সাবেক এসপি বাবুল আক্তার ও খুনের শিকার স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতুর দুই সন্তান আক্তার মাহমুদ মাহি ও তাবাসসুমকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা।

সোমবার (৪ জুলাই) মাগুরা জেলা সদরের সমাজসেবা কার্যালয়ে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এ সময় আদালতের নির্দেশে সমাজসেবা অধিদপ্তরের একজন কর্মকর্তা ও একজন নারী পুলিশ সদস্য উপস্থিত ছিলেন। 

ঢাকা পোস্টকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআই চট্টগ্রাম মেট্রো অঞ্চলের পরিদর্শক আবু জাফর মোহাম্মদ ওমর ফারুক। তিনি বলেন, সকাল ১০ টার পর থেকে তিন ঘণ্টা একসঙ্গে কথা বলেছি। কথার ফাঁকে ফাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে তাদের ছেলেকে।
 
তিনি বলেন, ঘটনায় সময় মাহির মায়ের সঙ্গে ছিল। তখন তার বয়স কম ছিল। ঘটনার যতটুকু মনে এসেছে তার বর্ণনা দিয়েছে। তবে অনেক কিছুই বলেনি। আমার কাছে মনে হয়েছে তাকে অনেক কিছুই না বলতে শিখিয়ে দেওয়া হয়েছে। আর ঘটনায় সময় মেয়ের বয়স এক বছর ছিল। তার কিছুই মনে নেই। জিজ্ঞাসাবাদের সময় সে উপস্থিত ছিল।

ছেলেকে আরও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে কি না- এ প্রশ্নের জবাবে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, এটা এখনই বলা যাবে না। তবে আজকের জিজ্ঞাসাবাদ শেষ হয়েছে। মামলার তদন্ত কাজ আরও করব। তখন যদি জিজ্ঞাসাবাদের প্রয়োজন দেখা দেয়, তখন আবার জিজ্ঞাসাবাদ করার চেষ্টা করব।

চলতি বছরের ১৬ মার্চ চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ শেখ আশফাকুর রহমান সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু হত্যার ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলায় তাদের দুই সন্তানকে শিশু আইন মেনে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য অনুমতি দেন। বাবুল আক্তারের আইনজীবী অ্যাডভোকেট ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী ঢাকা পোস্টকে বলেন, জিজ্ঞাসাবাদের ক্ষেত্রে শিশু আইন ২০১৩–এর ৫৩ ও ৫৪ ধারার বিধান কঠোরভাবে অনুসরণ করে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দিয়েছেন আদালত। 

২০১৬ সালের ৫ জুন সকালে চট্টগ্রাম নগরের নিজাম রোডে ছেলেকে স্কুলবাসে তুলে দিতে যাওয়ার পথে দুর্বৃত্তদের গুলি ও ছুরিকাঘাতে খুন হন মাহমুদা খানম (মিতু)। ওই সময় এ ঘটনা দেশজুড়ে ব্যাপক আলোচিত হয়। ঘটনার সময় মিতুর স্বামী পুলিশ সুপার বাবুল আক্তার অবস্থান করছিলেন ঢাকায়। ঘটনার পর চট্টগ্রামে ফিরে বাবুল আক্তার পাঁচলাইশ থানায় অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

আরও পড়ুন : একটি পক্ষ মিতু হত্যা মামলার বিচারকে বিলম্বিত করছে : হাইকোর্ট

জঙ্গিবিরোধী কার্যক্রমের জন্য স্ত্রীকে হত্যা করা হয়ে থাকতে পারে বলে মামলায় অভিযোগ করেন তিনি। তবে দিন যত গড়িয়েছে মামলার গতিপথও পাল্টেছে। এক পর্যায়ে সন্দেহের কেন্দ্রবিন্দুতে আসে স্বামী বাবুল আক্তারের নাম। তদন্তে তার বিরুদ্ধেই হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার সংশ্লিষ্টতা পাওয়ার পর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাকে হেফাজতে নেয় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।

পরে গত বছরের ১২ মে বাবুল আক্তারসহ আটজনকে আসামি করে নতুন করে মামলা দায়ের করা হয়। এ মামলায় বাবুল আক্তারকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে পিবিআই। রিমান্ড শেষে প্রথমে আদালতে জবানবন্দি দেওয়ার কথা থাকলেও পরে জবানবন্দি দেননি বাবুল। তারপর তাকে চট্টগ্রাম কারাগারে পাঠানো হয়।

চলতি বছরের ২৫ জানুয়ারি মিতু হত্যার ঘটনায় তার বাবা মোশাররফ হোসেনের দায়ের করা মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করে পিবিআই। পিবিআই জানায়, একই ঘটনায় বাবুল আক্তারের দায়ের করা মামলার তদন্ত এগিয়ে নিতে মিতুর বাবা মোশাররফের মামলাটির চূড়ান্ত প্রতিবেদনের মাধ্যমে নিষ্পত্তি করা হচ্ছে। একই ঘটনায় দুটি মামলা চলতে পারে না। সম্প্রতি আদালত এটিকে ত্রুটিপূর্ণ উল্লেখ করেন। তাই আদালতের পর্যবেক্ষণ মেনে ও বিধিবিধান অনুসারে মিতুর বাবার দায়ের করা মামলাটির চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়েছে। আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী বাবুলের করা মামলাটির অধিকতর তদন্ত চলবে।

মিতু হত্যার ঘটনায় দুটি মামলাই তদন্ত করছেন পিবিআইয়ের পরিদর্শক আবু জাফর মোহাম্মদ ওমর ফারুক। এর মধ্যে বাবুল আক্তারের করা মামলাটির অধিকতর তদন্ত চলছে। অধিকতর তদন্ত চলাকালে আদালতের আদেশে চলতি বছরের ৯ জানুয়ারি বাবুল আক্তারকে নিজের করা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়।

আদালত সূত্রে জানা গেছে, মিতু হত্যার ঘটনায় বাবুল আক্তার যে মামলাটি দায়ের করেছিলেন, সেটির তদন্ত শেষ করে আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়েছিল পিবিআই। কিন্তু আদালত চূড়ান্ত প্রতিবেদন না নিয়ে মামলাটি অধিকতর তদন্তের নির্দেশ দেন।

কেএম/আরএইচ