দেশের প্রান্তিক পর্যায়ে ডিজিটাল লেনদেন সেবা পৌঁছে দেওয়ার কাজ শুরু করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ডিজিটাল পেমেন্ট সিস্টেমে দেশের যেকোনো প্রান্তের নাগরিককে খুব সহজে সংযুক্ত করাই এর মূল লক্ষ্য বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের পেমেন্ট সিস্টেম ডিপার্টমেন্টের অতিরিক্ত পরিচালক শাহ মোহাম্মদ জিয়াউল হক।

বুধবার (২৯ জুন) দুপুরে বনানীর শেরাটন হোটেলে বাংলাদেশ ব্যাংকের পাইলট প্রকল্প ‘স্মার্ট বাংলাদেশ, স্মার্ট হাট’ কার্যক্রমের অংশ হিসেবে এ পদ্ধতির উদ্বোধন করেন স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী তাজুল ইসলাম।

অনুষ্ঠানে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পেমেন্ট সিস্টেম ডিপার্টমেন্টের অতিরিক্ত পরিচালক শাহ মোহাম্মদ জিয়াউল হক বলেন, গত বছর থেকে কোরবানির হাটকে ডিজিটাল করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। জনগণকে আমরা এবার গরুর হাটের উৎসবের আমেজকে ডিজিটাল করতে চাই। সেটা হলো ডিজিটাল লেনদেন। তাহলে কোনো ঝুঁকি থাকবে না। জাল টাকার লেনদেনও থাকবে না।

গত বছর কোরবানির হাটে ৯১ লাখ কোরবানির পশু বেচাকেনা হয়েছে। যার অর্থ লেনদেনের হিসেবে দাঁড়ায় ২২ হাজার কোটি টাকা। এ টাকার নগদ লেনদেনে অনেক সমস্যা তো হবেই। এ অর্থ লেনদেন যদি ঝুঁকিমুক্ত পরিবেশে করা যায় তাহলে ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয়ই উপকৃত হবেন। সেই উদ্দেশ্যেই হাটে পশু কেনাবেচার জন্য ডিজিটাল লেনদেন প্রক্রিয়া শুরু করা হচ্ছে। কাস্টমারকে আমরা নিশ্চয়তা দিতে চাই যে, হাটের কাছে এটিএম বুথের টাকা শেষ হয়ে যেতে পারে, কিন্তু আমাদের ডিজিটাল পেমেন্টে টাকা শেষ হবে না।

তবে যারা বিক্রি করছেন তাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট লাগবে। ব্যাংকের মার্চেন্ট অ্যাকাউন্ট বা এজেন্ট ব্যাংকিং অ্যাকাউন্ট থাকলেও হবে। পশুর হাটে আমাদের ‘স্মার্ট বাংলাদেশ স্মার্ট হাট’এর ডিজিটাল পেমেন্ট সিস্টেমের জন্য ডিজিটাল বুথ থাকবে, কিউআর কোড থাকবে। সহজেই লেনদেন করা সম্ভব হবে। আমরা চুয়াডাঙ্গা ও কুষ্টিয়ার হাটে গিয়ে বেশ কিছু সমস্যার কথা শুনেছি। সেখানে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের বুথ নেই। সমস্যাগুলো চিহ্নিত করছি। আশা করছি, আগামী বছর থেকে সব সমস্যার সমাধান করে পূর্ণাঙ্গ ডিজিটাল পেমেন্টের আওতায় নিয়ে আসা সম্ভব হবে। এক্ষেত্রে বিকাশ ও এম ক্যাশ সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে।

তিনি বলেন, কোরবানির পশুর হাটে উদ্ভূত সব সমস্যা নিরসনে এবং জনগণের পেমেন্ট প্রদান প্রক্রিয়া সহজীকরণের লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক এবারের ঈদুল আজহার পশুর হাটে ডিজিটাল পেমেন্ট পদ্ধতিতে লেনদেন ত্বরান্বিত করতে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ স্মার্ট হাট’ নামে পাইলট প্রকল্প গ্রহণ করেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক ও ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন যৌথভাবে এ কাজ করছে। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ ডেইরি ফারমার্স অ্যাসোসিয়েশন এ বিষয়ে কার্যকর সহযোগিতা প্রদান করেছে।

হাটসমূহে পেমেন্ট পার্টনার হিসেবে কার্ড স্কিম পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান, মাস্টার কার্ড, ভিসা ও আমেরিকান এক্সপ্রেস; ডিজিটাল পেমেন্ট বুথ স্থাপন ও পরিচালনার জন্য লিড ব্যাংক হিসেবে ৬টি বাণিজ্যিক ব্যাংক (ব্যাংক এশিয়া লিমিটেড, ব্র্যাক ব্যাংক লিমিটেড, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক লিমিটেড, ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেড, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড, দি সিটি ব্যাংক লিমিটেড); এবং মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস প্রদানকারী সংস্থা হিসেবে বিকাশ লিমিটেড ও ইসলামী ব্যাংক এম ক্যাশ একযোগে কাজ করছে।

এ প্রকল্পের আওতাধীন প্রতিটি হাটে একটি করে ডিজিটাল পেমেন্ট বুথ স্থাপন করা হবে। যেখানে ক্রেতারা ডেবিট/ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে পিওএসে মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস, কিউআর কোডের মাধ্যমে অথবা বুথে স্থাপিত এটিএম মেশিন থেকে নগদ অর্থ উত্তোলন করেও বিক্রেতাকে পশুর মূল্য পরিশোধ করতে পারবেন।

পাশাপাশি ইজারাদারদের কাছে প্রদেয় পশুর হাসিল নগদ অর্থ ছাড়াও ডেবিট/ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে পিওএস মেশিনে অথবা মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেসের মাধ্যমে পরিশোধ করতে পারবেন। প্রান্তিক খামারি এবং সংশ্লিষ্ট ইজারাদারদের স্বার্থে এ পাইলট প্রকল্পের অধীনে সম্পাদিত ডিজিটাল লেনদেনে কোনো প্রকার খরচ বা ক্যাশ আউট চার্জ প্রযোজ্য হবে না।

বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, এ পাইলট প্রকল্প একদিকে ক্রেতার নগদ অর্থ বহনের ঝুঁকি, নকল বা ছেঁড়া/ফাটা নোট সংক্রান্ত সমস্যা সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। অন্যদিকে এ ব্যবস্থায় অংশগ্রহণের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা প্রান্তিক খামারিরা নগদ অর্থ বহন সংক্রান্ত সমস্যা থেকে মুক্ত হবেন এবং ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ভবিষ্যতে অর্থায়ন, ডিপোজিট সংক্রান্ত অন্যান্য সুবিধাদি প্রাপ্য হবেন; যা সার্বিকভাবে দেশজ অর্থনীতিতে অবদান রাখবে।

জেইউ/এসকেডি