সমুদ্র সম্পদ কাজে লাগাতে পৃথক মন্ত্রণালয় চান প্রতিমন্ত্রী
প্রতিবেশি রাষ্ট্র ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশ সমুদ্রসীমা বিরোধ নিষ্পত্তি করেছে ২০১৪ সালে। বাংলাদেশের সমুদ্রসীমা অঞ্চল থেকে গ্যাস ও তেল আহরণসহ ব্যাপক অর্থনৈতিক সুবিধা পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু আন্তঃমন্ত্রণালয় যোগাযোগ ও সমন্বয়ের অভাবে এই সম্ভাবনাকে কাজে লাগানো যাচ্ছে না। সমুদ্র সম্পদ বা সমুদ্র অর্থনীতিকে কাজে লাগাতে এ খাত নিয়ে পৃথক মন্ত্রণালয় বা পৃথক মন্ত্রণালয়ের আওতায় পৃথক বিভাগ প্রতিষ্ঠা করা প্রয়োজন।
বৃহস্পতিবার (২১ জুলাই ) বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের (বিআইআইএসএস) আয়োজনে ‘ইকোনমি অ্যান্ড মেরিটাইম সিকিউরিটি: বাংলাদেশ পারসপেকটিভ’ শীর্ষক হাইব্রিড সেমিনারে বক্তারা এমন কথা বলেন।
বিজ্ঞাপন
সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম বলেন, ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে সমুদ্রসীমা বিরোধ নিষ্পত্তির পর এ খাতের শিপিং, উপকূলীয় শিপিং, সমুদ্রবন্দর, উপকূলীয় পর্যটন, সাগরের জ্বালানি, সামুদ্রিক মাছ আহরণ, সামুদ্রিক লবণসহ একাধিক বিষয়ের সুফল অর্থনীতিতে যোগ হওয়ার সম্ভাবনা আছে। এ বিবেচনায় সরকার সুনীল অর্থনীতিতে অগ্রাধিকার দিয়ে ডেল্টা প্লান ২১০০ এর পরিকল্পনায় এ খাতকে প্রাধান্য দিয়ে তা বাস্তবায়নের পরিকল্পনা নিয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে দ্রুত সামুদ্রিক সম্পদ বিষয়ে সার্ভে করা, সামুদ্রিক জাহাজের সংখ্যা বাড়ানো এবং সমুদ্র বন্দরগুলোর সক্ষমতা বাড়ানো, সামুদ্রিক মাছ আহরণ বাড়ানো, ইকো ট্যুরিজম চালু করা এবং বেসরকারি খাতের সহায়তা নিয়ে সি ক্রুজ চালু করা, উপকূলীয় ও সমুদ্রবন্দর এলাকা দূষণমুক্ত রাখা।
তিনি আরও বলেন, অষ্টম পঞ্চবার্ষিকীতে পরিকল্পনাতেও সুনীল অর্থনীতির সুফল পেতে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে ও একাধিক পরিকল্পনা বাস্তবায়নের কথা বলা হয়েছে। সুনীল অর্থনীতিকে কাজে লাগাতে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনা বাস্তবায়নের রূপরেখা ঠিক করা হয়েছে। এ খাতের জ্ঞান বাড়ানোর জন্যও অনেক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। সুনীল অর্থনীতির ব্যপ্তি এত বড় যে এটা সরকারের একাধিক মন্ত্রণালয়কে দেখভাল করতে হয়। যে কারণে এ বিষয়ে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সঠিক জ্ঞানের যেমন অভাব রয়েছে ঠিক তেমনি এই ইস্যুতে ঠিকভাবে আন্তঃমন্ত্রণালয় যোগাযোগ বা সমন্বয় করা যাচ্ছে না। তাই সুনীল অর্থনীতির শতভাগ সুফল পেতে হলে এ বিষয়ে একটি পৃথক মন্ত্রণালয় বা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের আওতায় পৃথক বিভাগ হতে পারে।
বিজ্ঞাপন
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব (মেরিটাইম) ও সাবেক নৌ কর্মকর্তা খুরশিদ আলম বলেন, সমুদ্র নিয়ে আমাদের মধ্যে জ্ঞান বা জানাশোনা খুবই সীমিত। অথচ সমুদ্র অর্থনীতি থেকে আমরা বিশাল লাভবান হতে পারি। সমুদ্র অর্থনীতির যথাযথ ব্যবহার জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার ১৪ নম্বর ধারা পূরণ করে। সমুদ্র যোগাযোগ হচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে কম খরচের যোগাযোগ পথ। সারাবিশ্বে সামুদ্রিক যোগাযোগের জন্য ১৫০ হাজার জাহাজ চলাচল করে। আমরাও সামুদ্রিক জাহাজ থেকে সুফল পেতে পারি। এজন্য বেসরকারি খাতকে এগিয়ে আসতে হবে। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশের মাত্র ২২টি সামুদ্রিক জাহাজ রয়েছে, এ সংখ্যা বাড়ানো প্রয়োজন। আমাদের সমুদ্র অঞ্চলে তেল-গ্যাসসহ প্রচুর সামুদ্রিক সম্পর্ক রয়েছে। কিন্তু যথাযথ জ্ঞান ও বিনিয়োগের অভাবে বাংলাদেশ সেই সুফল ঘরে তুলতে পারছে না।
বিআইআইএসএস’র চেয়ারম্যান কাজী ইমতিয়াজ হোসেন বলেন, সমুদ্র সম্পদ আমাদের জন্য বিশাল অর্থনৈতিক শক্তির ভাণ্ডার। বৈশ্বিক বাণিজ্যের ৯০ শতাংশ সমুদ্রপথে সম্পন্ন হয়। সমুদ্র পথে সারাবিশ্বে যে বাণিজ্য হয় তার অর্থনৈতিক ভ্যালুজ হচ্ছে ২ দশমিক ৫ ট্রিলিয়ন ডলার, যা আগামী ২০২৩ সালে ৩ ট্রিলিয়ন ডলারে উন্নীত হবে। বাংলাদেশ যদি ঠিকমত কাজে লাগাতে পারে তবে বিশাল সমুদ্র অর্থনীতি অপেক্ষা করছে। কিন্তু তার আগে আমাদের বিস্তারিত পরিকল্পনা করে এগুতে হবে, আমরা কী চাই, কতটুকু করার সক্ষমতা আছে। অষ্টম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় বলা হয়েছে, সমুদ্র অর্থনীতি থেকে বাংলাদেশ জিডিপিতে ৩ শতাংশ যোগ করবে। যেখানে এ খাত থেকে থাইল্যান্ড তাদের জিডিপিতে ৩০ শতাংশ, মালয়েশিয়া ২৩ শতাংশ এবং ইন্দোনেশিয়া ২৮ শতাংশ যোগ করছে।
এনআই/আইএসএইচ