মোস্তাফিজুর রহমান পুরান ঢাকার বাসিন্দা। ঈদুল আজহায় পরিবারের কাউকে কেনাকাটা করে দেবেন না বলে ঠিক করেছেন। পরিবারের বড়রা বিষয়টি মেনে নিলেও ছোটরা মানতে নারাজ। ঈদ বলে কথা। নতুন জামা না হলে কী চলে। শেষ অবদি ছোট ছেলেকে কিনে দিতে হলো পাঞ্জাবি। রাজধানীর মিরপুর রোডের প্রিয়াঙ্গন শপিং সেন্টারের একটি পাঞ্জাবির দোকানে ঢাকা পোস্টের সঙ্গে কথা হয় মোস্তাফিজের।

মোস্তাফিজ বলেন, রোজার ঈদে পরিবারের সবার জন্য ভালো করেই শপিং করেছি। আগেই বলে দিয়েছি, কোরবারির ঈদে গরুতেই বেতনের সব চলে যাবে। কারও জন্য কেনাকাটা করা যাবে না। বড়দের বোঝানো গেলেও ছোটদের বোঝানো যায় না। ছোট ছেলেটা গত কয়েকদিন ধরে ঈদের নতুন পাঞ্জাবি-পাঞ্জাবি বলে পাগল করে দিচ্ছে। ওর জন্য পাঞ্জাবি কিনতে মার্কেটে আসা লাগল।

দেশের আকাশে বৃহস্পতিবার পবিত্র জিলহজ মাসের চাঁদ দেখা গেছে। আগামী ১০ জুলাই কোরবানির ঈদ উদযাপিত হবে। অর্থাৎ ঈদের আর মাত্র নয়দিন বাকি। সাধারণত বাংলাদেশে ঈদুল ফিতরে জামা-কাপড়ের কেনাকাটার ধুম থাকে। সেই অর্থে কোরবারির ঈদে কেনাকাটা অনেক কম থাকে। মূলত, কোরবানির পশু ক্রয়ে অর্থের বড় একটা অংশ বরাদ্দ রাখতে হয়। তবে কোরবানির ঈদে একেবারে কেনাকাটা হয় না সেটা কিন্তু নয়।

রাজধানীর নিউ মার্কেট এলাকার কয়েকটি শপিং মল সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, ঈদ কেনাকাটা কিছুটা হলেও শুরু হয়েছে। তবে সেই অর্থে ঈদের কেনাকাটা শুরু হয়নি। মার্কেটগুলোতে যে পরিমাণ ক্রেতা রয়েছে, এটা স্বাভাবিক সময়েও চেয়ে বেশি নয়। ঈদের কেনাকাটা করতে আসা ক্রেতাদের ভিড় না থাকায় অনেক দোকানি অবসর সময় পার করছেন। অনেক দোকোনে বিশাল ছাড়ের ব্যবস্থা করার পরও এখনও ক্রেতা না ভেড়ায় মন ভালো নেই বিক্রেতাদের।

নিউ সুপার মার্কেট, জাহান ম্যানশন, প্রিয়াঙ্গন শপিং সেন্টার, চন্দ্রিমা সুপার মার্কেট ও আলপনা প্লাজা ঘুরে দেখা গেছে, ছেলেদের বাহারি ধরনের পাঞ্জাবির পসরা সাজানো। গরমের সময়ে ঈদ হওয়ায় আরামদায়ক কাপড় নির্বাচনে জোর দেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে লিনেন, সুতি, রেমি কটন, ফাইন কটনের পাঞ্জাবি বেশি দেখা গেছে। রং বিবেচনায় সাদা, হালকা সাদা, ছাই, লালচে, নেভি ব্লু ও বেগুনির প্রাধান্য বেশি। এছাড়া এবারও ঈদের চলতি ধারায় আছে কাবলি ও কটি।

মোনালিসা ফ্যাশন হাউজে কথা হয় হিরনের সঙ্গে। বিশ্ববিদ্যালয়পডুয়া হিরন জানায়, তার দেশের বাড়ি কুমিল্লা। বাড়ি যাবার আগে পরিবারের জন্য কিছু কেনাকাটা করতে এসেছেন তিনি।

এখনও শপিং মলগুলোতে ক্রেতাদের না ভেড়ার কারণ হিসেবে ব্যবসায়ীরা দেশের বন্যা পরিস্থিতি সামনে আনছেন। তা ছাড়া এখনও বেশিরভাগ অফিসে বেতন কিংবা বোনাস না পাওয়াকে দ্বিতীয় কারণ হিসেবে দেখছেন তারা।  

আলপনা প্লাজায় পাঞ্জাবি বিক্রেতা মোহাম্মদ স্বপন জানান, আমাদের এখানে পাঞ্জাবি, শেরওয়ানি, কাবলি, সুলতানি কাবলি রয়েছে বড়দের। ছোটদেরও পাঞ্জাবি ও শেরওয়ানি রয়েছে। গত বছর কোরবানিতে দেখা গেছে ১০ থেকে ১৫ দিন আগ থেকে ঈদের একটা কেনাকাটা থাকত। এবার একটু কম। মানুষের আর্থিক অবস্থা খারাপ। দেশের অনেক জায়গায় বন্যা গেল। ১ জুলাইয়ের (শুক্রবার) পর থেকে আশা করি বিক্রিটা বাড়বে।

বিক্রেতাদের দেওয়া তথ্য বলছে, কোরবানির ঈদ মাথায় রেখে কিছুটা কম বাজেটের পাঞ্জাবি তোলা হয়েছে। এসব শপিং মলে বড়দের ৮০০ টাকা থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকার পাঞ্জাবি তোলা হয়েছে। শেরওয়ানি তোলা হয়েছে দেড় হাজার থেকে শুরু করে ১৫ হাজার টাকা পযন্ত। আর বাচ্চাদের পাঞ্জাবি ও শেরওয়ানি পাওয়া যাচ্ছে ৫০০ থেকে শুরু করে ২ হাজার টাকা পর্যন্ত।  

জাহান ম্যানশনে মোনালিসা ফ্যাশন হাউজের স্বত্বাধিকারী মো. রবি বলেন, বেচাকেনা কম। এটা হলো ভিআইপি এলাকা। এখানে কাস্টমার নামে আসরের নামাজের পর। কিন্তু রাত ৮টার মধ্যে দোকান বন্ধ করে দিতে হয়। কালকে থেকে ১০টা পর্যন্ত খোলা রাখা যাবে। কাস্টমার কালকে থেকে বাড়তে পারে।

বিশ্বব্যাপী মূল্যবৃদ্ধিজনিত পরিস্থিতি বিবেচনায় বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সাশ্রয়ে রাত আটটার পর সারা দেশে দোকান, শপিংমল, মার্কেট, বিপণিবিতান ও কাঁচাবাজার বন্ধ রাখতে হচ্ছে। প্রায় ১৩ দিন সরকারের এ নির্দেশনা চলছে। তবে ঈদকে কেন্দ্র করে আজ থেকে শুক্রবার (১ জুলাই) থেকে দুই ঘণ্টা সময় বাড়িয়ে রাত ১০টা করা হয়েছে।  

এনআই/এসএম