ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার

কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরার টেলিভিশন নেটওয়ার্কে ‘অল দ্য প্রাইম মিনিস্টার্স মেন’ শিরোনামে প্রচারিত কন্টেন্টটি (আধেয়) প্রকাশের আগে থেকেই জানতেন বলে জানিয়েছেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার। তিনি জানান, আদালতের যে নির্দেশনা আছে সে অনুসারে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক কর্তৃপক্ষ কার্যকরী ব্যবস্থা নেবে।

শনিবার (২০ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে মোবাইলের মাধ্যমে অর্ধেক খরচে বাংলা এসএমএস চালুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা জানান। বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) কার্যালয়ে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এ সময় তিনি বিটিআরসি চেয়ারম্যান শ্যাম সুন্দর সিকদারকে বাংলায় এসএমএস পাঠিয়ে সেবাটির উদ্বোধন করেন।

মোস্তফা জব্বার বলেন, ‘বাংলাদেশ নিয়ে আল-জাজিরার তথ্যচিত্রটি প্রচারের বিষয়টি আগেই জেনেছি। আমাদের প্রস্তুতিও মোটামুটিভাবে ছিল। রাষ্ট্র ও সরকারের সর্বোচ্চ পর্যন্ত আমরা যোগাযোগ করেছি।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের তথ্য প্রযুক্তি উপদেষ্টা, তথ্যমন্ত্রী, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, কোনো গণমাধ্যম যে-ই হোক না কেন- তাকে বন্ধ করে দেওয়াটা কোনো সমাধান নয়। আল-জাজিরার তথ্যচিত্রটি ডিজিটাল মাধ্যমে যেন না আসে- সেটা বন্ধ করে দেওয়ার সক্ষমতা আমাদের ছিল।’

মোস্তফা জব্বার বলেন, ‘কিন্তু নীতিগতভাবে মূল ধারার গণমাধ্যমের ওপর এ ধরনের ব্যবস্থা প্রয়োগ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। সে কারণে আমরা মনেই করেছি যে, আল-জাজিরা প্রকাশ করছে অথবা অন্যান্য গণমাধ্যমে আসবে। সেগুলোর ভিত্তিতে পরবর্তী সময়ে আমাদের যে করণীয় থাকবে সেই করণীয় কাজটা করব।’

তিনি বলেন, ‘এই করণীয় কাজটা করার ক্ষেত্রে বিটিআরসি কেবলমাত্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সঙ্গে যোগাযোগ করেনি, তাদের সঙ্গে বৈঠক করা হয়েছে। ব্যক্তি থেকে ব্যক্তি কথা বলা হয়েছে। আমি নিজেও কথা বলেছি। কথা বলার পর যে অবস্থা দাঁড়িয়েছে যে, আমরা আল জাজিরা যেমন বন্ধ করিনি একইভাবে সোশ্যাল মিডিয়াও বন্ধ করিনি।’

বিটিআরসির সক্ষমতার বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের সক্ষমতা আছে যে, এ ধরনের ওয়েবসাইট বন্ধ করে দিতে পারি (বাংলাদেশে প্রকাশ হবে না)। তবে পার্টিকুলার (নির্দিষ্ট) কোনো কনটেন্ট বা টুলস সরিয়ে ফেলার কোনো ব্যবস্থা সারা পৃথিবীর কারও নেই, আমাদেরও নেই। যদি ওই কনটেন্ট বন্ধ করতে হয় তাহলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকেই বন্ধ করতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘যদি ইউটিউব থেকে সরাতে চাই, তাহলে আমাদের ইউটিউব বন্ধ করে দিতে হবে। ফেসবুক থেকে সরিয়ে ফেলতে হলে ফেসবুক বন্ধ করে দিতে হবে। এক্ষেত্রে আমরা সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানে যোগাযোগ করতে থাকি।’

‘বিটিআরসি একটি নির্দিষ্ট সেল আছে যেখানে ২৪ ঘণ্টা রিপোর্ট করা হয়’ উল্লেখ করে মোস্তাফা জব্বার বলেন, ‘নিয়মিত এ কাজটা করা হয়েছে। ফেসবুক থেকে আমাদের বলা হয়েছে, যে এই কনটেন্ট সরিয়ে ফেলতে হলে তার জন্য আইনি নির্দেশনা দরকার। এরই মাঝে আবার একজন রিট করেছেন। এর ফলে আদালত একটি নির্দেশ দিয়েছেন। আমরা সেই নির্দেশনা সোশ্যাল মিডিয়ায় পৌঁছে দিয়েছি।’

ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী বলেন, ‘আজকেও কথা বলেছি ফেসবুক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে। তারা আমাদের নিশ্চিত করেছে, আদালতের যে নির্দেশনা আছে সে অনুসারে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমাদের পক্ষে কিন্তু এর বাইরে কোনো কাজ করার সক্ষমতা নেই। শুধু আমাদরে নয়, সারা বিশ্বের কারও নেই।’

তিনি বলেন, ‘আমরা বিটিআরসি অথবা ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ যে কাজগুলো করি, সেগুলোর মধ্যে আইনগত ভিত্তি হলো ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন। এ আইনের বলে যেসব ক্ষতিকর উপাত্ত ইন্টারনেট, ডিজিটাল মাধ্যমে থাকে সেগুলো সম্পর্কে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’

উল্লেখ্য, গত ১ ফেব্রুয়ারি ‘অল দ্য প্রাইম মিনিস্টার্স মেন’ শিরোনামে আল-জাজিরার টেলিভিশন নেটওয়ার্কে একটি তথ্যচিত্র প্রকাশিত হয়। তবে সরকারের পক্ষ থেকে এটিকে ‘ভুল’ আখ্যা দেওয়া হয়েছে।

বুধবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে আল-জাজিরার কন্টেন্টটি ইউটিউব, টুইটার, ইনস্টাগ্রামসহ সব অনলাইন প্লাটফর্ম থেকে সরানোর বিষয়ে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। বিটিআরসিকে অবিলম্বে এই নির্দেশ বাস্তবায়ন করতে বলা হয়েছে। আদালতের নির্দেশক্রমে কাতারভিত্তিক কন্টেন্টটি সরিয়ে নিতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক ও ইউটিউবকে অনুরোধ করেছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)।

একে/এফআর