নবাব-সুলতান-লাল বাহাদুরের সঙ্গে খাসি ফ্রি
বিকেল ৪টা, মোহাম্মদপুরের বছিলার পশুর হাটে বেশ কিছু মানুষের জলটা। হাটে আসা সবচেয়ে বড় গরু দেখতেই এ জটলা। নবাব, সুলতান আর লাল বাহাদুরই এ হাটে আসা ক্রেতা ও দর্শনার্থীর মন কাড়ছে। এসব পশুর দাম হাঁকা হচ্ছে, ৯ থেকে ১২ লাখ টাকা। আর এগুলোর যেকোনোটি কিনলেই একটি ফ্রি খাসি।
কোরবানির ঈদকে কেন্দ্র করে রাজধানীর হাটগুলোতে পশু উঠতে শুরু করছে। বেশিরভাগ হাটের প্রস্তুতি প্রায় শেষের দিকে। তবে এখনও হাটগুলোতে ক্রেতা আসতে শুরু করেনি। আর হাটে যেসব মানুষের আনাগোনা দেখা যাচ্ছে, এদের বেশিরভাই ঘুরতে কিংবা পশুর দাম যাচাই-বাছাই করতে এসেছেন।
বিজ্ঞাপন
রোববার (৩ জুলাই) উত্তর সিটি করপোরেশনের মোহাম্মদপুরের বছিলার পশুর হাট সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, এখনও হাটের পুরো প্রস্তুতি শেষ হয়নি। এ হাটে এখনও সেভাবে পশু আসেনি। তবে সোমবার (৪ জুলাই) থেকে পশু আসা বেড়ে যাবে বলে জানান বিক্রেতারা।
আরও পড়ুন>> সড়ক-মহাসড়কে পশুর হাট বসানো যাবে না
বিজ্ঞাপন
এ হাটে পশু বেপারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এখন পর্যন্ত হাটে সর্বোচ্চ দামের গরু উঠেছে ১২ লাখ টাকা। আর সর্বনিন্ম ৯০ হাজার থেকে এক লাখ টাকার। বেশিরভাগ পশুই এসেছে শনিবার রাত ও রোববার সারাদিনে।
এ হাটে কিশোরগঞ্জ থেকে ১১টি গরু নিয়ে এসেছেন বেপারি মোহাম্মদ কবির। তিনি বলেন, আজ সকালে গরু নিয়ে হাটে এসেছি। ১১টি গরু নিয়ে এসেছি। এ হাটে সবচেয়ে বড় গরু এনেছি আমরা। সবচেয়ে বড় যে গরু নবারের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ১২ লাখ টাকা; এ গরুর ওজন সাড়ে ৩২ মণ। ১১ লাখ টাকায় আছে লাল বাহাদুর, এটি ২৭ মণের। আর সুলতানের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ১০ লাখ টাকা। যেকোনো একটি গরু কিনলে একটি খাসি ফ্রি, প্রতিটি খাসির দাম হবে ১৫ হাজার টাকা করে বলে জানান কবির।
আরও পড়ুন>> ঢাকার উত্তরে এবার ৮ হাট, দক্ষিণে ১০
কুষ্টিয়া থেকে হাটে গরু নিয়ে আসা মোহাম্মদ নজরুল জানান, আমরা আজই (রোববার) গরু নিয়ে কুষ্টিয়া থেকে এসেছি। হাটে ১২টি গরু নিয়ে এসেছি। প্রতিটি গরুর গড় দাম নির্ধারণ করা হয়েছে এক থেকে তিন লাখের মধ্যে। এখনও ক্রেতা দেখছি না।
গরু বেপারীরা জানান, এখনও এ হাটে গরু বিক্রি শুরু করতে পারেননি তারা। হাটে আসা বেশিরভাগ এসে বাজার বোঝার চেষ্টা করছেন। অনেকে এসে ছবি তুলে নিয়ে যাচ্ছেন। আবার অনেকে হাটে ঘুরতে এসেছেন। এখনও বিক্রি শুরু করতে না পারলেও আগামী দু’একদিনের মধ্যে হাট জমে উঠবে বলে প্রত্যাশা তাদের। তবে দেশের বিভিন্ন জেলায় বন্যা পরিস্থিতির কারণে পশু বিক্রি ও ভালো দাম না পাওয়া নিয়ে কিছুটা শঙ্কায় রয়েছেন বেপারীরা।
দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে এ হাটে পশু নিয়ে আসা বিক্রেতারা বলছেন, হাটে পশু আনতে তাদের খুব একটা ঝামেলা পোহাতে হয়নি। দু’এক জায়গায় পশুর গাড়ি থামানো হলেও চাঁদা দিতে হয়নি। এ ধারা ঈদের আগ পর্যন্ত দেখতে চান তারা।
আরও পড়ুন>> কোরবানির পশুর হাটে ডিজিটাল পদ্ধতিতে লেনদেনের উদ্বোধন
এবার উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকায় বসানো হচ্ছে ৮টি অস্থায়ী পশুর হাট। অন্যদিকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকায় বসছে ১০টি অস্থায়ী হাট। পাশাপাশি ডিজিটাল হাটের দিকেই বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
এবার কোরবানির পশুর হাটে ডিজিটাল লেনদেনকে গুরত্ব দিয়ে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ স্মার্ট হাট’ নামে পাইলট প্রকল্প চালু করা হচ্ছে। এ প্রকল্পের আওতায় পশুর হাটেই হবে ডিজিটাল লেনদেন। ডিজিটাল লেনদেনকে জনপ্রিয় করতে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে এবারই প্রথম পরীক্ষামূলকভাবে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। প্রাথমিকভাবে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ছয়টি পশুর হাটে এবার এ লেনদেন সুবিধা চালু করা হচ্ছে।
বছিলা পশুর হাটে এ প্রকল্পের কাজ প্রায় শেষের দিকে। হাটে সিটি ব্যাংকের এক কর্মকর্তা ঢাকা পোস্টকে জানান, ‘স্মার্ট বাংলাদেশ স্মার্ট হাট’ প্রকল্প থেকে সুবিধা পাবেন ক্রেতা এবং বিক্রেতারা। বিক্রেতারা ব্যাংক হিসাব ও মোবাইল ব্যাংকিং সেবার মাধ্যমে পশু বিক্রির টাকা গ্রহণ করতে পারবেন। পশু বিক্রির টাকা গ্রহণ করতে তাদের হাতে থাকবে পয়েন্ট অব সেলস (পিওএস) যন্ত্র। যার মাধ্যমে ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ড দিয়ে বিক্রয়মূল্য পরিশোধ করতে পারবেন ক্রেতারা। এতে করে হাটে ক্রেতা ও বিক্রেতাকে টাকা বহনের ঝামেলা পোহাতে হবে না।
এনআই/জেডএস