যুক্তরাষ্ট্রের বেসরকারি গোয়েন্দা সংস্থা ফেয়ারফ্যাক্সের অর্থায়নে ‘ফেয়ারফ্যাক্স বাংলাদেশ প্রকল্প’ নাম দিয়ে ৬ হাজার ৪৭২টি পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। গত ১৫ জুন প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক অনুমোদিত।

একই তারিখে বাংলাদেশ প্রতিবন্ধী কল্যাণ ট্রাস্ট (বি.পি.কে.টি) নামে নিজস্ব ওয়েবসাইটে (www.bpktp.org) ১ হাজার ৯৪৪টি পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। বিজ্ঞপ্তিতে ট্রাস্টটির একটি ভুয়া নিবন্ধন নম্বরও ব্যবহার করা হয়। ১৫০ ও ৫০০ টাকা করে মোট ১৯ লাখ টাকা সোনালী ব্যাংকে জমার পর তা উত্তোলন করে আত্মগোপনে যায় প্রতারক চক্র।

প্রতারণার অভিযোগ পেয়ে বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করে মিরপুর ডিবি পুলিশ। তদন্তে উঠে আসে বাংলাদেশ প্রতিবন্ধী কল্যাণ ট্রাস্ট বা ফেয়ারফ্যাক্স বাংলাদেশ প্রকল্প নামে কোনো প্রতিষ্ঠান মিরপুরের ওই ঠিকানায় নেই।

চাকরির ভুয়া বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে প্রতারণা, চাকরি প্রত্যাশীদের আবেদন বাবদ ১৯ লাখ টাকা আত্মসাৎ করা প্রতারক চক্রের তিন সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (১৪ জুলাই) বিকেল ৪টার পর ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপির গোয়েন্দা প্রধান হিসেবে সদ্য পদোন্নতি পাওয়া অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশিদ এসব তথ্য জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে ডিএমপির গোয়েন্দা মিরপুর বিভাগের মিরপুর জোনাল টিম আজ ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালিয়ে এই প্রতারক চক্রের তিন সদস্যকে গ্রেপ্তার করে।

তারা হলেন, মো. আজিজুল হাসান ওরফে এমরান (৫১), বিউটি আক্তার (৩৫) ও কবির উদ্দিন পিয়াস (৩০)। গ্রেপ্তারের সময় তাদের কাছ থেকে ১৯ লাখ টাকা ও ভুয়া চাকরির নিয়োগ সংক্রান্ত বিভিন্ন কাগজপত্র উদ্ধার করা হয়।

তিনি বলেন, সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্র মিরপুর এলাকায় ‘ফেয়ারফ্যাক্স বাংলাদেশ প্রকল্প’ এবং ‘বাংলাদেশ প্রতিবন্ধী কল্যাণ ট্রাষ্ট’ নামক দুটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান খুলে পত্রিকা ও প্রিন্ট মিডিয়ার মাধ্যমে ভুয়া নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে চাকরি দেওয়ার প্রলোভন দেখায়। তারা সাধারণ জনগণের কাছ থেকে প্রতারণার মাধ্যমে প্রচুর টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। গোয়েন্দা মিরপুর বিভাগ বিষয়টি জানতে পেরে তদন্ত শুরু করে।

গ্রেপ্তারদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, মার্কিন বেসরকারি গোয়েন্দা সংস্থা ফেয়ারফ্যাক্সের অর্থায়নে ‘ফেয়ারফ্যাক্স বাংলাদেশ প্রকল্প’ নাম দিয়ে বেসরকারি গোয়েন্দা সংস্থায় ৬ হাজার ৪৭২টি পদের বিপরীতে একটি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, এটি বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক অনুমোদিত।

এছাড়া, বাংলাদেশ প্রতিবন্ধী কল্যাণ ট্রাস্ট (বি.পি.কে.টি) নামের প্রতিষ্ঠানে ১ হাজার ৯৪৪টি পদের বিপরীতে তাদের নিজস্ব ওয়েবসাইটে (www.bpktp.org) নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। যা পরবর্তীতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন চাকরির পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। বিজ্ঞপ্তিতে ট্রাস্টটির একটি ভুয়া নিবন্ধন নম্বরও ব্যবহার করা হয়।

ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার হারুন বলেন, নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিগুলোতে প্রতিটি পদের জন্য ১৫০ থেকে ৫০০ টাকা হারে পে অর্ডারের মাধ্যমে মিরপুর বেগম রোকেয়া সরণির সোনালী ব্যাংক শাখার একটি হিসাব নম্বরে জমা করার জন্য বলা হয়।

বিজ্ঞপ্তিগুলোতে অফিসের ঠিকানা দেওয়া হয় মিরপুর-১০ এর ৬ নম্বর সড়কের ১৫ নম্বর বাড়ি। অথচ ওই বাড়ির মালিক একজন মার্কিন প্রবাসী। তিনি ভুয়া নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি সম্পর্কে অবগত হয়ে কাফরুল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন।

ডিবি পুলিশ তদন্তে জানতে পারে, ‘ফেয়ারফ্যাক্স বাংলাদেশ প্রকল্প’ এবং ‘বাংলাদেশ প্রতিবন্ধী কল্যাণ ট্রাষ্ট’ নামে কোনো প্রতিষ্ঠান ওই ঠিকানায় নেই।

এক প্রশ্নের জবাবে হারুন বলেন, সরকারি ব্যাংকে এ ধরনের হিসাব খুলতে হলে বিভিন্ন কাগজপত্র জমা দিতে হয়। কিন্তু প্রতারক চক্রের কাছে থেকে ব্যাংক কোনো ডকুমেন্ট রাখেনি। প্রতারণার উদ্দেশ্যেই সোনালী ব্যাংকের ওই হিসাব থেকে ১৯ লাখ টাকা উত্তোলন করা হয়। গ্রেপ্তারদের বিরুদ্ধে কাফরুল থানায় একটি মামলা হয়েছে। চক্রের বাকি সদস্যদের গ্রেপ্তারে চেষ্টা চলছে।

জেইউ/এমএইচএস