ঢাকা ও এর আশেপাশের বাইকারদের কাছে রাইডের জন্য এখন পছন্দের শীর্ষে থাকা সড়কটি হচ্ছে 'ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ে'। ছুটির দিনের আগের সন্ধ্যায় বা রাতে সড়কটিতে বাইকারদের আনাগোনা থাকে সবচেয়ে বেশি। এছাড়া অন্যান্য দিনগুলোতেও মাওয়া ঘাটে পদ্মা নদীর তাজা ইলিশ দিয়ে দুপুর বা রাতের খাবারের উদ্দেশ্যে কিংবা একটি লং রাইডের জন্য পথটি বেছে নেন অনেক বাইকার।

বর্তমানে এ রাস্তায় দুটি সেতুর জন্য মোট ২০ টাকা টোল ফি এবং বাইকের জ্বালানি খরচ দিয়ে মাওয়া ঘাটে পৌঁছে যাচ্ছেন বাইকাররা।

তবে, ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা-ঢাকা এক্সপ্রেসওয়ে রাইডে প্রতিটি বাইকের চালককে গুনতে হবে প্রায় ৭০০ টাকা। এর মধ্যে ৬.১৫ কিলোমিটারের পদ্মা সেতুর এপার-ওপার পাড়ি দিতে টোল দিতে হবে ২০০ টাকা। ৭০০ টাকা খরচ নিয়ে তেমন মাথাব্যথা নেই বাইকারদের

২৫ জুন উদ্বোধনের পর ২৬ জুন থেকে 'পদ্মা সেতু' দিয়ে যান চলাচল শুরু হবে। তখন থেকে পদ্মা সেতু হয়ে ৫৫ কিলোমিটারের 'ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ে' দিয়ে চলাচল করতে পারবেন বাইকাররাও।  সেতু থেকে পদ্মা নদী দেখা এবং এক্সপ্রেসওয়েতে বাইক রাইড হাতছানি দিয়ে নিয়ে যাবে তাদের।

তবে, ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা-ঢাকা এক্সপ্রেসওয়ে রাইডে প্রতিটি বাইকের চালককে গুনতে হবে প্রায় ৭০০ টাকা। এর মধ্যে ৬.১৫ কিলোমিটারের পদ্মা সেতুর এপার-ওপার পাড়ি দিতে টোল দিতে হবে ২০০ টাকা। ৭০০ টাকা খরচ নিয়ে তেমন মাথাব্যথা নেই বাইকারদের। তাদের ভাষ্য, 'ফেরিঘাটের ভোগান্তি ও ফেরিতে পারাপারের সময়ে চেয়ে এ টাকা সামান্য।'

আরও দেখুন : মহাসড়কে মোটরসাইকেল চলাচল নিষিদ্ধের সুপারিশ বিআরটিএর

হিসাব করে দেখা গেছে, রাজধানীর পলাশী মোড় থেকে মেয়র হানিফ ফ্লাইওভার, পোস্তগোলা সেতু, ধলেশ্বরী সেতু, মাওয়া, পদ্মা সেতু, নাওডোবা হয়ে ফরিদপুরের ভাঙ্গা মোড় পর্যন্ত সড়ক পথের দূরত্ব প্রায় ৮০ কিলোমিটার। একই পথে ঢাকায় ফিরতে প্রতিটি গাড়িকে পাড়ি দিতে হবে আবারও ৮০ কিলোমিটার। ফলে ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা-ঢাকা পথের দূরত্ব দাঁড়ায় ১৬০ কিলোমিটার।

প্রতিটি বাইকে ভাঙ্গা পর্যন্ত যেতে মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারের টোল ১০ টাকা, পোস্তগোলা সেতুর টোল ১০ টাকা, ধলেশ্বরী সেতুর টোল ১০ টাকা এবং পদ্মা সেতুর টোল ১০০ টাকা ধরে মোট টোল খরচ হবে ১৩০ টাকা। ঢাক-ভাঙ্গা-ঢাকা রুটে জ্বালানি ও টোল খরচ মিলে ১০০ সিসির বাইকের মোট খরচ দাঁড়ায় ৬১৬ টাকা এবং ১৫০ সিসির বাইকে মোট খরচ দাঁড়ায় ৬৬৭ টাকা

পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের ট্রান্সপোর্ট ওয়ার্কশপ শাখার সিভিল ভেহিক্যাল মেকানিক মোহা. আমির হামজা ঢাকা পোস্টকে জানান, একটি ১০০ সিসি'র মোটরসাইকেল এক লিটার জ্বালানিতে ৪০-৪৫ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে পারে। ১৫০ সিসি'র মোটরসাইকেল লিটারে ৩৫-৪০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে পারে। সেই হিসাবে ১৬০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে ১০০ সিসি'র বাইকে অন্তত চার লিটার এবং ১৫০ সিসি'র বাইকে অন্তত সাড়ে ৪ লিটার জ্বালানি পোড়াতে হবে। এজন্য মোটরসাইকেলের জ্বালানি অকটেন ৮৯ টাকা লিটার হিসাবে ১০০ সিসিতে খরচ হবে ৩৫৬ টাকা এবং ১৫০ সিসিতে খরচ হবে প্রায় ৪০৭ টাকা।

সেই হিসাবে, প্রতিটি বাইকে ভাঙ্গা পর্যন্ত যেতে মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারের টোল ১০ টাকা, পোস্তগোলা সেতুর টোল ১০ টাকা, ধলেশ্বরী সেতুর টোল ১০ টাকা এবং পদ্মা সেতুর টোল ১০০ টাকা ধরে মোট টোল খরচ হবে ১৩০ টাকা। ঢাক-ভাঙ্গা-ঢাকা রুটে জ্বালানি ও টোল খরচ মিলে ১০০ সিসির বাইকের মোট খরচ দাঁড়ায় ৬১৬ টাকা এবং ১৫০ সিসির বাইকে মোট খরচ দাঁড়ায় ৬৬৭ টাকা।

এ নিয়ে কয়েকজন বাইকারের সঙ্গে কথা বলে ঢাকা পোস্ট। তারা জানান, ফেরিঘাটের ভোগান্তি ও ফেরি পারাপারের সময় বিবেচনায় এ টাকা তেমন কোনো বিষয় নয়। এক রাইডে একই সঙ্গে পদ্মার ইলিশ খাওয়া, পদ্মা সেতু ও দেশের দৃষ্টিনন্দন ভাঙ্গা মোড় দেখা যাবে।

পুরান ঢাকার বাইকার সিফাত উদ্দিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, আনন্দ ভ্রমণের কাছে অর্থের হিসাব নিতান্তই নিরর্থক। নানা সময়ে দেশের বিভিন্ন জায়গায় ভ্রমণ করেছি। তবে, আমার দেখা দেশের সুন্দর একটি সড়ক হচ্ছে ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ে। পদ্মা সেতু চালু হতে যাচ্ছে। ফলে রাস্তার দৈর্ঘ্য আরও বাড়বে। পদ্মা সেতু দেখতে বাইকাররা এ পথে আরও বেশি আসবেন।

খরচের বিষয়ে তিনি বলেন, ঢাকায় একটা ভালো মানের রেস্টুরেন্টে দুজনের খেতে লাগে পাঁচশ থেকে এক হাজার টাকা। সেই হিসাবে পদ্মা সেতু দেখতে ৭০০ টাকা খরচ তেমন কিছু না। ৭০০ টাকায় এক্সপ্রেসওয়েতে বাইক চালানো এবং পদ্মা সেতু দেখা ঠিকই আছে।

মানিকগঞ্জের বাইকার সুজাতা ঢাকা পোস্টকে বলেন, ফেরিতে উঠতে সময় লাগে। যেতেও সময় লাগে। সবমিলিয়ে প্রায় দেড় থেকে দুই ঘণ্টা। সেই হিসাবে ১০-১৫ মিনিটে পদ্মা সেতু পার হতে ১০০ টাকা টোল ফি কিছুই না। সেতু পারাপারে মোট ২০০ টাকা টোল ফি, খুব বেশি বলব না আমি।

তিনি বলেন, পদ্মা সেতু ঘুরে আসতে যে ৭০০ টাকার হিসাব, এ টাকা ভ্রমণপিপাসু বাইকারদের কাছে মোটেও বেশি হবে না। বরং ঠিকই আছে।

এমএইচএন/এআর/জেএস/ওএফ