দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে জেন্ডার গ্যাপ ইনডেক্স অনুসারে বাংলাদেশ ভালো অবস্থানে আছে। এই অবস্থান কতদিন থাকবে তা শঙ্কার বিষয়। অর্থনীতিতে নারীর অংশগ্রহণ বৃদ্ধি পেলেও রাজনীতিতে নারীর সরাসরি অংশগ্রহণ এখনও সক্রিয় নয়। স্থানীয় সরকার পর্যায়ে নারীর কাজের ক্ষেত্রে বাধা আছে। জেন্ডার বাজেটে নারীকে মূলধারায় এগিয়ে আনতে বিশেষ উদ্যোগ বাজেটে নেই। 

মঙ্গলবার বিকেলে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের উদ্যোগে ‘বাজেট  ২০২২-২০২৩ : জেন্ডার সংবেদনশীলতা পর্যালোচনা’ বিষয়ক আলোচনা সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন। রাজধানীর সেগুনবাগিচায় মহিলা পরিষদের কার্যালয়ে এই সভা অনুষ্ঠিত হয়। 

বক্তারা আরও বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে কোভিড পরিস্থিতি স্তিমিত হলেও কোভিডের অভিঘাত নারীর শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কর্মসংস্থানসহ সকল ক্ষেত্রের অর্জনে বিরুপ প্রতিক্রিয়া তৈরি করেছে। তাই শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কর্মসংস্থান, নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে সুনির্দিষ্ট বাজেট বরাদ্দ দিতে হবে।

সভায় সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম। শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু। সম্মানিত প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অর্থমন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান ও সংসদ সদস্য আবুল হাসান মাহমুদ আলী। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের চেয়ারম্যান ড. এম.এম আকাশ; কেয়ার বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক (উইমেন অ্যান্ড গার্লস এমপাওয়ারমেন্ট প্রোগ্রাম) রওনক জাহান। 

বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের পক্ষে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক এবং বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য শরমিন্দ নিলোর্মী।

মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনে অধ্যাপক শরমিন্দ নিলোর্মী বলেন, এবারের বাজেটের ইতিবাচক দিক হলো রাজস্ব খাতে প্রবৃদ্ধির হার বৃদ্ধি পেয়েছে, প্রবাসীর আয়ের হার বৃদ্ধি পেয়েছে এবং ব্যক্তিখাতে ঋণপ্রবাহ বেড়েছে। তবে এর সাথে অন্যান্য সূচক বাড়ছে কি না তা দেখতে হবে।

তিনি বলেন, মুদ্রাস্ফীতি একটি বড় চ্যালেঞ্জ। শিক্ষায় ঝড়ে পড়া কমাতে এবারের জেন্ডার বাজেটে পর্যাপ্ত বরাদ্দ নেই, পরিকল্পনা নেই। পরিস্থিতি পরিবর্তনে আমদানি ও রপ্তানির মধ্যে যে গ্যাপ আছে তা কমাতে হবে। বৈদেশিক মুদ্রার পর্যাপ্ত রিজার্ভ রাখতে হবে। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম অনুসারে বাংলাদেশের অবস্থান ৬৫তম। এই অগ্রগতির মধ্যে প্রত্যেকে নিজ নিজ জায়গা থেকে উন্নত অবস্থানে যেতে পারছে কি না তা দেখতে হবে। 

তিনি আরও বলেন আমাদের নিজের টাকায় ঋণ পরিশোধ করতে হয়। কাজেই মানবসম্পদের পূর্ণ ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে এবং দাতা সংস্থার প্রতি নির্ভরতা কমাতে হবে, গার্মেন্টসের রপ্তানি আয় বৃদ্ধি করতে হবে। তবে রপ্তানির অনুপাতে কর্মসংস্থান বাড়ছে না। তিন দশকে গার্মেন্টস খাত থেকে আয় হলেও আয়ের সুষম বণ্টন নিশ্চিত হয়নি। অন্যদিকে প্রবাসী আয় বাড়লেও প্রবাসী অভিবাসীরা সার্বিকভাবে কেমন আছেন তা দেখতে হবে। শুল্ক কাঠামোর মধ্যে থাকা বৈষম্য দূর করতে হবে।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে অর্থমন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান ও সংসদ সদস্য আবুল হাসান মাহমুদ আলী বলেন, নারীর অধিকার অর্জনে আন্দোলন চালিয়ে যেতে হবে। উন্নয়ন কার হচ্ছে এবং উন্নয়নে কোনো লিকেজ আছে কিনা তা দেখতে হবে। বাজেট বাস্তবায়নে নানা চ্যালেঞ্জ রয়েছে। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সকলকে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের চেয়ারম্যান ড. এম.এম আকাশ বলেন, প্রতিটি মন্ত্রণালয়ের প্রকল্প আছে। নারীদের জন্য বরাদ্দ কতটা তা বের করার কিছু উপায় আছে। উদাহরণস্বরূপ- নারীর জন্য তৈরি করা অবকাঠামো যেমন হাসপাতাল, স্কুল থেকে তারা কতজন সার্ভিস পাচ্ছে তা মনিটরিং করা এবং তার জন্য বরাদ্দ কত দেখা যেতে পারে। দ্বিতীয়ত, জেন্ডার গ্যাপে বাংলাদেশের অবস্থান ভালো। রাজনীতিতে নারীরা এগিয়েছে বলা হচ্ছে। কিন্তু কতটা এগিয়েছে তা দেখতে হবে।

কেয়ার বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক (উইমেন অ্যান্ড গার্লস এমপাওয়ারমেন্ট প্রোগ্রাম) রওনক জাহান বলেন, নারী ও পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জন্য বাজেটে বিশেষ উদ্যোগ নেই। সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বরাদ্দ কমেছে এবং নারীবান্ধব আইনের প্রকৃত বাস্তবায়নের জন্য জন্য যে সম্পদ বরাদ্দ দরকার তা বাজেটে নেই। নারী ও কন্যা শিশুর প্রায়োরিটি কি তা বিবেচনায় নিতে হবে, আইনের প্রভিশন ও বাস্তবায়নের জন্য পর্যাপ্ত বরাদ্দ থাকতে হবে।

এএজে/এনএফ