সীতাকুণ্ডের বিএম ডিপোতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় পণ্য পরিবহনে নিয়োজিত গাড়ি মালিকদের সাড়ে ৪ কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি করেছেন আন্তঃজেলা মালামাল পরিবহন সংস্থা ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান মালিক সমিতি এবং বাংলাদেশ ট্রাকচালক শ্রমিক ফেডারেশন, চট্টগ্রাম।

রোববার (১৯ জুন) চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তারা এ দাবি করেন।

লিখিত বক্তব্যে আন্তঃজেলা মালামাল পরিবহন সংস্থা ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী জাফর আহম্মদ বলেন, ডিপোতে অগ্নিকাণ্ড ও বিস্ফোরণের ঘটনা আমাদের ওপর যেন মরার উপর খরার ঘা হয়ে দেখা দিয়েছে। এই ঘটনায় প্রায় ১৬টি গাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এগুলোর মধ্যে সম্পূর্ণ পুড়ে গেছে আটটি গাড়ি। অবশিষ্ট গাড়িগুলোর কেবিন ও কনটেইনার পুড়ে গেছে। আনুমানিক এই ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ চার কোটি ৫০ লাখ টাকা।

তিনি বলেন, প্রায় সব মালিকরা ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নিয়ে পণ্য পরিবহন সেবা অব্যাহত রাখতে সক্ষম রাখেন। এই দুর্ঘটনায় যেসব মালিকের গাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তারা এক প্রকার দেউলিয়া হয়ে গেছেন। একদিকে তারা যেমন গাড়ির কিস্তি দিতে ব্যর্থ হচ্ছেন, অন্যদিকে নিজেদের প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের বেতন, অফিস চালনা এবং পরিবার পরিচালনার ব্যয় বহন করতে পারছেন না।

জাফর আহম্মদ বলেন, ডিপোর দুর্ঘটনায় আহত চালক-সহকারীরা বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এই শ্রমিকদের বিষয়ে ডিপো কর্তৃপক্ষ কোনো কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করেননি। তাছাড়া মৃত্যুবরণকারী শ্রমিকদের পরিবার কী অবস্থায় আছে, সে বিষয়েও কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় দায়িত্ব পালন করছেন না।

সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ ট্রাকচালক শ্রমিক ফেডারেশন চট্টগ্রামের সাধারণ সম্পাদক মো. আলাউদ্দিন ফারুক বলেন, বিএম ডিপোতে এই অঞ্চলের স্মরণকালের ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ও বিস্ফোরণে এক ধ্বংসযজ্ঞ সৃষ্টি হয়। ঘটনার সময় ডিপোতে থাকা পণ্য পরিবহনযান বিশেষত, কাভার্ডভ্যান, প্রাইমমুভার-ট্রেইলার ও ট্রাকগুলো মাটির সঙ্গে মিশে গেছে। এসব গাড়ির মালিকরা নিজ সম্পদ হারিয়ে এখন চরম হতাশা ও আর্থিক অনিশ্চয়তার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন।

তিনি বলেন, আমরা ক্ষতিগ্রস্ত গাড়িগুলোর উপযুক্ত ক্ষতিপূরণের জন্য মালিক পক্ষকে অবহিত করেছি। দায়িত্বশীল সরকারি কর্তৃপক্ষকে গাড়ির তালিকা দিয়েছি। এই অবস্থায় আমাদের দাবি, অগ্নিকাণ্ড ও বিস্ফোরণে ক্ষতিগ্রস্ত পণ্যপরিবহনের গাড়িগুলো ও নিহত পণ্যপরিবহন শ্রমিকদের পরিবারকে উপযুক্ত আর্থিক ক্ষতিপূরণ, আহত শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণসহ উন্নত চিকিৎসা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। তা নাহলে মালিক-শ্রমিক যৌথ আন্দোলনে যাওয়া ছাড়া আর কোনো পথ খোলা থাকবে না।

তিনি আরও বলেন, সব বেসরকারি কনটেইনার ডিপো পরিচালনায় ‘আইসিডি নীতিমালা-২০১৬, দেশীয় সংশ্লিষ্ট আইন ও আন্তর্জাতিক মানদা’ অনুযায়ী নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। এসব বিষয় যদি বিএম ডিপোতে প্রতিপালন করা হতো, তাহলে জীবন ও সম্পদের এই বিশাল ক্ষতি এড়ানো যেত।

সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক বলেন, নিয়মনীতির চরম উপেক্ষা এবং ডিপো মালিকপক্ষের ঘৃণ্য লোভের করুণ বলি হয়েছে অসংখ্য মানুষের জীবন। ধ্বংস হয়েছে শত শত কোটি টাকার সম্পদ। তাই মালিকপক্ষ, বন্দর কর্তৃপক্ষ সর্বোপরি সরকার এই দায় এড়াতে পারে না। ভবিষ্যতে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে দোষীদের চিহ্নিত করে তাদের দ্রুত আইনের আওতায় আনতে হবে।

কেএম/এমএইচএস