• কার গাফিলতি ছিল সুনির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত করা হচ্ছে 
• ভবিষ্যতে দুর্ঘটনা এড়াতে সুপারিশমালা প্রণয়ন
• চবি, পরিবেশ অধিদপ্তর ও সিআইডির ল্যাবের সহযোগিতা নেওয়া হচ্ছে 
• কেমিকেল রাখার জেরিক্যানে কোনো সমস্যা ছিল কি না দেখা হচ্ছে 

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের বিএম কনটেইনার ডিপোর অগ্নিকাণ্ডের কারণ অনুসন্ধান করছে বিভাগীয় কমিশনার গঠিত তদন্ত কমিটি। কমিটির আহ্বায়ক ও অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় গাফিলতি আছে। এই গাফিলতি কাদের ছিল সুনির্দিষ্টভাবে তা চিহ্নিত করার কাজ চলছে। গাফিলতি না থাকলে আসলে এ ধরনের বড় দুর্ঘটনা হতো না। নিশ্চয়ই কোথাও না কোথাও বিচ্যুতি ছিল। সেটা এখন নির্দিষ্ট করার প্রচেষ্টা চালাচ্ছি।

তদন্ত প্রতিবেদনের বিষয়ে জানতে চাইলে মঙ্গলবার ঢাকা পোস্টকে অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার বলেন, প্রথমে তদন্ত কমিটিতে ৯ জন সদস্য ছিলেন। পরে আরও তিনজনকে কোঅপ্ট করা হয়েছে। মোট ১২ জন সদস্য কাজ করছেন। কমিটিতে ডিপো পরিচালনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব বিভাগের প্রতিনিধি আছেন। 

তিনি বলেন, এই কমিটির প্রধান কাজ হচ্ছে বিএম কনটেইনার ডিপোর অগ্নিদুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধান করা, এর দায় দায়িত্ব নির্ধারণ করা। এছাড়া এই ধরনের ঘটনা যাতে ভবিষ্যতে না ঘটে সেই বিষয়ে সুপারিশমালা প্রণয়ন করা। 

তদন্ত কমিটির প্রধান বলেন, আমরা দায়িত্ব পাওয়ার পরপরই দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। সোমবার আবারও পরিদর্শন করেছি। সে সময় ডিপোতে অনেকক্ষণ ছিলাম। ডিপো থেকে বিভিন্ন নমুনা সংগ্রহ করেছি। নমুনাগুলো ল্যাব টেস্ট করিয়েছি। আরও কিছু ল্যাবটেস্ট হচ্ছে। আমরা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগ, পরিবেশ অধিদপ্তরের ল্যাব ও সিআইডির ল্যাবের সহযোগিতা নিচ্ছি।

তিনি বলেন, ডিপোতে যে কেমিকেল ছিল বা পাওয়া গেছে, তার উৎপাদন কারখানাও ভিজিট করব। মূলত আমরা চেষ্টা করছি অগ্নিকাণ্ডের কারণটা কী তা বের করার। এটা কি কেমিকেল থেকেই হয়েছে? হলে কেমিকেল যে অনুপাতে থাকার কথা, সে অনুপাতে ছিল কি না? সেরকম থাকলে তো হওয়ার (দুর্ঘটনা) কথা না। তাহলে সেখানে কোনো ব্যতিক্রম হয়েছে কি না এবং কেমিকেলটি যেভাবে রাখা হয়েছে তা সঠিক কি না, সে বিষয়গুলো দেখা হচ্ছে। এছাড়া ডিপোতে অন্য কোনো কেমিকেল আছে কি না সে বিষয়েও আমাদের নিশ্চিত হতে হবে।

তদন্ত কমিটির প্রধান বলেন, প্রথমে আমাদের ৫ কর্মদিবস সময় দেওয়া হয়েছিল। ইতোমধ্যে তা শেষ হয়ে গেছে। আমাদের আবেদনের প্রেক্ষিতে আরও ৫ কর্মদিবস সময় দেওয়া হয়েছে। আগামী রোববার তা শেষ হবে। এরমধ্যে আমরা চেষ্টা করব তদন্ত কাজ শেষ করে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার।   

তদন্তকারী দল ডিপো থেকে কেমিকেলের নমুনা, কনটেইনারের ছাইয়ের নমুনা সংগ্রহ করেছে। মিজানুর রহমান বলেন, যে জেরিক্যানের মধ্যে হাইড্রোজেন পার অক্সাইড নামের কেমিকেলটি ছিল, সেই জেরিক্যানটিও নিয়েছি। জেরিক্যানে কোনো সমস্যা আছে কি না তা দেখার বিষয় রয়েছে।

ঢাকা পোস্টকে তিনি আরও বলেন, অফডক পরিচালনার সঙ্গে সম্পর্কিত যেসব সরকারি সংস্থা আছে তাদের চিঠি দিয়েছি। গত এক বছরে ডিপোটি পরিদর্শন করেছিলেন কি না তা জানতে চেয়েছি। করে থাকলে কী ধরনের ত্রুটি দেখতে পেয়েছেন তা জানাতে বলেছি এবং কর্তৃপক্ষ থেকে কমপ্লায়েন্সের বিষয়টি কী রকম ছিল তার প্রতিবেদ চেয়েছি। এর মধ্যে আমরা অনেকগুলো পেয়ে গেছি। এগুলো বিশ্লেষণ করে তদন্ত প্রতিবেদনটি প্রস্তুত করা হবে। 

উল্লেখ, গত ৪ জুন রাত সাড়ে ৯টার দিকে চট্টগ্রাম শহর থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরে সীতাকুণ্ডের কদমরসুল এলাকায় বিএম কনটেইনার ডিপোতে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয়। আগুন লাগার ঘণ্টাখানেকের মধ্যে ভয়ংকর এক বিস্ফোরণ ঘটে সেখানে। এতে আগুন ছড়িয়ে পড়ে ডিপোটির বিভিন্ন জায়গায়।

এ ঘটনার প্রথম দুই দিনে দমকলকর্মীসহ ৪১ জন মারা যান। পরবর্তীতে মৃত্যু হয় আরও ৮ জনের। দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন দুই শতাধিক মানুষ।

অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ছয়টি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। 

কেএম/এনএফ/জেএস