রাজধানীর পুরান ঢাকার চকবাজারের চুড়িহাট্টা মোড় এখন কর্মচঞ্চল। যান চলাচল আগের চেয়ে বেড়ে বেশ স্বাভাবিক চুড়িহাট্টা ও তার আশপাশের এলাকা। কিন্ত দুই বছর আগে এই দিনে সবাই যখন একুশ উদযাপনের প্রস্তুতিতে ব্যস্ত সেরকম একটা মুহূর্তে চুড়িহাট্টা যেন এক জ্বলন্ত আগ্নেয়গিরিতে রূপ নিয়েছিল। হয়ে উঠেছিল আগুনের কুণ্ড। পুড়ে অঙ্গার হয় ৭১ তাজা প্রাণ।

চুড়িহাট্টায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের দুই বছর পূর্তি হচ্ছে আজ (২০ ফেব্রুয়ারি)। ২০১৯ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি ওয়াহেদ ম্যানশন থেকে আশপাশে আগুন ছড়িয়ে ৭১ জনের প্রাণহানি ঘটেছিল। দুই বছর আগের ক্ষত এখনও অনেকের মনে ‘অক্ষত’। তবে ওইদিন বেঁচে যাওয়া ও স্বজন হারানো ব্যক্তিরা পোড়া স্মৃতি নিয়ে এখনও কাঁদেন। তারা ওই দিনের স্মৃতি যেন কিছুতেই ভুলতে পারেন না। 

চুড়িহাট্টা মোড়ে গেলেই চোখে পড়ে চারতলা ওয়াহেদ ম্যানশন। ওয়াহেদ ম্যানশনের দোতলা থেকে আগুন ছড়িয়ে পড়ছিল। পাশের ভবনগুলোয় থাকা রাসায়নিক দ্রব্য, প্লাস্টিক আর পারফিউমের দোকান থেকে গুদামেও আগুন ছড়িয়ে পড়ে। সেদিন আগুন লাগার ১৪ ঘণ্টা পর নিয়ন্ত্রণে এসেছিল। ঘটনাস্থলেই লাশ হন ৬৭ জন। পরে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৭১ জনে।

সেই ওয়াহেদ ম্যানশনের সামনে এখনো ঝুলছে অগ্নিকাণ্ড স্মরণ করে ব্যানার। ১৯ ফেব্রুয়ারি সরেজমিন গেলে স্থানীয় বাসিন্দা মো. আবদুল করিম বাবুল বলেন, সেই দিনের কথা মনে হলে এখনও গা শিউরে ওঠে। দৌড়েও মানুষ রক্ষা পায়নি। মানুষ পুড়ে কয়লার হয়েছিল। অনেক মরদেহ শনাক্তযোগ্য ছিল না।  

সেদিন ৭১ জনের মধ্যে মাসুদ রানা ও মাহবুবুর রহমান রাজুও মারা যান। দুই ছেলেকে হারিয়ে তাদের বাবা শাহবুল্লাহ এখন বেঁচে আছেন শুধু স্মৃতি নিয়ে। তার মতো সেদিন স্বজন হারানো ব্যক্তিরা শুধু স্মৃতি নিয়েই বেঁচে আছেন। 

পুরান ঢাকার শুধু চুড়িহাট্টা নয় নিমতলিসহ আশেপাশে ঝুঁকিপূর্ণ রসায়নিকের মজুদ এখনও আছে। বিকল্প জায়গা না পাওয়ায় রাসায়নিকের কারখানা স্থানান্তর করা হচ্ছে না। 

জানা গেছে, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) পুরান ঢাকার সব অবৈধ কারখানার তালিকা করছে। আগামী ছয় মাসের মধ্যে এসব অবৈধ রাসায়নিক কারখানা সরানোর পরিকল্পনা করা হয়েছে। 

তথ্যানুসারে, পুরান ঢাকায় ২৫ হাজার কেমিক্যাল গোডাউন আছে। এর মধ্যে মাত্র আড়াই হাজার বৈধ। ২০১০ সালে পুরান ঢাকার নিমতলীতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ১২৪ জনের প্রাণ হারিয়েছিলেন। রাসায়নিক গুদাম না সরানোয় চুড়িহাট্টায় দুই বছর আগে ৭১ প্রাণ ঝরে। 

ঢাকা-৭ আসনের সংসদ সদস্য হাজী মো. সেলিম শনিবার (২০ ফেব্রুয়ারি) বেলা ১১টায় ২৮ নম্বর ওয়ার্ডের চুড়িহাট্টা অগ্নিকাণ্ডে নিহতদের পরিবারের মধ্যে নগদ অর্থ প্রদান করবেন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি থাকবেন ডিএসসিসি মেয়র শেখ ফজলে নুর তাপস। স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও এর বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন। 

পিএসডি/ওএফ