শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি

হলে ওঠার ক্ষেত্রে আবাসিক শিক্ষার্থীকে করোনার ভ্যাকসিন নিতে হবে। এক্ষেত্রে ভ্যাকসিন নেওয়ার জন্য কোনো শিক্ষার্থীর যদি মেডিকেল সংক্রান্ত সমস্যা থাকে সেটা ভিন্ন বিষয়। তবে সাধারণ সবাইকে এ ভ্যাকসিন নিতে হবে।

হলে ওঠার ক্ষেত্রে ভ্যাকসিন বাধ্যতামূলক কি না সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি এ কথা বলেন। করোনাকালীন উচ্চশিক্ষার বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সোমবার (২২ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে অনলাইনে জরুরি সংবাদ সম্মেলন করেন শিক্ষামন্ত্রী।

মন্ত্রী বলেন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে যেহেতু আবাসিক হল নেই তাই তাদের ব্যাপারে ভিন্ন সিদ্ধান্ত। তবে যেসব বিশ্ববিদ্যালয়ে আবাসিক হল রয়েছে সেখানে অবশ্যই শিক্ষার্থীদের ভ্যাকসিন নিতে হবে। কারণ একজন শিক্ষার্থী যদি আক্রান্ত হয় তবে অন্যদের ছড়িয়ে পড়ার আশষ্কা থাকে। তবে কারও যদি ভ্যাকসিন নিতে মেডিকেল সমস্যা থাকে তবে তিনি ভ্যাকসিন ছাড়াও হলে উঠতে পারবেন।

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ২১০টি আবাসিক হলের প্রায় ১ লাখ ৩০ হাজার শিক্ষার্থী রয়েছে। তাদের সবাইকে করোনার টিকা দেওয়া হবে।

এর আগে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম প্রেস ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদেরকে জানান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দ্রুত খোলার পরিবেশ হয়েছে কি না, তা পর্যালেচনার জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ৫ থেকে ৬ দিনের মধ্যে এ নিয়ে সভা হবে। তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার বিষয়টি দেখে বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হল খুলে দেওয়ার ব্যাপারে ৫-৬ দিনের মধ্যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

২৪ মে থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস শুরু

করোনাভাইরাসের কারণে গত বছরের মার্চ মাস থেকে বন্ধ থাকা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আগামী মে মাসের তৃতীয় সপ্তাহ থেকে ক্লাস শুরু হবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি।

তিনি বলেছেন, ২৪ মে (সোমবার) থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষে পাঠদান শুরু হবে। তার এক সপ্তাহ আগে ১৭ মে (সোমবার) বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সব আবাসিক হল খুলবে।

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, সব শ্রেণিকক্ষ খোলার আগে যথারীতি অনলাইনে ক্লাস চলবে। আবাসিক হলগুলো খোলার আগে শিক্ষক-কর্মচারীদের টিকা দেওয়া হবে। করোনা পরিস্থিতি সর্ম্পকে মন্ত্রী বলেন, করোনা মোকাবিলায় অনেক দেশের তুলনায় বাংলাদেশ বেশ সাফল্য অর্জন করেছে। সংক্রমণের হার কমে আসছে। টিকা দেওয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশে বড় সাফল্য দেখছি।

তিনি বলেন, যুক্তরাজ্য, দক্ষিণ আফ্রিকা ও ভারতে করোনার নতুন ধরণ পাওয়া গেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন এটি বেশি সংক্রমণ ঘটাতে পারে। এ বিষয়ে আমাদের নজর রাখতে হচ্ছে।

পেছাবে বিসিএস পরীক্ষা
২৪ মের আগে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে কোনো পরীক্ষা হবে না। তবে অনলাইনে ক্লাস চলবে। এই সিদ্ধান্তের সঙ্গে মিল রেখে বিসিএস পরীক্ষার আবেদন ও পরীক্ষার তারিখ পেছানো হবে। করোনার কারণে বয়স অতিক্রম হয়ে যাওয়া কোনো পরীক্ষার্থী যেন এ কারণে ক্ষতিগ্রস্ত না হন, এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

স্কুল-কলেজ-মাদরাসা খোলার সিদ্ধান্ত পরে

আগামী ২৪ মে থেকে দেশের সব সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হলেও স্কুল-কলেজ এবং মাদরাসাগুলো কবে থেকে খোলা হবে তা এখনও সিদ্ধান্ত হয়নি বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি।

শিক্ষামন্ত্রী জানান, ঈদ-উল ফিতরের পর ২৪ মে থেকে দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়ে শ্রেণিকক্ষে পাঠদান শুরু হবে। আর আবাসিক হলগুলো এক সপ্তাহ আগে অর্থাৎ ১৭ মে খুলে দেওয়া হবে।

কিন্তু স্কুল-কলেজ কবে থেকে খুলবে, জানতে চাইলে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, জাতীয় পরামর্শক কমিটির মতামত নিয়ে কবে থেকে স্কুল-কলেজে পাঠদান শুরু হবে তা জানিয়ে দেব। তবে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে। আজকে শুধু সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হয়েছে।

আবাসিক হল খুলে দেওয়ার বিষয়ে মন্ত্রী জানান, এজন্য সব বিশ্ববিদ্যালয়েরই প্রস্তুতি নিতে হবে। প্রয়োজনে হলের অবকাঠামো সংস্কার করবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

৭২ ঘণ্টার আল্টিমেটাম ঢাবি শিক্ষার্থীদের

হল খোলার জন্য নির্দেশ দিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে ৭২ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়েছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। বিকেল ৪টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি মোড়ে রাজু ভাস্কর্যের সামনে মানববন্ধন শেষে শিক্ষার্থীরা এ আল্টিমেটাম দেন।

তারা বলেন, করোনা নিয়ন্ত্রণে চলে এসেছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন একুশে ফেব্রুয়ারিতে শহীদের মিনারের বেদিতে দল বেঁধে ফুল দিয়েছে। এখন আর করোনার ভয় নেই আমাদের। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে আমরা ৭২ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়েছি। এর মধ্যে হল খোলার সিদ্ধান্ত না দিলে আমরা পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করব।

১ মার্চ থেকে হলে উঠতে চান ঢাবি শিক্ষার্থীরা

হল ও ক্যাম্পাস খোলার বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেছেন, ২৪ মে (সোমবার) থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষে পাঠদান শুরু হবে। তার এক সপ্তাহ আগে ১৭ মে (সোমবার) বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সব আবাসিক হল খুলবে।

তবে শিক্ষামন্ত্রীর এমন নির্দেশনা মানতে নারাজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। তারা ১ মার্চ থেকে হলে উঠতে চান। সোমবার বিকেল ৩টা ৩০ মিনিটে টিএসসি মোড়ে ঢাবির রাজু ভাস্কর্যের সামনে মানববন্ধন থেকে এ দাবি করেন তারা। টিএসসি মোড়ের মানববন্ধনে শতাধিক শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন। এ সময়, মোদের দাবি একটাই, হল সব খোলা চাই; এক দফা এক দাবি হল, খুলবে ফেব্রুয়ারি- স্লোগান দেন তারা।

এর আগে বেলা ১২টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদুল্লাহ হলের শিক্ষার্থীরা জোর করে হলে ঢুকে পড়েছেন। এ সময় অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন। সরেজমিনে দেখা যায়, শিক্ষার্থীরা কিছু হলের রুমে ঢুকে পড়েছে, আর একদল শিক্ষার্থী হল মাঠে ক্রিকেট খেলা শুরু করেছে।

তালা ভেঙে আবারও হলে জাবি শিক্ষার্থীরা

সম্প্রতি, স্থানীয়দের সঙ্গে সংঘর্ষের জেরে তালা ভেঙে হলে অবস্থান নেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। জাবি শিক্ষার্থীদের দাবি, ক্যাম্পাস ও হল বন্ধ থাকায় আশপাশের এলাকায় তাদের অবস্থান করাটা বর্তমানে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিপরীতে জাবি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ২০ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় কিছু সংখ্যক শিক্ষার্থী সরকারি নির্দেশ অমান্য করে কোনো কোনো আবাসিক হলে অবস্থান নিয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাদেরকে ২২ ফেব্রুয়ারি সকাল ১০টার মধ্যে হল ত্যাগের নির্দেশ দিচ্ছে। অন্যথায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বাধ্য হবে।

সোমবার (২২ ফেব্রুয়ারি) তালা ভেঙে আবারও হলের ভেতর অবস্থান নিয়েছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। দুপুর ১টার দিকে বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলে প্রবেশ করেন তারা। এর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন চত্বর থেকে মিছিল বের করেন বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। মিছিলটি মেয়েদের হলগুলো অতিক্রম করে বঙ্গমাতা হলের সামনে গিয়ে শেষ হয়।

দর্শন বিভাগের শিক্ষার্থী রিয়াজুল ইসলাম বলেন, বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলে প্রায় ৪০ জন শিক্ষার্থী অবস্থান নিয়েছে। এরপর আমরা মিছিল নিয়ে ফজিলাতুন্নেছা হলে যাব। এই দুই হলেই ছাত্রীরা অবস্থান করবে।

এনএম/জেডএস