সন্ধান পেতে ৬ এপ্রিল পুলিশ সদর দপ্তরের এনসিবি শাখায় যোগাযোগ করা হয়। সে অনুযায়ী পুলিশ সদর দপ্তর ৮ এপ্রিল মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে ইন্টারপোলের মাধ্যমে যোগাযোগ শুরু করে। এরমধ্যে ৮ মে জানা যায়, মুসা দুবাই থেকে ওমানে প্রবেশ করেছেন।

ইন্টারপোলের ওমান পুলিশ এনসিবির সহযোগিতায় গত ১২ মে মুসাকে গ্রেপ্তার করা হয়। বাংলাদেশ পুলিশের একটি টিম ওমানে গিয়ে বৃহস্পতিবার (৯ জুন) মুসাকে দেশে ফিরিয়ে আনে।

ডিবি প্রধান বলেন, মুসাকে না পেয়ে আমরা মামলার তদন্তে হিমশিম খেয়ে যাচ্ছিলাম। এখন তাকে গ্রেপ্তার করে দেশে আনা হয়েছে। তাকে আদালতে সোপর্দ করে ১৫ দিনের রিমান্ড চাইবো।

এ ঘটনায় সন্দেহভাজন হিসেবে এখন পর্যন্ত ১৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, এখন তদন্তে কার দায় আছে-নেই অথবা কে বাদ বা যুক্ত বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে। মুসাকে গ্রেপ্তারের মাধ্যমে আমরা মামলাটি এগিয়ে নিতে পারব।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, শুটার আকাশের জবানবন্দিতে মুসার নাম আসে। মুসাকে যেহেতু রিমান্ডে আনব, এখনই সব প্রশ্নের উত্তর দিতে পারব না। তবে প্রাথমিকভাবে জেনেছি মুসা পরিকল্পনায় জড়িত।

ঘটনার সঙ্গে মোল্লা শামীম নামে একজনের সংশ্লিষ্টতার বিষয় উঠে এসেছে- এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আগে আমরা নিশ্চিত হবো তিনি কোথায় পালিয়েছেন। এছাড়া কীভাবে পালিয়েছেন বিষয়টি তদন্তে করে দেখা হচ্ছে।

ইতোপূর্বে যাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে তাদের আবার জিজ্ঞাসাবাদে আনা হবে। তাদের মুসার মুখোমুখি করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। এরপর ঘটনায় কার কী সংশ্লিষ্টতা, বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যাবে।

গত ২৪ মার্চ রাত ৯টা ৫০ মিনিটের দিকে জাহিদুল ইসলাম টিপু মাইক্রোবাসে করে শাহজাহানপুর আমতলা হয়ে বাসায় ফিরছিলেন। শাহজাহানপুর ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালের সামনে পৌঁছালে হেলমেট পরা দুর্বৃত্তরা তাকে লক্ষ্য করে গুলি করে। এতে জাহিদুল ও তার গাড়িচালক মুন্না গুলিবিদ্ধ হন। এ সময় জাহিদুলের গাড়ির পাশে রিকশায় থাকা বদরুন্নেসা কলেজের ছাত্রী প্রীতিও গুলিবিদ্ধ হন। তাদের রক্তাক্ত অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক জাহিদুল ও প্রীতিকে মৃত ঘোষণা করেন।

এ ঘটনায় পরের দিন শুক্রবার (২৫ মার্চ) দুপুরে নিহত জাহিদুল ইসলাম টিপুর স্ত্রী ফারজানা ইসলাম ডলি বাদী হয়ে শাহজাহানপুর থানায় অজ্ঞাতদের আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেন।

এ ঘটনায় ২৬ মার্চ রাতে বগুড়া থেকে মাসুম মোহাম্মদ ওরফে আকাশ নামে একজনকে গ্রেফতার করে ডিবি। যিনি সরাসরি টিপুকে লক্ষ্য করে গুলি করেছিলেন। ২ এপ্রিল মুসার ভাই সালেহ শিকদার ওরফে শুটার সালেহ ও মতিঝিল থানার ১০ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওমর ফারুকসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করে র‍্যাব।

র‍্যাব জানায়, চাঁদাবাজি ও দরপত্র নিয়ে আধিপত্যের দ্বন্দ্ব, রিয়াজুল হক মিল্কী হত্যার বদলা এবং বোঁচা বাবু হত্যা মামলা থেকে বাঁচতে টিপুকে হত্যার পরিকল্পনা করেন ওমর ফারুকসহ স্থানীয় কয়েকজন আওয়ামী লীগ নেতা।

এমএসি/এমএইচএস