অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ খতিয়ে দেখতে যেকোনো কারাগারে প্রবেশের আগে আদালতের অনুমতি নিতে হবে-  এমন নির্দেশনায় দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অনুসন্ধান ও তদন্ত কাজে প্রভাব পড়বে না বলে জানিয়েছেন সংস্থাটির সচিব মো. মাহবুব হোসেন। রোববার (২৪ জুলাই) এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা জানান।

এক প্রশ্নের জবাবে দুদক সচিব বলেন, সরকারি প্রতিটি বিভাগের নিজস্ব বিধিবিধান রয়েছে। আর দুদকের আইনে নিজস্ব ক্ষমতা রয়েছে। আপনারা যে চিঠির কথা বলছেন, আমার ধারণা, এর মাধ্যমে দুদকের ক্ষমতা খর্ব করা হয়নি। তারপরও আমরা বিচার-বিশ্লেষণ করে বিষয়টি দেখব এবং পরবর্তী পদক্ষেপ নেব। এ নির্দেশনায় দুদকের অনুসন্ধান ও তদন্ত কাজে প্রভাব পড়বে না

দুদক সচিব আরও জানান, দুদকের নামে চাঁদাবাজি, ঘুষ দাবিসহ নানা অনিয়ম করছে প্রতারক চক্র। তাদের ধরতে সারাদেশে গোয়েন্দা জাল বিছানো হয়েছে। এমন কোনো তথ্য পেলে দুদককে জানানোর অনুরোধ করা হয়েছে।  

নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ খতিয়ে দেখতে কারা অভ্যন্তরে প্রবেশ করে দুদকের বিভিন্ন টিম। কিন্তু এখন থেকে অভিযানে যেতে হলে সংশ্লিষ্ট জেলা আদালতের লিখিত অনুমতি নিতে হবে। এ ছাড়াও বেশ কিছু নির্দেশনা জারি করা হয়েছে বলে জানা গেছে। 

গত ১২ জুলাই কারা মহাপরিদর্শক (আইজি, প্রিজন) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ এস এম আনিসুল হক সই করা চিঠি দেশের কারা অধিদপ্তরসহ সব জেলা প্রশাসক ও কারা কর্তৃপক্ষকে পাঠানো হয়েছে বলে জানা গেছে। এ চিঠির বিষয়- ‘দুর্নীতি দমন কমিশনের টিম কারাভ্যন্তরে প্রবেশ প্রসঙ্গে’।

>>আরও পড়ুন : কারাগারে তাৎক্ষণিক অভিযানের ক্ষমতা হারাল দুদক

এতে বলা হয়েছে, কারাগার একটি স্পর্শকাতর ও সংবেদনশীল প্রতিষ্ঠান, যা কারাবিধি ও সরকার কর্তৃক জারি করা অন্যান্য বিধি-বিধান দ্বারা পরিচালিত হয়। কারাবিধি মোতাবেক যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ব্যতিত কোনো ব্যক্তির কারাগারে প্রবেশের কোনো সুযোগ নেই। কারাগারগুলোতে অনেক সময় কোনরূপ পূর্বানুমোদন/সমন্বয় ছাড়া তদন্তের উদ্দেশ্যে দুদকের বিভিন্ন টিম আগমন এবং প্রবেশ করে।

এ বিষয়ে সুরক্ষা সেবা বিভাগ, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিবের সঙ্গে দুদক সচিবের টেলিফোনিক আলোচনা হয়। সামগ্রিক বিষয় পর্যালোচনা করে কারাগারের স্পর্শকাতরতার বিষয়টিকে বিবেচনায় নিয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। 

এখন থেকে দুদকের এনফোর্সমেন্ট ইউনিট বা অন্য যে কোনো টিম কারাগারে কোনো তদন্তের জন্য গেলে কতগুলো প্রমাণপত্র আবশ্যিকভাবে প্রদর্শন করতে হবে বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে। প্রমাণপত্রের মধ্যে রয়েছে- দুদক টিম যে জেলার কারাগারে যাবে, সেই জেলার জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের লিখিত অনুমতিপত্র; সংশ্লিষ্ট কারাগারের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট অভিযোগের কপি; আগত টিমকে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া সংক্রান্ত যথাযথ কর্তৃপক্ষের আদেশ এবং আগমনকারী কর্মকর্তার পরিচয়পত্র। 

দুদক সূত্রে জানা গেছে, কারাগারে মোবাইল ফোন ব্যবহারসহ বন্দিদের অবৈধ সুবিধা দেওয়া, বন্দিদের সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য স্বজনদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা আদায়, অসুস্থ না হয়েও অনেক বন্দির হাসপাতালে ভর্তি থাকা, কারা ক্যান্টিনে খাবারের দাম বেশি রাখা, বন্দিদের নিম্নমানের খাবার সরবরাহসহ বিভিন্ন ধরনের অভিযোগ আসে দুদকে। এ ধরনের অভিযোগের ভিত্তিতে দুদক বিভিন্ন কারাগারে তাৎক্ষণিক অনেক অভিযান চালিয়েছে। অনেক সময় অনিয়মের সত্যতাও মিলেছে।

আরএম/আরএইচ