ইট-পাথর আর কংক্রিটের এই শহরে বুক ভরে শ্বাস নেওয়ার জায়গা খুব অল্প। এই ব্যস্ত শহরে নাগরিক জীবনে কিছুটা স্বস্তি পেতে সব সময় উপলক্ষ খুঁজে নগরবাসী। এজন্য সাপ্তাহিক ছুটির দিনকে তারা বেছে নেন। শুক্রবার (২৪ জুন) সাপ্তাহিক ছুটির দিনে পরিবার, আপনজন, বন্ধু-বান্ধবসহ অনেক নগরবাসী ভিড় জমিয়েছেন বিনোদন কেন্দ্র হাতিরঝিলে। তবে অন্য দিনের চেয়ে হাতিরঝিলে আজ উচ্ছ্বাসটা একটু বেশি। কারণ পুরো হাতিরঝিল এলাকা আজ সেজেছে ব্যানার, ফেস্টুনে।

সেসব ব্যানার, ফেস্টুনে শোভা পাচ্ছে স্বপ্নের পদ্মা সেতুর উদ্বোধনের বার্তা। এসব বার্তা যুক্ত ব্যানার ফেস্টুনের সামনে দাঁড়িয়ে ছবি তুলছেন হাতিরঝিলে আগতরা। কেউ কেউ আবার সেলফি নিয়ে সঙ্গে সঙ্গে পোস্ট করছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। ক্যাপশনে জানিয়ে দিচ্ছেন, ‘অপেক্ষার পালা শেষ, আর মাত্র কয়েক ঘণ্টা’। আমাদের স্বপ্নের পদ্মা সেতু, পদ্মা সেতুর উদ্বোধন আনন্দ হাতিরঝিলেও.... এমন নানা ক্যাপশনে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করার পাশাপাশি নিজেদের আলোচনাজুড়েও ছিল পদ্মা সেতুর উদ্বোধন নিয়ে নানান আবেগ আর উচ্ছ্বাসের গল্প।

পদ্মা সেতু নিয়ে ছিল প্রতিবন্ধকতা, ছিল সীমাবদ্ধতা। ষড়যন্ত্রেরও কমতি ছিল না। কিন্তু সব বাধা জয় করে স্বপ্নের পদ্মা সেতু এখন দাঁড়িয়ে। আর মাত্র কয়েক ঘণ্টার অপেক্ষা। তারপর উদ্বোধন হবে স্বপ্নের সেতু। তাই পদ্মা সেতু নিয়ে সাধারণ মানুষের আবেগ, ভালো লাগা আর উচ্ছ্বাসটা একটু বেশিই। সেই উচ্ছ্বাসই দেখা গেল নানা ব্যানার, ফেস্টুনে সজ্জিত হাতিরঝিল এলাকায়। এ দিন বিনোদন প্রেমী মানুষের ব্যাপক উপস্থিতিতে পরিপূর্ণ ছিল পুরো হাতিরঝিল এলাকা।

শুক্রবার বিকেলে স্ত্রী, সন্তান আর ছোট ভাইকে নিয়ে হাতিরঝিলে এসেছেন বেসরকারি চাকরিজীবী তৌহিদুল ইসলাম। চাকরির সুবাদে তিনি বনশ্রী এলাকাতে থাকেন। তার গ্রামের বাড়ি শরীয়তপুরের জাজিরা থানার নাওডোবা এলাকায়।

প্রধানমন্ত্রীর ছবি সম্বলিত হাতিরঝিলে শোভা পাওয়া একটি ব্যানারের সামনে মেয়ে সুমাইয়াকে দাঁড় করিয়ে ছবি তুলছিলেন তিনি। সেই ব্যানারে পদ্মা সেতুর ছবি সংযুক্ত করে লেখা আছে ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সততা, আত্মবিশ্বাস ও সাহসিকতার অন্যান্য বিজয়গাঁথা পদ্মা সেতুর শুভ উদ্বোধন ২৫ জুন’। পাশে থাকা আরেক ফেস্টুনে লেখা ‘আমরাই পারি, আমরাই পারব, কারণ আমাদের আছেন একজন স্বপচারী নেতা, জাতির পিতার যোগ্য কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা’। পাশেই শোভা পাচ্ছে পদ্মা সেতুর ছবি।

আলাপকালে তৌহিদুল ইসলাম বলেন, আমাদের পদ্মা সেতু। স্বপ্নের পদ্মা সেতু উদ্বোধনের অপেক্ষা আর মাত্র কয়েক ঘণ্টা। সেই উপলক্ষে হাতিরঝিলও সেজেছে আজ। তাই সন্তানদের নিয়ে পদ্মা সেতুর ছবি সম্বলিত ব্যানার ফেস্টুনের পাশে দাঁড়িয়ে ছবি তুললাম। আমাদের যাদের পদ্মার ওপারে বাড়ি তারা জানি এই সেতু আমাদের জন্য কতটা আশীর্বাদের। কত মানুষের সারা জীবনের কষ্ট লাঘব হবে এই সেতুর মাধ্যমে। তাই এই সেতুর উদ্বোধন আমাদের কাছে চির স্মরণীয় হয়ে থাকবে।

চার বন্ধুসহ হাতিরঝিল এলাকায় ঘুরতে এসেছেন মঞ্জুরুল ইসলাম। হাতিরঝিলে যখন এমন সাজ, তখন তাদের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতেও পদ্মা সেতুর উদ্বোধন। আলাপকালে মঞ্জুরুল ইসলাম বলেন, হাতিরঝিলে এসেও বোঝা যাচ্ছে পদ্মা সেতুর উদ্বোধন আর একদিন পরেই। চারদিক ব্যানার ফেস্টুনে ছেয়ে গেছে। পদ্মা সেতু থেকে এত দূরে এই হাতিরঝিলেও উদ্বোধন নিয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করছে সাধারণ মানুষ। আসলে পদ্মা সেতু আমাদের অহংকার, গর্বের একটা স্ট্রাকচার। এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে অসংখ্য মানুষের আবেগ আর ভালো লাগা। সেই ফ্লেবার আজ পাওয়া যাচ্ছে হাতিরঝিলে বসেও।

এএসএস/এসএসএইচ