শুক্রবার বেলা ১১টা, বাসশূন্য মহাখালী বাস টার্মিনাল। হাজার হাজার মানুষের অপেক্ষা কাঙ্ক্ষিত বাসের জন্য। কিন্তু বাস কখন আসবে তার কোনো ঠিক নেই। কারণ, যানজটের কারণে মাঝ সড়কে আটকা পড়েছে বেশিরভাগ বাস। তাই কাউন্টার থেকেও টিকিট দেওয়া বন্ধ রাখা হয়েছে।

এমন সময় হঠাৎ একটি রানিং ট্রাক এসে দাঁড়াল মহাখালী বাস টার্মিনালের সামনে। ট্রাক থেকে নেমে দুই ব্যক্তি হাঁকডাক দিয়ে ডাকতে শুরু করলেন ‘ময়মনসিংহ-জামালপুর-শেরপুর ৫০০....’। তখনই শুরু হয়ে যায় বাসের অপেক্ষায় থাকা মানুষগুলোর ট্রাকে উঠার প্রতিযোগিতা। নারী, পুরুষ এমনকি সঙ্গে থাকা শিশু নিয়ে যে যেভাবে পেরেছেন ট্রাকে উঠেছেন।

মূলত এটি গরুবাহী ট্রাক। ট্রাকের হেলপার মনির মিয়া জানান, আফতাব নগর হাটে গরু নামিয়েছেন। ফেরার পথে জানতে পারলেন, মহাখালী বাস টার্মিনালে প্রচুর মানুষ ময়মনসিংহ, শেরপুর, জামালপুর যাওয়ার জন্য অপেক্ষা করছে। তাৎক্ষণিক টার্মিনালে আসার সিদ্ধান্ত নিলেন।

এদিকে দীর্ঘ সময় ধরে অপেক্ষায় অতিষ্ঠ হওয়া যাত্রীরাও হুড়োহুড়ি করে ট্রাকটিতে উঠতে ব্যস্ত। ৫০০ টাকার বিনিময়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে গরুর ট্রাকেই এবার ঈদযাত্রা করবেন তারা।

ইতোমধ্যে ট্রাকে উঠে গেছেন এরশাদ আলী নামে এক যাত্রী। কিন্তু নিচে দাঁড়িয়ে তার মা ও স্ত্রী। পরে তাদেরও টেনে ট্রাকে তুললেন এরশাদ।

ঢাকা পোস্টের কথা হয় এরশাদ আলীর সঙ্গে। কেন ঝুঁকি নিয়ে গরুর ট্রাকে বাড়ি ফিরছেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তা নাহলে কী করব? ঈদে তো বাড়ি যেতেই হবে। কাউন্টারে দাঁড়িয়েছিলাম দুই ঘণ্টা। যানজটের কারণে বাস আসে না, তারা টিকিটও দেয় না। লোকাল বাস আছে দুই একটা। কিন্তু তারা সিন্ডিকেট করে ২০০ টাকার ভাড়া ১০০০ টাকা নিচ্ছে।

যাত্রী ডাকার ব্যস্ততার মাঝেই কথা হয় হেলপার মনির মিয়ার সঙ্গে। তিনি বলেন, এতে আমাদের যেমন উপকার হয়েছে, তেমনি যাত্রীদেরও উপকার হলো। এটি গরুর ট্রাক তাতে কি হয়েছে? গরু নামিয়ে আমরা গাড়ি ধুয়েছি।

তিনি বলেন, বাসে যেখানে ১০০০ টাকা নিচ্ছে, আমরা তা কমিয়ে ৫০০ টাকায় যাত্রী নিচ্ছি।

আজ সকাল থেকেই বাসের অপেক্ষায় মহাখালী বাস টার্মিনালে ভিড় হাজার হাজার মানুষের। এদের বেশির ভাগরই গন্তব্য ময়মনসিংহ, শেরপুর, জামালপুর। দেশের অন্যান্য রুটে ঈদের বেশ কয়েকদিন আগে থেকে বাসের অগ্রিম টিকিট দেওয়া হলেও, এই রুটগুলোতে সেই সুবিধা নেই। রানিং অবস্থায় কাউন্টার থেকে টিকিট নিয়ে বাসে উঠতে হয়।

এদিকে কাউন্টার বাস ছাড়া অন্যান্য লোকাল বাসগুলোতে ২০০ টাকার ভাড়া ১০০০ টাকায় গিয়ে ঠেকেছে। যদিও দরদামে বরাবরের মতো যাত্রীরাই ব্যর্থ হচ্ছেন, তবুও বাসগুলোতে মানুষ উঠছে।

এএসএস/এমএইচএস