চট্টগ্রামে পাহাড় ধসে প্রাণহানির ঘটনা প্রশাসনের নির্লিপ্ততা ও উদাসীনতার কারণে হয়েছে বলে দাবি করেছে পরিবেশবাদী সংগঠন পিপলস ভয়েস। 

শনিবার (১৮ জুন) গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে সংগঠনটির সভাপতি শরীফ চৌহান বলেন, প্রতিবছর বর্ষা আসার আগে স্থানীয় প্রশাসনের কিছু দাপ্তরিক কর্মকাণ্ডে দেখা যায় যেমন— সভা করা ও কমিটি গঠন। যথারীতি এ বছরও মাসখানেক আগে কয়েকটি সভা হয়েছে। একাধিক কমিটিও হয়েছে। কিন্তু বর্ষায় ভারি বর্ষণে পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসকারীদের সরিয়ে নিতে বা উচ্ছেদে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। শুধু তালিকা প্রণয়ন ও সুপারিশ গ্রহণে কমিটি কাজ সেরেছে। ফলে বর্ষার শুরুতেই ভারি বর্ষণে পাহাড় ধসে এই প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। এর দায় কোনোভাবে প্রশাসন এড়াতে পারে না।

বিবৃতিতে বলা হয়, ২০০৭ সালে পাহাড় ধ্বসের ঘটনায় শতাধিক মানুষের প্রাণহানির ঘটনা স্মরণে প্রতি বছরের মতো গত ১১ জুন পাহাড় রক্ষা দিবস ঘোষণার দাবিতে কর্মসূচি পালন করে পিপলস ভয়েস। সেদিন পিপলস ভয়েসের পক্ষ থেকে অবিলম্বে পাহাড় কাটা বন্ধে টাস্কফোর্স এবং দোষীদের দ্রুত শাস্তি নিশ্চিত করতে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠনের দাবি জানানো হয়েছিল।

সমাবেশ থেকে পাঁচটি দাবি উত্থাপন করা হয়। সেগুলো হলো— ১১ জুনকে জাতীয় পাহাড় রক্ষা দিবস ঘোষণা, ২০০৭ সালে গঠিত তদন্ত কমিটির সুপারিশ বাস্তবায়ন, টাস্কফোর্স গঠন করে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা, বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে দ্রুত বিচার নিশ্চিত করা এবং পরিবেশ সুরক্ষা করে সব উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালনা করা। সংগঠনের পক্ষ থেকে সভাপতি শরীফ চৌহান এসব দাবি উপস্থাপন করেন। এছাড়া চট্টগ্রামের পাহাড় ও নদী রক্ষায় একমাত্র প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কার্যকর ভূমিকা রাখবে বলে সমাবেশে বক্তারা দাবি করেন।

২০০৭ সালে চট্টগ্রাম মহানগর এবং ২০১৭ সালে রাঙামাটি ও চট্টগ্রামে পাহাড় ধসে নিহতদের স্মরণে এই নাগরিক সমাবেশের আয়োজন করা হয়। পরিবেশবাদী সংগঠন পিপলস ভয়েস ২০০৭ সালের ১১ জুন পাহাড় ধসে চট্টগ্রামে ১২৭ জন নিহত হওয়ার পর থেকে প্রতি বছর এই দিনটিকে ‘পাহাড় রক্ষা দিবস’ ঘোষণার দাবিতে কর্মসূচি পালন করে আসছে।

শুক্রবার (১৭ জুন) গভীর রাতে পাহাড় ধসের ঘটনায় প্রাণহানির প্রেক্ষিতে পিপলস ভয়েস অবিলম্বে— নগরীতে পাহাড়ের পাদদেশে থাকা সব বাসিন্দাকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া, পাহাড় কেটে নির্মিত অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ, অবৈধ স্থাপনায় সরকারি সেবা সংস্থার সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা, টাস্কফোর্স গঠন করে পাহাড় দখলকারীদের বিরুদ্ধে দ্রুত মামলা ও বিচার শুরু, বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন, প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তার জন্য দোষীদের চিহ্নিত করে জবাবদিহিতার আওতায় আনা এবং জনপ্রতিনিধিদের সম্পৃক্ত করে সমস্যা সমাধানে দ্রুত নির্দেশনা দেওয়ার দাবি জানাচ্ছে।

বিবৃতিতে বলা হয়, ২০০৭ সালের ১১ জুন পাহাড় ধসে চট্টগ্রামে ১২৭ জন নিহত হয়েছিল। তবু আজ পর্যন্ত পাহাড় কাটা থামেনি। প্রায় প্রতি বছর নগরীর বিভিন্ন স্থানে পাহাড় ধসে আরও কয়েকশ মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। পিপলস ভয়েস বলতে চায়, এসব ঘটনা কোনো দুর্ঘটনা নয়। পাহাড় ধসে প্রাণহানি বন্ধে অবিলম্বে সরকারের সর্বোচ্চ মহলের হস্তক্ষেপ কামনা করছে পিপলস ভয়েস।

শুক্রবার রাতে চট্টগ্রামের আকবরশাহ এলাকায় পৃথক পাহাড় ধসের ঘটনায় চার জন মারা গেছেন। আহত হয়েছেন তিন জন।

কেএম/এসএসএইচ