বাংলাদেশ ট্যাক্স ল’ইয়াস অ্যাসোসিয়েশন ও ঢাকা ট্যাক্সেসেস বার অ্যাসোসিয়েশনের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত বাজেট পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে করমুক্ত আয়সীমা ৪ লাখ টাকা করার প্রস্তাব করেন বক্তারা। এছাড়া তারা বাজেটে কিছু ধারা উপধারা সংশোধনের প্রস্তাব করেন।

বুধবার (২২ জুন) বেলা ১১টার দিকে জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। লিখিত বক্তব্যে ঢাকা ট্যাক্সেস বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. আবু আমজাদ বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে নিম্নোক্ত ধারা-উপধারাগুলো সংশোধনের করার অনুরোধ করছি। 

>> করমুক্ত আয়ের সীমা বৃদ্ধি করুন। করোনা পরবর্তী ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের ফলে বিশ্বব্যাপী নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য লাগামহীনভাবে বেড়ে চলছে। এর ফলে নিম্নমধ্য ও মধ্যম আয়ের ব্যক্তিরা আর্থিক সংকটে আছেন। তাই মধ্যবিত্তের কথা বিবেচনা করে করমুক্ত আয়ের সীমা ৩ লাখ টাকা থেকে বৃদ্ধি করে ৪ লাখ টাকা করুন। এর ফলে সরকারের যে রাজস্ব হানি হবে, তা উচ্চবিত্তদের কাছ থেকে আদায় করে পুষিয়ে নেওয়ার জন্য আয়কর হারে আরেকটি স্তর সৃষ্টি করে দুই বছর আগের মতো ২৫ লাখ টাকার বেশি আয়ের জন্য ৩০ শতাংশ আয়কর আরোপ করা যেতে পারে।

>> অর্থ বিল-২০২২ এর মাধ্যমে আয়কর অধ্যাদেশের ১৪৩ ধারায় নতুন একটি ক্লজ সংযোজন প্রস্তাব করা হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে উপ-কর কমিশনার ইচ্ছা করলে বকেয়া কর আদায়ের জন্য করদাতার গ্যাস, বিদ্যুৎ অথবা পানির লাইনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার আদেশ দিতে পারবে। আমরা এর বিলুপ্তি চাই। এই ধারা সংযোজন হলে করদাতারা আরও বেশি হয়রানির শিকার হবেন।

>> অর্থ বিল ২০২২ দ্বারা এই ধারাটি উপধারা (৩) প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। উক্ত ধারার (৩) উপধারায় বলা হয়েছে- কোন ব্যক্তি, কোন আয়কর কর্মকর্তাকে এই ব্যাপারে সহায়তা না করিলে অথবা বাধা প্রদান করিলে ৫০ লাখ টাকা জরিমানা করিতে পারিবে আয়কর কর্তৃপক্ষ। আমরা এই উপধারাটিতে উল্লেখিত জরিমানার পরিমাণ সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা করার প্রস্তাব করছি।

>> ৮২ বিবিধ ধারায় রিটার্ন দাখিল করলে রিটার্নটি গৃহীত হয়েছে বলে ধরে নেওয়া হয়। পরবর্তীতে অডিট করে যদি কোনো সুনির্দিষ্ট ত্রুটি পাওয়া যায় তবে করদাতাকে নোটিশ দিয়ে সেটি সংশোধনে সুযোগ দেওয়ার বিধান আছে। কিন্তু বাস্তবতা হলো উপ-কর কমিশনারা সুনির্দিষ্ট ত্রুটির কথা না বলে, অধিকাংশ ক্ষেত্রে আনুমানিকভাবে ত্রুটির কথা বলেন। ফলে করদাতার পক্ষে ত্রুটি সংশোধন করে রিটার্ন দাখিল সম্ভব হয় না। ফলে রিটার্নটি সাধারণ রিটার্ন হিসেবে গণ্য করে আয় নির্ণয়ের পদক্ষেপ নেওয়া হয়। এ ধারায় নোটিশের ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্টভাবে ত্রুটি উল্লেখ করার বিধানের প্রস্তাব করছি।

>> ধারা ১৭৪ ধারা সংশোধনের প্রস্তাব করছি। এ ক্ষেত্রে প্রতিনিধিত্ব করার ক্ষেত্রে নতুন বিধান আরোপ করুন। করদাতা নিজে বা তার প্রতিনিধি আয়কর কর্তৃপক্ষের নিকট হাজির হতে পারেন শুনানির জন্য। এ ক্ষেত্রে আয়কর আইনজীবী ছাড়াও করদাতার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন এমন কর্মকর্তারা হাজির হয়েও প্রতিনিধিত্ব করতে পারবেন। আমরা আয়কর আইনজীবীরা যখন প্রতিনিধিত্ব করি তখন কোর্ট ফিসহ উকালতনামা দাখিল করি। কিন্তু ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে অথবা কোম্পানি করদাতাদের ক্ষেত্রে কর্মকর্তারা যখন প্রতিনিধিত্ব করেন তখন কোর্ট ফিসহ কোনো ঘোষণা পত্র দাখিল করেন না। এ ক্ষেত্রে ২০০ টাকা স্ট্যাম্পে ঘোষণাপত্র দাখিলের বিধানের প্রস্তাব করছি।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, বাংলাদেশ ট্যাক্স ল’ইয়াস অ্যাসোসিয়েশনের আহ্বায়ক সোহরাব উদ্দিন, সদস্য সচিব খোরশেদ আলম ও ঢাকা ট্যাক্সেস বারের সাধারণ সম্পাদক মো. জাকারিয়া খান স্বপন এবং আওয়ামী কর আইনজীবী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল মোস্তফা ও ঢাকা ট্যাক্সেস বারের সাবেক সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ও অন্যান্য আইনজীবীরা।

ওএফ