জন্মসনদ দিতে গড়িমসি বা হয়রানি করলে জনপ্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।

সম্প্রতি ইসি সচিব মো. হুমায়ুন কবীর খোন্দকার স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক একেএম হুমায়ুন কবীরকে নির্দেশনা দিয়েছেন। 

চিঠিতে বলা হয়েছে, তথ্য সংগ্রহ হালনাগাদ কার্যক্রমে কোনো জনপ্রতিনিধি আবেদনকারীর জন্ম নিবন্ধন সনদ ইস্যু না করলে বা হয়রানি করলে সংশ্লিষ্ট জনপ্রতিনিধির তথ্য এনআইডির মহাপরিচালককে লিখিতভাবে জানাতে হবে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট জনপ্রতিনিধির বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য স্থানীয় সরকার বিভাগ বরাবর পত্র প্রেরণ করতে হবে। এছাড়া সকল আঞ্চলিক কর্মকর্তাকে এ নিয়ে ব্যাপক প্রচার চালানোরও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

>> নির্ভুল জাতীয় পরিচয়পত্র পেতে যা করবেন

সম্প্রতি ইসির মাসিক সমন্বয় সভায় আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তারা জন্মসনদ পাওয়ার বিষয়ে জনপ্রতিনিধিদের হয়রানির কথা বলেন। যার ফলে চলমান ভোটার তালিকা হালনাগাদে এই সমস্যা আরও প্রকট হয়েছে। এ ক্ষেত্রে ভোটার তালিকা হালনাগাদের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ না হওয়ার শঙ্কাও প্রকাশ করছেন কর্মকর্তারা। কোনো কোনো আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা বলেছেন, তার এলাকায় কোনো সমস্যা নেই। আবারো কোনো আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা জানিয়েছেন সেখানে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা জন্ম সনদ দিতে গড়িমসি করেন, অনেকেই দেন না।

ইসি সচিব মো. হুমায়ুন কবীর খোন্দকার স্বাক্ষরিত ওই সভার কার্যবিবরণীতে বলা হয়েছে, বরিশালের আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা জানান, অনলাইন জন্ম নিবন্ধন সনদ প্রাপ্যতায় সমস্যা হওয়ায় ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। রংপুরের আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা জানান, প্রথম পর্যায়ে ভোটার তালিকা হালনাগাদকরণ কার্যক্রমে অনলাইন জন্ম সনদ পেতে সমস্যা হলেও স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধির সঙ্গে সভা করে বর্তমানে তা সমাধান করা হয়েছে। ঢাকার আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা জানান যে, সাভার ও গাজীপুর এলাকার জনপ্রতিনিধিরা অনলাইন জন্ম নিবন্ধন দিতে অপারগতা প্রকাশ করায় ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রম বিঘ্নিত হচ্ছে। কোনো কোনো উপজেলায় প্রাক্কলিত ভোটারের তুলনায় ভোটার হওয়ার হার অনেক কম হচ্ছে। এসব বিষয় উঠে আসায় সংশ্লিষ্ট জনপ্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সিদ্ধান্ত হয়েছে।

>> এনআইডি সংশোধন কার্যক্রম সন্তোষজনক নয় : ডিজি

ইসি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ভোটার তালিকা প্রণয়ন আইন অনুযায়ী, ফরম-২ এ জন্ম সনদ নম্বর দিতে হয়। এ ক্ষেত্রে অবশ্যিকভাবে একজন নাগরিকের জন্ম নিবন্ধন সনদ প্রয়োজন। কিন্তু ভোটার হতে ইচ্ছুক অনেককেই নানাভাবে ঘোরানো হয়। শিক্ষা সনদ, বাড়ি ভাড়ার রশিদসহ অন্যান্য কাগজপত্র থাকার পরও ভোগান্তিতে পড়েন অনেকে। এ অবস্থায় ভুক্তভোগীরা জন্ম সনদ ছাড়াই ভোটার হাওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট উপজেলা বা থানা নির্বাচন কার্যালয়ে যান। কিন্তু সুযোগ না থাকায় ইসির মাঠ কর্মকর্তারাও অপারগতা জানান। আইনে জন্ম সনদের উল্লেখ থাকায়, সেটা ছাড়া তারা কাউকে ভোটার করে নিতে পারেন না।

এবার হালনাগাদে ভোটার বৃদ্ধির হার ধরা হয়েছে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ অর্থাৎ ৮৪ লাখ ৯৬ হাজার ৫২৬ জনকে অন্তর্ভুক্ত করার লক্ষ্য নিয়ে কার্যক্রম হাতে নিয়েছে সংস্থাটি। গতবারের মতো এবারও তিন বছরের তথ্য একসঙ্গে নেওয়া হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে ২০০৭ সালের ১ জানুয়ারি বা তার পূর্বে যারা জন্মগ্রহণ করেছেন, তাদের তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। এর মধ্যে যাদের বয়স যখন ১৮ বছর পূর্ণ হবে, তখন তারা স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভোটার তালিকায় যুক্ত হবেন।

আগামী ২০ নভেম্বরের মধ্যে হালনাগাদের কাজ সম্পন্ন করার লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে এগুচ্ছে নির্বাচন কমিশন। ২০০৭-২০০৮ সালে ছবিযুক্ত ভোটার তালিকা প্রণয়নের পর এ পর্যন্ত ভোটার তালিকা হালনাগাদ করা হয়েছে পাঁচবার। ২০০৯-২০১০ সাল, ২০১২-২০১৩ সাল, ২০১৫-২০১৬ সাল, ২০১৭-২০১৮ সাল ও ২০১৯-২০২০ সালে বাড়ি বাড়ি গিয়ে হালনাগাদ কার্যক্রম পরিচালনা করেছে ইসি। বর্তমানে ভোট আয়োজনকারী কর্তৃপক্ষটির তথ্য ভাণ্ডারে মোট ১১ কোটি ৩২ লাখ ৮৭ হাজার ১০ জনের তথ্য রয়েছে। এদের মধ্যে পুরুষ ভোটার ৫ কোটি ৭৬ লাখ ৮৯ হাজার ৫২৯ ও মহিলা ভোটার ৫ কোটি ৫৫ লাখ ৯৭ হাজার ২৭ জন। তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার আছে ৪৫৪ জন।

এসআর/ওএফ