জনশক্তি রপ্তানির লাইসেন্স নেই। ভুয়া ভিসা আর নকল বিএমইটি কার্ডে মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপে উচ্চ বেতনে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে বেকার তরুণ-তরুণীদের সঙ্গে প্রতারণা করেছে একটি চক্র। একেকজনের কাছ থেকে ৫ থেকে ৭ লাখ টাকা করে হাতিয়ে নিয়ে পাঠিয়েছে অনিশ্চিত বিদেশযাত্রায়।

ভুক্তভোগীরা ভুয়া ভিসা ও নকল বিএমইটি কার্ড নিয়ে বিমানবন্দরে গেলে ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ তাদের ফিরিয়ে দেয়। এভাবে চক্রটির ফাঁদে গত তিন বছরে তিনশ মানুষ প্রতারিত হয়েছেন। খুইয়েছেন তিন কোটি টাকা।

সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে র‌্যাব-৩ এর একটি দল গত রোববার (১৭ জুলাই) রাতে রাজধানীর পল্টন এলাকায় অভিযান চালিয়ে মানবপাচার ও প্রতারক চক্রের হোতা মো. আবুল কালামকে (৪১) গ্রেপ্তার করে। এ সময় তার কাছ থেকে ১৪টি পাসপোর্ট, ৬টি নকল বিএমইটি কার্ড, আর্থিক লেনদেনের বিভিন্ন লেজার, রেজিস্টার ও ডায়েরি জব্দ করা হয়। 

আজ সোমবার (১৮ জুলাই) দুপুরে কারওয়ান বাজারে র‍্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন র‍্যাব-৩ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, কয়েকজন ভিকটিমের সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে র‌্যাব-৩ গোয়েন্দা নজরদারি ও ছায়া তদন্ত শুরু করে। 

প্রাথমিক অনুসন্ধান ও জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, গ্রেপ্তার আবুল কালাম সংঘবদ্ধ মানবপাচার ও প্রতারক চক্রের সদস্য। তার জনশক্তি রপ্তানির কোনো লাইসেন্স নেই। কিন্তু তিনি দীর্ঘদিন ধরে জনশক্তি রপ্তানির নামে অবৈধভাবে ভ্রমণ ভিসার মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্যের একটি দেশে লোক পাঠিয়ে আসছেন।

এছাড়াও চক্রটি মধ্যপ্রাচ্য হয়ে ইউরোপে জনশক্তি প্রেরণের প্রলোভন দেখিয়ে বিদেশ গমনে ইচ্ছুক বেকার তরুণ-তরুণীদের কাছ থেকে ৫ থেকে ৭ লাখ টাকা করে হাতিয়ে নিয়ে ভুয়া ভিসা ও নকল বিএমইটি কার্ড ভুক্তভোগীদের হাতে ধরিয়ে দেয়।  

বিমানবন্দর থেকে ফিরিয়ে দেওয়ার পর ভুক্তভোগীরা প্রতিকার চাইলে গ্রেপ্তার আসামি তাদের সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দেন। গত তিন বছরে চক্রটি অবৈধভাবে অর্ধ-শতাধিক লোককে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে পাঠিয়েছে, তারা বিদেশ গিয়ে কাজ না পেয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে।

র‍্যাব-৩ এর অধিনায়ক লে.কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ আরও বলেন, গ্রেপ্তার আবুল কালাম চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করেছেন। ২০০৪ সালে ফ্রি ভিসায় দুবাই গিয়ে দর্জি হিসেবে কাজ শুরু করেন তিনি। 

মালিকের সঙ্গে মনোমালিন্য হওয়ায় ২০১১ সালে তিনি দেশে ফিরে আসেন। এরপর এলাকায় দর্জি ব্যবসা করার চেষ্টা করে সফল না হওয়ায় ২০১৯ সাল থেকে অবৈধভাবে জনশক্তি রপ্তানি ও প্রতারণা শুরু করেন।

তিনি প্রথমে পাসপোর্ট ও প্রাথমিক খরচ বাবদ ৫০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা করে নেন ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে। এরপর ভিসা, টিকেট, মেডিক্যাল, বিএমইটি ক্লিয়ারেন্স ইত্যাদির খরচ দেখিয়ে ধাপে ধাপে ভিকটিমদের কাছ থেকে টাকা আদায় করেন।

আস্থা অর্জনের জন্য দুই একজনকে ভ্রমণ ভিসায় দুবাই পাঠান তিনি। 
সংশ্লিষ্ট জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিসে ফিঙ্গার প্রিন্ট দিয়ে নিবন্ধন করতে বলা হয় বিদেশ গমনেচ্ছুদের। তবে এটা বিএমইটি কার্ড পাওয়ার কোনো নিশ্চয়তা বহন করে না। কিন্তু অজ্ঞতার কারণে ওই নিবন্ধনকেই বিএমইটি ক্লিয়ারেন্স প্রাপ্তির চূড়ান্ত ধাপ হিসেবে মনে করেন অনেকে। এরপর বিদেশ গমনেচ্ছুদের হাতে ভুয়া ভিসা ও নকল বিএমইটি কার্ড ধরিয়ে দিয়ে ফ্লাইটের জন্য আবার টাকা দাবি করা হয়। এভাবে প্রতারণার মাধ্যমে বিপুল অর্থ উপার্জন করেন আবুল কালাম।

এমন প্রতারণা কেন বন্ধ করা যাচ্ছে না- এমন প্রশ্নের জবাবে র‍্যাব-৩ এর অধিনায়ক বলেন, এটি একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়া। যারা বিদেশ যেতে চান তাদের সচেতন হতে হবে। জনশক্তি রপ্তানির সরকারি লাইসেন্সপ্রাপ্ত এজেন্ট ছাড়া অন্য কোনো মাধ্যমে শ্রমিক হিসেবে বিদেশ যাওয়া বন্ধ করতে হবে। সহজ উপায়ে বিদেশ যাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। আর যারা মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে বিদেশে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করে তাদের বিরুদ্ধে আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে তথ্য দিতে হবে।

জেইউ/এনএফ