ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন পুনঃসংশোধনের খসড়ায় ভেপিং নিষিদ্ধের জন্য আনা প্রস্তাব বাতিলের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ ইলেকট্রনিক নিকোটিন ডেলিভারি সিস্টেম ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশন (বেন্ডস্টা)।

সোমবার (৪ জুলাই) দুপুরে রাজধানীর একটি হোটেলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানায় সংগঠনটি। সংবাদ সম্মেলনে বেন্ডস্টার সভাপতি মাসুদ উজ জামান বলেন, দেশে ভেপিং নিষিদ্ধ করা হলে অনেকে আবারও প্রচলিত সিগারেটে ফিরে যাবেন। এতে ধূমপায়ীর সংখ্যা কমে যাওয়ার পরিবর্তে উল্টো বেড়ে যাবে। সেক্ষেত্রে ২০৪০ সালের মধ্যে দেশকে ধূমপানমুক্ত করতে প্রধানমন্ত্রীর যে লক্ষ্য, তা বাধাগ্রস্ত হবে।

তিনি বলেন, সম্প্রতি ভেপিং নিষিদ্ধ করে ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০০৫ পুনরায় সংশোধনের খসড়া তৈরি করেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। যেখানে ই-সিগারেট বা এর যন্ত্রাংশ বা অংশ-বিশেষ উৎপাদন, আমদানি, রপ্তানি, সংরক্ষণ, ক্রয়-বিক্রয় ও পরিবহন নিষিদ্ধ করার প্রস্তাব রয়েছে। তামাকজাত দ্রব্যের সঙ্গে ভেপিং, ইলেকট্রনিক নিকোটিন ডেলিভারি সিস্টেমকে ভুলভাবে এক কাতারে ফেলা হয়েছে।  অথচ এগুলো ধূমপান ও তামাকজাত অন্য পণ্যের আসক্তি কাটাতে সবচেয়ে কার্যকর উপায় বা ‘কুইটিং টুল’ হিসেবে স্বীকৃত এবং অন্যান্য প্রচলিত তামাকজাত দ্রব্য থেকে সম্পূর্ণরূপে আলাদা। ভেপিং সংক্রান্ত কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে আমাদের সঙ্গে আলোচনা করা দরকার ছিল। আমরা তামাক পণ্য ও ভেপিং–এই দুইটিকে আলাদা পণ্য হিসেবে বিবেচনার দাবি জানাচ্ছি।

বেন্ডস্টা সভাপতি বলেন, ইউকে হেলথ সিকিউরিটি এজেন্সির (পাবলিক হেলথ অব ইংল্যান্ড) গবেষণায় বলা হয়েছে, ভেপিং সাধারণ সিগারেটের তুলনায় ৯৫ শতাংশ কম ক্ষতিকর। কিন্তু অবাক করা বিষয় হলো, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এ সংক্রান্ত কোনো গবেষণা পর্যালোচনা না করে এবং সংশ্লিষ্ট অংশীজনের সঙ্গে আলোচনা না করে ভেপিং নিষিদ্ধের প্রস্তাব করেছে।

আরও পড়ুন : তামাক কেন ক্ষতিকারক?

মাসুদ জামান আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়াভিত্তিক কনজ্যুমার চয়েস সেন্টারের প্রতিবেদন অনুযায়ী, যুক্তরাজ্যের পদ্ধতি অনুসরণ করে নিয়মতান্ত্রিকভাবে ভেপিংকে উৎসাহিত করা গেলে বাংলাদেশে ৬২ লাখের বেশি ধূমপায়ী প্রচলিত সিগারেট ছেড়ে দেবে। ইতোমধ্যে দেশের চার হাজার ভেপার সম্প্রতি ভেপিংকে ধূমপান ছাড়ার ক্ষেত্রে কার্যকর উপায় হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য পিটিশনে সই করেছেন।

যুক্তরাজ্য, কানাডা, নিউজিল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশের উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, ধূমপান ছাড়ার সহায়ক উপায় হিসেবে ভেপিংয়ের পরামর্শ দেওয়া হয় উন্নত দেশে। এ সংক্রান্ত আইন প্রণয়ন করে তারা সফলতা পাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসনের (ইউএস–এফডিএ) ভেপিং পণ্য বাজারজাত করার অনুমোদন দিয়েছে। এমন গবেষণা ও বাস্তবতা আমলে না নিয়ে বাংলাদেশে ভেপিং নিষিদ্ধের ভুল পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। 

তিনি আরও বলেন, বিশ্ব ব্যাংকের তথ্য মতে, দেশে ২০১০ সালে তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহারের সংখ্যা মোট জনসংখ্যার ৪৫ শতাংশ ছিল, যা ২০২২ সালে এসে ৩৪ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। এমন বাস্তবতায় ভেপিং নিষিদ্ধ করা হলে ধূমপায়ীর হার ফের বেড়ে যাওয়ার শঙ্কা সৃষ্টি হবে। 

বাংলাদেশে ভেপিংয়ের অবস্থান কেমন— এক সাংবাদিকের করা প্রশ্নের জবাবে মাসুদ উজ জামান বলেন, বাংলাদেশে আমরা প্রতিবছরই ভেপিংয়ের প্রসার দেখতে পাচ্ছি। এদেশে ক্রমাগত ধুমপায়ীরা ভেপিংয়ের মাধ্যমে ধূমপান ছাড়ছে।

সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির পক্ষ থেকে জানানো তিনটি দাবি হলো, ১. তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের খসড়া থেকে অবিলম্বে ভেপিং পণ্য তথা ইলেকট্রনিক নিকোটিন ডেলিভারি সিস্টেমকে বাদ দেওয়া, ২. ভেপিং সংক্রান্ত কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে বাংলাদেশ ইলেক্ট্রনিক নিকোটিন ডেলিভারি সিস্টেম ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যদের সঙ্গে বসে আলোচনা করা, তামাক পণ্য এবং ভেপিং— এ দুটি পণ্যকে আলাদা পণ্য হিসেবে গণনা করা এবং তামাক পরিত্যাগ সহায়ক পণ্য হিসেবে পৃথক একটি নীতিমালা প্রণয়ন করা।

এএজে/আরএইচ