মানবসৃষ্ট বর্জ্যে খালগুলো ভরাট হওয়ায় পানি নামছে না
চট্টগ্রাম নগরের পানিবন্দি এলাকার পানি দ্রুত নামতে না পারার নেপথ্যে কী কারণ থাকতে পারে তা খতিয়ে দেখতে চট্টগ্রাম নগরের পশ্চিম বাকলিয়া শান্তিনগর, চন্দনপুরা, কল্পলোক আবাসিক এলাকা ও চাক্তাই তক্তার পোল এলাকা পরিদর্শন করেছেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী।
মঙ্গলবার (২১ জুন) তিনি এসব এলাকা পরিদর্শন করেন।
বিজ্ঞাপন
তক্তারপুল এলাকার অপসারণকৃত বাঁধ পরিদর্শনকালে মেয়র রেজাউল করিম বলেন, চকবাজার, ফুলতলা, বাকলিয়া, বহরদারহাট, খাজা রোড, পাঠানিয়াগোদা এলাকায় পানি না নামার মূল কারণ হচ্ছে মানবসৃষ্ট বর্জ্যের কারণে খালগুলো ভরাট হয়ে যাওয়া। এসব এলাকায় খালগুলো সিডিএর মেগা প্রকল্পের আওতাধীন হওয়া সত্ত্বেও জনদুর্ভোগ লাঘবে চটগ্রাম সিটি করপোরেশন খালগুলো থেকে আবর্জনা ও মাটি উত্তোলন করে পানি চলাচলের ব্যবস্থা নিয়েছিল। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, জনগণের অসচেতনতার কারণে বর্ষা শুরু হবার আগেই পরিষ্কার করা এ খালগুলোতে আবার বর্জ্য ফেলার কারণে নালা পূর্বের অবস্থায় ফিরে আসে। সে কারণে কয়েক দিনের ভারী বর্ষণে জলাবদ্ধতার ভোগান্তি প্রকট আকার ধারণ করে।
তিনি বলেন, সেবামূলক সংস্থাগুলোর নাগরিক সেবা নিশ্চিত করাই প্রধান কাজ। তবে নগরীতে যেসব সেবা সংস্থাগুলো আছে তাদেরকেও দায়িত্ব সম্পর্কে সচেষ্ট থাকতে হবে। চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ কর্তৃক জলাবদ্ধতার মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে গিয়ে খাল ও মাটি ভরাট করা হয়েছে। অনেকগুলো বাঁধ অপসারণ করা হলেও কিছু কিছু অংশে বাঁধ ও মাটির স্তূপ প্রকল্প বাস্তবায়নের স্বার্থে রাখতে হয়েছে। এটাই বাস্তবতা।
বিজ্ঞাপন
মেয়র বলেন, এখানে কোন প্রতিষ্ঠান কর্তৃক কাউকে দোষারোপ করার কোনো সুযোগ নেই। এ ধরনের কথাবার্তা সাধারণ জনগণকে বিভ্রান্ত করার শামিল। দুর্যোগ যে কারণেই হোক না কেন আমাদের উচিত যার যার অবস্থান থেকে সমন্বয়ের মাধ্যমে তা মোকাবিলা করা।
যারা নগরীর নালা, খাল ও রাস্তাসহ যত্রতত্র আবর্জনা ফেলে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করে তাদের উদ্দেশে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে মেয়র বলেন, সরকার ‘কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিধিমালা ২০২১’র মাধ্যমে এক্ষেত্রে দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে দুই বছরের জেল বা দুই লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডের বিধান রেখে কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা আইন প্রণয়ন করেছে। ভবিষ্যতে দায়ীদের বিরুদ্ধে এ আইন প্রয়োগ করতে আমরা বাধ্য হবো। এখানে যে যত শক্তিধর হোক না কেন তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষেত্রে ছাড় দেওয়া হবে না।
তিনি নগরবাসীর উদ্দেশে বলেন, মেয়রের দায়িত্ব নেয়ার পর বিনীতভাবে অনেক আবেদন-নিবেদন করেছি। এ বিনীত অনুরোধকে আমার দুর্বলতা ভাববেন না। যেখানে আমার পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে সেক্ষেত্রে কোনো অবস্থাতে কাউকেই ছাড় দেওয়ার অবকাশ নেই। আমি স্পষ্টভাবে বলতে চাই যাদের বাড়ির সামনে, দোকান বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সামনে, ড্রেনে, খালে ময়লা-আবর্জনার স্তূপ দৃশ্যমান হবে তাদের বিরুদ্ধে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা আইন প্রয়োগ করে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মেয়র বর্তমানে জলাবদ্ধতাকে প্রধান সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করে সমন্বিত উদ্যোগে সমস্যার সমাধানের জন্য সবার সহযোগিতা কামনা করেন।
তিনি পানিবন্দি মানুষের প্রতি সহমর্মিতা প্রকাশ করে বলেন, নগরে যারা পানিবন্দি অবস্থায় আছে ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে আশ্রয়কেন্দ্র, রান্না করা ও শুকনো খাবার সরবরাহ কার্যক্রম শুরু করেছে।
এছাড়া নগরের টাইগারপাসে অস্থায়ী কার্যালয়ে কনফারেন্স রুমে কন্ট্রোলরুম স্থাপন করা হয়েছে। তিনি পানিবন্দিদের দুর্ভোগ লাঘবে কন্ট্রোল রুমে দায়িত্বরত চসিকের কর্মীদের সঙ্গে যেকোনো সাহায্যের জন্য ০১৭১৭-১১৭৯১৩ ও ০১৮১৮-৯০৬০৩৮ নম্বরে যোগাযোগ করার আহ্বান জানান।
কেএম/আইএসএইচ