পবিত্র ঈদুল আজহার ছুটি গতকাল শেষ হয়েছে। তবে এখনও স্বাভাবিক ধারায় ফেরেনি ঢাকার জীবন, সবখানেই রয়ে গেছে ছুটির আমেজ।  সড়কেও যাত্রীর চাপ নেই। ফলে ঈদ ঘিরে ভাড়া বেশির বদলে কম ভাড়াতে ডেকে ডেকে যাত্রী আনতে হচ্ছে বাসের চালক-হেলপারদের। সড়ক ফাঁকা থাকায় স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে অনেক আগেই গন্তব্যে পৌঁছানো যাচ্ছে।  

গাজীপুর থেকে মহাখালী পর্যন্ত আসতে স্বাভাবিক সময়ে যেখানে দুই থেকে আড়াই ঘন্টা লাগে, সেখানে মাত্র ৩০ মিনিটেই চলে এসেছে সৌখিন পরিবহনের একটি বাস। জানতে চাইলে চালক বলেন, ঈদের এই সময়ে যাত্রীর চাপ বেশি থাকার কথা থাকলেও সেরকমটা নেই। যার ফলে সড়কে যানজটও নেই। গাজীপুর থেকে মহাখালী পর্যন্ত আসতে আমার সময় লেগেছে মাত্র ৩০ মিনিট। অন্যান্য সময়ে এই রাস্তা আসতে দুই থেকে আড়াই ঘণ্টা সময় লেগে যায়।

তিনি বলেন, অনেকগুলো সিট ফাঁকা নিয়েই ময়মনসিংহ বাস কাউন্টার থেকে আমাকে ছেড়ে আসতে হয়েছে। তবে রাস্তায় যাত্রী নেওয়ার কারণে সিটগুলো ভর্তি করেই আসতে পেরেছি। যে কারণে যাত্রীরাও ভাড়া অন্যান্য সময়ের তুলনায় কম দিচ্ছে। ময়মনসিংহ থেকে ২৬০ টাকা ভাড়া হলেও আমাদের যাত্রী আনতে হয়েছে ১৫০ টাকা করে।

প্রতি ঈদেই বেশি ভাড়া নেওয়ার অভিযোগ থাকলেও এবার কম নিচ্ছেন কেন, এমন প্রশ্নের জবাবে সৌখিন পরিবহনের এই বাসচালক বলেন, যাত্রী কম থাকায় আমাদের ভাড়া কম নিতে হচ্ছে। কারণ, যাত্রী কম থাকলেও বাস তো আর কম না।  

আরও পড়ুন : ছুটি শেষে ঢাকা ফিরেছে সাড়ে ৪ লাখ মানুষ

এনা পরিবহনের একজন বাসচালকের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, ঢাকা থেকে যাত্রী কম, কিন্তু অন্যান্য জায়গা থেকে যাত্রী মোটামুটি ভালোই আসছে। তবে রাস্তায় এর কোনো প্রভাব নেই, যাত্রী বা গাড়ির চাপও অন্যান্য সময়ের তুলনায় কিছুটা কম। সকালের দিকে যাত্রী কম হলেও হয়তো বিকেলের দিকে কিছুটা বাড়তে পারে।

এদিকে কম সময়ে গন্তব্যে পৌঁছাতে পেরে খুশি যাত্রীরা। রাজধানীতে একটি বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি করেন মো. ইমদাদ হোসেন। ময়মনসিংহ থেকে ঢাকায় ফেরার অভিজ্ঞতা জানতে চাইলে তিনি বলেন, অন্যান্য সময় যেখানে গাজীপুর থেকেই মহাখালী আসতেই দুই ঘণ্টা সময় লেগে যায়, সেখানে এই সময়ে ময়মনসিংহ থেকেই মহাখালী চলে এসেছি।

তিনি আরও বলেন, ছুটি শেষ হয়ে যাওয়ায় আপাতত আমি একাই চলে এসেছি। আগামী সপ্তাহে পরিবারও চলে আসবে। যাওয়ার সময় যতটা ভোগান্তি হয়েছে, ভেবেছি এখন আসার সময়েও তেমন হবে। কিন্তু কোনোরকম সমস্যা ছাড়াই অল্প সময়ে ঢাকায় চলে এসেছি।

গার্মেন্টসকর্মী শরীফ হোসেন বলেন, সকাল সকাল এসেছি তো, রাস্তাঘাট পুরোই ফাঁকা। হালুয়াঘাট থেকে ঢাকায় আসতে যেখানে ৫ থেকে ৬ ঘণ্টা লাগে, সেখানে চলে এসেছি মাত্র সাড়ে তিন ঘণ্টায়। ব্যাপারটা আমার কাছে খুবই ভালো লেগেছে।

ভাড়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, স্বাভাবিক সময়ে যেখানে আড়াইশো-তিনশো টাকায় আসা যায়, ঈদ উপলক্ষে আজকে আমি ভাড়া দিয়েছি ৪০০ টাকা। তবে, ঢাকা থেকে যাওয়ার সময়ে আরও অনেক বেশি দিয়ে যেতে হয়েছে। 

এনা পরিবহনের মহাখালী কাউন্টার ম্যানেজার মো. আবু সুফিয়ান ঢাকা পোস্টকে বলেন, ঢাকার বাইরে থেকে যাত্রীরা এলেও ঢাকা থেকে খুব কম সংখ্যক যাত্রী বাইরে যাচ্ছেন। আমরা যেহেতু পুরোপুরি সিটিং সার্ভিস, সিটের অতিরিক্ত যাত্রী নেওয়ার কোনো সুযোগ আমাদের নেই। ঢাকা থেকে ১০-১২ জন যাত্রী নিয়ে বাস ছেড়ে গেলেও সিট পরিপূর্ণ হয়েই ময়মনসিংহ থেকে বাসগুলো আসছে। সকালের দিকে যাত্রীর চাপ কিছুটা কম থাকলেও আশা করছি বিকেলে চাপ অনেক বেড়ে যাবে।

আরও পড়ুন : ঈদে সব জায়গায় সড়কের অবস্থা ভালো ছিল, বললেন ওবায়দুল কাদের 

অন্যান্য সময়ের তুলনায় ঈদ শেষে যাত্রীর চাপ কেমন- জানতে চাইলে তিনি বলেন, অন্যান্য সময়ের চেয়ে এবার যাত্রীর চাপ কিছুটা কম। চাকরিজীবীরা ঢাকায় ফিরলেও তাদের অধিকাংশেরই পরিবার এখনও ঢাকার বাইরে অবস্থান করছে। হয়তো আগামী শুক্র-শনিবারে চাপ পড়বে।

আবু সুফিয়ান বলেন, যাত্রীদের সুবিধার্থে আমরা ট্রিপ সংখ্যা বাড়িয়েছে। স্বাভাবিক সময়ে যেখানে আমাদের ৭৫ থেকে ৮০টি ট্রিপ থাকে, ঈদ উপলক্ষে আমরা ১০০ থেকে ১১০টি ট্রিপ দিয়েছি। ঢাকা থেকে কম যাত্রী নিয়ে বাস ছাড়লেও ঈদে যাত্রী পরিবহনে আমরা সন্তুষ্ট।

ঈদে বাড়তি ভাড়া প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, আমাদের ভাড়া স্বাভাবিক সময়ে যেমনটি, ঈদসহ যেকোন উৎসব-আমেজেও ঠিক তেমনই থাকে। এনা প্রাইভেট লিমিটেড জন্মলগ্ন থেকে কখনোই বেশি ভাড়া নেয়নি।

টিআই/এনএফ