নির্বাচন কমিশনের হাতে থাকা ৭০টির মতো ইভিএম আগুনে পুড়ে নষ্ট হয়েছে। আর বিভিন্ন স্থান থেকে চুরি হয়েছে ৫০টি ইভিএম। সব মিলিয়ে ১২০টির মতো ইভিএম হারিয়েছে কমিশন। এ তথ্য জানিয়েছেন ইভিএম-এর প্রকল্প পরিচালক সৈয়দ রাকিবুল হাসান।

মঙ্গলবার (২ আগস্ট) রাজধানীর নির্বাচন ভবনে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে এ নিয়ে কথা বলেন রাকিবুল হাসান। 

তিনি বলেন, কয়েকদিন আগে গোপালগঞ্জের কাশিয়ানীতে কিছু ইভিএম নষ্ট হয়েছে। যেখানে রাখা হয়েছিল, সেই গোডাউনে আগুন লেগে যায়। নিয়ন্ত্রণে আনতে গিয়ে ফায়ার বিগ্রেড পানি দেয়। যেহেতু এটা ইলেকট্রনিক মেশিন, আর পানি দিয়ে আগুন নেভানোর ব্যবস্থা করা হয়। ফলে ইভিএম নষ্ট হয়ে যায়। সেখানে ২০০ ইভিএম রাখা হয়েছিল। তার মধ্যে ৫০-৭০টির মতো নষ্ট হয়েছে।

পিডি বলেন, এছাড়া ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবায় চুরির ঘটনা ঘটে। উপজেলা অডিটোরিয়ামের স্টোর রুমে ইভিএম রাখা হয়েছিল। সেখান থেকে মনিটর চুরি হয়। এর বাইরেও ঝিনাইদহ বয়েজ স্কুলে রাখা ছিল কিছু ইভিএম। সেখানে প্রাথমিকের বই রাখা ছিল, বই চুরি হয়। সঙ্গে মনিটর চুরি হয়ে যায়। সব মিলিয়ে ৫০টির মতো ইভিএম চুরি হয়েছে বলে জানান তিনি।  

তিনি আরও বলেন, এ ব্যাপারে নির্বাচনী কর্মকর্তারা থানায় মামলা করেছেন। পরবর্তী নির্দেশনা সচিবালয় থেকে থানাকে দেওয়া হয়েছে।

ইভিএম চুরির কারণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, স্টোরেজ বা ওয়্যার হাউজ না থাকায় বিভিন্ন জায়গায় রাখা হচ্ছে। এর প্রপার সিকিউরিটি বলতে যা বোঝায় সে ধরনের সিকিউরিটি আসলে কোথাও নাই। ফলে এগুলো ঘটছে। 

পরিকল্পনা অনুযায়ী, বিভিন্ন জায়গায় ২ হাজার ৫০০টি করে ইভিএম সেট রাখার চিন্তা ছিল কমিশনের। নির্বাচন কমিশনের কাছে এক লাখ ৫০ হাজারের মতো ইভিএম রয়েছে। দেশের বিভিন্ন জায়গায় ৯৩ হাজার ইভিএম রাখা হয়েছে। যেখানে যখন নির্বাচন হয় সেখান থেকে পাঠানো হয়। ইভিএম প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরিতে (বিএমটিএফ) প্রায় ৫৫ হাজার ইভিএম সংরক্ষিত রয়েছে। 

চুরি ও নষ্ট হওয়া ঠেকাতে কী ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া যায় এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সঠিক গুদাম থাকতে হবে। প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান যেভাবে রাখছে ওখানে কোনো সমস্যা হয় নাই। পাঁচ বছর ধরে তারা রাখছে। চার্জ দিয়ে স্ট্যান্ডার্ড বজায় রেখে যদি ১০টা গুদাম করা যায় তাহলে সেটা নিরাপদে রাখা সম্ভব। না হলে এটা সম্পূর্ণ নিরাপত্তা দিয়ে রাখা সম্ভব না। বাসা-বাড়িতে রেখে এটা সম্ভব না।

নির্বাচন কমিশন এ বিষয়ে উদ্বিগ্ন জানিয়ে তিনি বলেন, কমিশন জানে। তারা সাধ্যমতো চেষ্টা করছে এটাকে ভালোভাবে রাখার। ৩০টি জেলায় বাসা-বাড়িতে রাখা হচ্ছে। এসব জেলায় ঝুঁকি নিয়েই রাখা হচ্ছে বলে জানান তিনি। 

ইভিএম মেশিন প্রস্তুত করে বিএমটিএফ। গত একাদশ সংসদ নির্বাচনে বিদায়ী নূরুল হুদা কমিশন মাত্র ৬টি সংসদীয় আসনে ইভিএম ব্যবহার করে। তবে বিএমটিএফের কাছে থেকে ২ লাখ ৫ হাজার টাকা করে এক লাখ ৫০ হাজার ইভিএম মেশিন কিনে ওই কমিশন। এসব মেশিন কমিশনের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সংরক্ষণ করতে গিতে বেগ পোহাতে হচ্ছে সাংবিধানিক এ প্রতিষ্ঠানটিকে। এদিকে বর্তমানে ইসির কাছে যে যন্ত্র আছে তা দিয়ে শতাধিক আসনেও ভোট করা সম্ভব হবে না। তাই শতাধিক আসনে ভোট করতে গেলেও ইসিকে আরও ইভিএম মেশিন কিনতে হবে।

এসআর/ওএফ