ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে ক্রেতাদের নজর কাড়তে ‘ঈদ পোশাকের’ পসরা সাজিয়ে বসেছেন রাজধানীর মৌচাক মার্কেটের দোকানিরা। কিন্তু ঈদের আর ১২-১৩ দিন বাকি থাকলেও অনেকটা ক্রেতাশূন্য মার্কেট। ফলে অনেকটা অলস সময় কাটছে তাদের। 
 
ব্যবসায়ীরা বলছেন, সাধারণত রোজার ঈদের তুলনায় কোরবানির ঈদে ব্যবসা কম হয়ে থাকে। কারণ, এই ঈদে পোশাক কেনার চাইতে কোরবানির পশু কেনায় বেশি অর্থ ব্যয় করে মানুষ। তারপরও মোটামুটি ব্যবসা হয়। কিন্তু এবার সারা দেশে বন্যার কারণে মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থা খুব বেশি ভালো নেই। যার প্রভাব পড়ছে মার্কেটে। এছাড়া যারা জাকাতের কাপড় কিনতেন তারা সেই অর্থ এবার বন্যার্তদের সাহায্যে দিয়েছেন। তাই এবার ঈদে ব্যবসা নেই বললেই চলে। 

তবে, ঈদের যেহেতু আরও কিছুদিন সময় আছে, তাই আগামী শুক্রবার এই মার্কেটে ক্রেতা-দর্শনার্থীদের ভিড় বাড়তে পারে বলে আশা তাদের।

মার্কেটগুলোতে ক্রেতা সমাগমের জন্য অনলাইন ব্যবসাকেও দায়ী করছেন ব্যবসায়ীরা। তাদের ভাষ্য, এখন মানুষ অনলাইন কেনা-কাটায় ঝুঁকে পড়েছেন। ঘরে বসে অনলাইনে পণ্যের অর্ডার দিলে সেটা বাসায় পৌঁছে যাচ্ছে। ফলে, রাস্তার যানজটসহ নানা ধরনের দুর্ভোগ পেরিয়ে মানুষ এখন আগের মতো মার্কেটে আসতে চায় না।

মৌচাক মার্কেট নিচতলায় খাবার দোকানের পাশাপাশি রয়েছে ফ্যাশন পণ্যের কয়েকটি বিক্রয়কেন্দ্র। দ্বিতীয় তলায় রয়েছে জুয়েলারি শপ। আর তৃতীয় তলার পুরোটাই রয়েছে শাড়ি, চুড়ি, থ্রি-পিস, সাজসজ্জা ও প্রসাধনী দোকান। রয়েছে কিছু দর্জি দোকানও। 

মঙ্গলবার বিকেলে সরেজমিনে দেখা যায়, মার্কেটের তৃতীয় তলাতে মেয়েদের পোশাকের পসরা। তবে, মার্কেটে ক্রেতা সমাগম হাতে গোনা। দোকানের সামনে দিয়ে কেউ হেঁটে গেলেই হাঁক-ডাক দিচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। কেউবা তাদের ডাকা সাড়া দিয়ে বাহারি ডিজাইনের পোশাক দেখছেন। দরদাম করে পছন্দের পোশাক কিনছেন, কেউ আবার চলে যাচ্ছেন।

এই মার্কেটের মাশাল্লাহ ফেব্রিক্সের বিক্রেতা মোহাম্মদ আশিক ঢাকা পোস্টকে বলেন, কাতান, জামদানি, টাঙ্গাইল, প্রিন্ট, ফেব্রিক্স থেকে শুরু করে সব ধরনের শাড়ি রয়েছে মৌচাক মার্কেটে। এছাড়া রয়েছে বিভিন্ন বাহারী ডিজাইনের থ্রি-পিস। শাড়ির দাম আড়াই হাজার থেকে পাঁচ হাজার। আর থ্রি-পিস ১৫শ থেকে ৪ হাজার টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। এছাড়া মূল্য ছাড় দিয়ে ৫৫০ টাকাতেও কিছু থ্রি-পিস বিক্রি করা হচ্ছে।

আশিকের বলেন, আজ সারাদিনে বিকেল ৩টার দিকে প্রথম একজন ক্রেতা তার দোকানে আসেন। তার কাছে ১৭শ টাকায় একটি থ্রি-পিস বিক্রি করছেন। আর কোনো বিক্রি নেই। রাত পর্যন্ত হয়তা আর এক-দুইজন ক্রেতা আসে কি না সন্দেহ আছে।

চলতি মাসের ১ তারিখ থেকে এই দোকানে চাকরি নিয়েছেন বলে উল্লেখ করে আশিক বলেন, তখন থেকে দেখে আসছেন, মার্কেট ক্রেতাদের তেমন আনাগোনা নেই। দিনে ৫ থেকে ১০ হাজারের বেশি বিক্রি হয় না। আগামী কয়েকদিন পরে হয়তো বিক্রি কিছুটা বাড়তে পারে।

মাশাল্লাহ ফেব্রিক্সের ঠিক সামনের দোকান হাল ফ্যাশন। এই দোকানের মালিক তাসবির মাহমুদ ইমন। তিনি হতাশার সুরে বলেন, ব্যবসার অবস্থা খুবই খারাপ। এভাবে চলতে থাকলে দোকান ভাড়া, কর্মচারী বেতন, পরিবার চালানো কষ্টসাধ্য হয়ে দাঁড়াবে। গত কয়েক বছর করোনার কারণে ব্যবসার অবস্থা খুবই খারাপ গেছে। সেটা কাটিয়ে গত রমজান ঈদের মোটামুটি ভালো ব্যবসা হয়েছে। কিন্তু এখন আবার ব্যবসার অবস্থা মন্দা।

তিনি আরও বলেন, কোরবানির ঈদে এমনিতে ব্যবসা কম হয়। বন্যা কারণে এবার ব্যবসার অবস্থা খারাপ। এবারও সেই অবস্থা মধ্যে পড়েছি আমরা।

এএইচআর/এনএফ