ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের ত্যাগের উৎসব ঈদুল আজহার বাকি আর মাত্র কয়েকটা দিন। পশু কোরবানির মধ্য দিয়ে ত্যাগের এ উৎসব পালন করেন তারা। কিন্তু এবার কোরবানি পশুর বাজারে লেগেছে যেন আগুনের ছোঁয়া। কারণ হিসেবে খামারিরা বলছেন, সারা বছর পশুখাদ্যের দাম বাড়তি ছিল। ফলে এবার অন্যান্য বারের চেয়ে পশুপ্রতি দাম ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা বেড়েছে।

ইন্টিগ্রেটেড ডেইরি রিসার্চ নেটওয়ার্ক (আইডিআরএন)-এর এক গবেষণায় দেখা গেছে, বাংলাদেশে গত এক বছরে গোখাদ্যের দাম বেড়েছে ৫৪ শতাংশ, যেখানে বিশ্ববাজারে দাম বেড়েছে ২০.৬ শতাংশ। অর্থাৎ বিশ্ববাজারের তুলনায় বাংলাদেশে গোখাদ্যের দাম বেড়েছে ৩০.৯ শতাংশ।

অন্যদিকে, গবাদি পশুর খাদ্য তৈরির উপাদান সয়াবিন মিল বা সয়া মিল রপ্তানি হবে— এমন খবরে স্থানীয় সয়া মিল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো এর দাম দফায় দফায় বাড়িয়েছে। ফলে শুধু সয়া মিল নয়, অন্য সব পণ্যের মূল্যও অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে।

রাজধানীর কয়েকটি পশুখামার ঘুরে দেখা গেছে, আসন্ন ঈদুল আজহা উপলক্ষে খামারগুলোতে পশুর সংকট নেই। সবাই যার যার জায়গা থেকে পর্যাপ্ত কোরবানির পশু প্রস্তুত করেছে। সারিবদ্ধভাবে সাজানো আছে ছোট-বড় নানা ধরনের গরু, মহিষ, ভেড়া, দুম্বা ও উট। তবে, সমস্যাটা শুধু দামে। খামারগুলোতে ক্রেতাদের আনাগোনা থাকলেও নেই তেমন বিক্রি। 

খামারিদের ধারণা, হয়তো ঈদের আগেই বিক্রি বেড়ে যাবে। তবে, করোনাভাইরাসের নতুন ঢেউ এবং দেশের সার্বিক বন্যাপরিস্থিতি নিয়ে কিছুটা শঙ্কিত তারা।

খামারিদের তথ্য মতে, চলতি বছর কোরবানির জ্যান্ত গরু (লাইভ অ্যানিমেল) ৪৭৫ টাকা কেজি হিসাবে বিক্রি হচ্ছে। গত বছর যা বিক্রি হয়েছিল ৪২৫ টাকায়। সেই হিসাবে ২০০ কেজি অর্থাৎ পাঁচ মণ ওজনের একটি জ্যান্ত গরুর দাম পড়ে ৯৫ হাজার টাকা। যা গত বছর ছিল ৮৫ হাজার টাকা। শুধুমাত্র পশুখাদ্যের দাম বৃদ্ধির কারণে এ বছর কোরবানি পশুর দাম বাড়তি— দাবি খামারিদের।

গাবতলী-সদরঘাট বেড়িবাঁধ সড়কের চাঁদ উদ্যানে অবস্থিত সাদিক অ্যাগ্রো। সেখানে ঢাকা পোস্টের এ প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা হয় কোরবানি পশুর ক্রেতা সাইফুল ইসলামের। তিনি বলেন, গত বছরের চেয়ে এবার গরুর দাম অনেক বেশি মনে হচ্ছে। সাইজ-ভেদে দামের পার্থক্য প্রায় ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা। আমার মতো অনেকের পক্ষে এমন বাজেটে গরু কেনা হয়তো সম্ভব হবে না।

সাদিক অ্যাগ্রোর মালিক মোহাম্মদ ইমরান হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, অন্যান্য বছরগুলোর মতো এবারও আমাদের প্রস্তুতি ভালো। তবে, এবার পশুগুলোকে কোরবানির জন্য প্রস্তুত করতে একটু বেগ পেতে হয়েছে। কারণ, পশুখাদ্যের দাম কয়েক গুণ বেড়েছে।

‘ক্রেতারা চান বছরে একবারই কোরবানির পশু কিনতে। উনার দেখছেন ৫৫০ টাকার গরুর মাংস এখন ৭০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। কিন্তু আস্ত গরু কেনার ক্ষেত্রে তারা এটা অনুমান করতে পারেন না। উনারা ভাবেন, গত বছর ৭০ হাজার টাকা দিয়ে কিনেছি, এ বছর পারব না কেন? এক লাখের গরুতে ১০ হাজার টাকা বেড়েছে— এটাতে ক্রেতাদের কষ্ট হয়। কিন্তু পাঁচ লাখের গরুতে ১৫ হাজার টাকা বেড়েছে, সেখানে তাদের কষ্ট হয় না।’

‘আমরা ভেবেছিলাম, এ বছর করোনার পর ভালো একটা ব্যবসা হবে। কিন্তু এখন আমরা কিছুটা শঙ্কিত। কারণ, করোনার সংক্রমণ আবারও ঊর্ধ্বমুখী। বন্যার পরিস্থিতিও ভালো নয়। তারপরও ভালো ব্যবসার আশা করছি’— বলেন ইমরান হোসেন।

ওয়েলথটেক অ্যাগ্রোর সহকারী আরিফুর রহমান বলেন, খাদ্যের জন্যই এবার পশুর দাম বেশি। বিষয়টা ক্রেতারা কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছেন না। তাদের বাজেটের মধ্যে পশু দিতে না পেরে আমরাও ব্যথিত। তবে, আমাদের কিছুই করার নেই।

এদিকে, সাদিক অ্যাগ্রো ঘুরে দেখা গেছে, তাদের সংগ্রহে এবার এক হাজার ৭০০টি গরু, ৯০০টি ছাগল, ভেড়া ও দুম্বা রয়েছে ২০০টি। বিভিন্ন জাতের মাহিষ আছে ৭৫টি এবং উট রয়েছে দুটি। এখানে সর্বনিম্ন ৯০ হাজার টাকা এবং সর্বোচ্চ ২৭ লাখ টাকা দামের গরু আছে। ৫০০ কেজি ওজন পর্যন্ত পশু ৪৭৫ টাকা কেজি দরে কেনার সুযোগ আছে। ক্রেতার বাসা পর্যন্ত পৌঁছে দেওয়ার সব খরচ খামার কর্তৃপক্ষের।

ওয়েলথটেক অ্যাগ্রোর সংগ্রহে আছে ২০০টি গরু। সর্বনিম্ন ৬০ হাজার এবং সর্বোচ্চ ১৩ লাখ টাকা দামের গরু পাওয়া যাবে এখানে।

এমএইচএন/এসএসএইচ