দেশের এক জেলা থেকে অন্য জেলায় মোটরসাইকেল চলাচলে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ)। তবে ‘অতি জরুরি’ ক্ষেত্রে ঢাকাসহ দেশের এক জেলা থেকে অন্য জেলায় যেতে মুভমেন্ট পাসের ব্যবস্থা করেছে বাংলাদেশ পুলিশ।

ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশনস বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মো. ফারুক হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, আগেরবারের মতো এবারও অনলাইনে পাশ দেওয়া হচ্ছে না। এবার মুভমেন্ট পাসের জন্য ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগের উপ-কমিশনারের (ডিসি) কার্যালয়ে গিয়ে ফরম সংগ্রহ করতে হবে। ফরম পূরণ করে জমা দিতে হবে। পুলিশের যদি মনে হয় আবেদনকারীর অন্য জেলায় মোটরসাইকেলে গমন করা প্রয়োজন, সেক্ষেত্রে তিনি অনুমতি পাবেন।

পুলিশ সদর দপ্তর জানায়, ঢাকার বাইরের জেলাগুলোতে মুভমেন্ট পাসের ফরম পাওয়া যাবে পুলিশ সুপারের (এসপি) কার্যালয়, প্রতিটি জেলার থানা ও তথ্য কেন্দ্রে। মুভমেন্ট পাসের জন্য রাইডারকে যে ফরম দেওয়া হবে সেটির দুটি অংশ থাকবে। অফিস কপি এবং রাইডার কপি। উভয় ফরমে যাত্রার স্থান (জেলা), গন্তব্যের স্থান (জেলা), ভ্রমণের রুট, ভ্রমণের কারণ, ভ্রমণের তারিখ, ভ্রমণের সময়, মোটরসাইকেলের রেজিস্ট্রেশন নম্বর, যাত্রী সংখ্যা এবং রাইডারের মোবাইল নম্বর দিতে হবে। ফরমে পুলিশ কর্মকর্তা অনুমোদন দিলে রাইডারের কপিতে সিল দিয়ে দেওয়া হবে। সেই সিল নিয়ে নির্দিষ্ট গন্তব্যে যেতে পারবেন ওই রাইডার। 

সদর দপ্তর আরও জানায়, মুভমেন্ট পাস কেবল জরুরি প্রয়োজনের জন্য, এটি দিয়ে কেউ রাইড শেয়ার করতে পারবেন না। পুলিশের কাছে কাউকে এমন সন্দেহ হলে তার যাত্রা বাতিল করা হতে পারে। 

এর আগে বুধবার (৬ জুলাই) রাজারবাগ পুলিশ লাইনসে ত্রৈমাসিক অপরাধ পর্যালোচনা সভায় পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদ এ বিষয়ে মুভমেন্ট পাসের বিষয়ে অনুমতি দেন।

এর আগে ঈদুল আজহায় সাত দিন সারা দেশের মহাসড়কে যৌক্তিক কারণ ছাড়া মোটরসাইকেল না চালানোর পাশাপাশি এক জেলায় রেজিস্ট্রেশন করা মোটরসাইকেল অন্য জেলায় না চালানোর নির্দেশ দেয় সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়।

রোববার (৩ জুলাই) সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের সভাপতিত্বে (ভার্চুয়ালি) মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে ঈদযাত্রা নিরাপদ ও নির্বিঘ্ন করার লক্ষ্যে অনুষ্ঠিত সভায় এ নির্দেশ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। 

সভায় জানানো হয়, ঈদুল আজহার আগের তিন দিন, ঈদের দিন ও ঈদের পরের তিন দিন সারা দেশের মহাসড়কে যৌক্তিক কারণ ছাড়া মোটরসাইকেল চালানো যাবে না। অনুমোদিত এলাকার বাইরে মোটরসাইকেল রাইড-শেয়ারিং করা যাবে না। পাশাপাশি এক জেলায় রেজিস্ট্রেশন করা মোটরসাইকেল অন্য জেলায় চালানো যাবে না। তবে যৌক্তিক ও অনিবার্য প্রয়োজনে পুলিশের অনুমতি নিয়ে মোটরসাইকেল চালানো যাবে। 

মোটরসাইকেল চলুক, চায় যাত্রী কল্যাণ সমিতিও

ঈদযাত্রায় গতি কমানোসহ কয়েকটি শর্তে মহাসড়কে মোটরসাইকেল চলাচলের অনুমতি দেওয়ার দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি। সংগঠনটি বলছে, ঈদযাত্রায় মহাসড়কে মোটরসাইকেলে রাইডশেয়ারিং বন্ধের সিদ্ধান্তকে পুঁজি করে ব্যক্তিগত বাইক নিয়ে চলাচলকারীদের যাত্রাপথে হয়রানি করা হলে সড়ক দুর্ঘটনার ঝুঁকি বেড়ে যাবে।

তারা বলছে, গণপরিবহন সংকট, বাস মালিকদের স্বেচ্ছাচারিতা, পদে পদে যাত্রী হয়রানি, অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের নৈরাজ্য, রেলের টিকিট অব্যবস্থাপনা, শিডিউল বিপর্যয়, যানজটসহ নানা কারণে ক্রমে মানুষ মোটরসাইকেলের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে। ঝুঁকিপূর্ণ এই বাহনটি কখনোই গণপরিবহনের বিকল্প হতে পারে না। এ অবস্থায় দেশের সড়কের তুলনায় মোটরসাইকেলের সংখ্যা বেশি হওয়ায় এই বাহনটির নিবন্ধন বন্ধ করা জরুরি হয়ে পড়েছে। তার আগে গণপরিবহনের সংকট সমাধান করা, যাত্রী সেবার মানোন্নয়ন, যাত্রী হয়রানি বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি। 

গত ঈদে দুর্ঘটনার শীর্ষে ছিল মোটরসাইকেল

ঈদুল ফিতরের আগে-পরের ১২ দিনে সড়ক দুর্ঘটনায় ৬৮১ জনের মৃত্যু হয়েছিল বলে ঈদের পরে জানিয়েছিল স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সেভ দ্য রোড। রোড সেফটি ফাউন্ডেশন বলেছিল এ সংখ্যা ৩৭৬। আর যাত্রী কল্যাণ সমিতি বলেছিল নিহতের সংখ্যা ৪৪৩।

তিনটি সংগঠনের হিসাবেই মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার ভয়াবহ চিত্র উঠে আসে।

সেভ দ্য রোড বলেছিল, ঈদের ১২ দিনে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ৬৮১ জনের মধ্যে সবচেয়ে বেশি মৃত্যুর ঘটনা ঘটে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায়। তাদের হিসাবে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ১৯০ জন নিহত হন।

ঈদ ঘিরে সড়ক দুর্ঘটনার চিত্র তুলে ধরে যাত্রী কল্যাণ সমিতি বলেছিল দুর্ঘটনার শীর্ষে ছিল মোটরসাইকেল। ১৬৪টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ১৪৫ জন নিহত এবং ১১০ জন আহত হয়েছেন বলে জানায় সংগঠনটি।

এআর/এসএসএইচ