জ্বালানি সনদ অন্যায্য দাবি করে ৩৬ দফা সংস্কার প্রস্তাব করেছে কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)। ক্যাব গ্যাস খাত সংস্কারে ২৫ দফা ও বিদ্যুৎখাত সংস্কারে ১১ দফা প্রস্তাব করেছে।

বৃহস্পতিবার (৪ আগস্ট) বেলা ১১টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া মিলনায়তনে কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) আয়োজিত প্রস্তাবিত জ্বালানি রূপান্তর নীতি বাস্তবায়নে জ্বালানি সনদ চুক্তির ভূমিকা শীর্ষক সংলাপে এ প্রস্তাবগুলো উত্থাপন করা হয়।

জ্বালানি অধিকার সুরক্ষায় অসাধু ব্যবসায় প্রতিরোধের লক্ষ্যে ক্যাবের ২৫ দফা গ্যাস খাত সংস্কার প্রস্তাবগুলো হলো:

মূল্যবৃদ্ধি ব্যতীত গ্যাস সরবরাহের নানা পর্যায়ের অযৌক্তিক ব্যয়বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করে ঘাটতি সমন্বয় করা , বিদ্যমান ভর্তুকি ১০ হাজার ৭৯২ কোটি টাকা ও উদ্বৃত্ত রাজস্ব ২ হাজার ৫৩৭.৯১ কোটি টাকা এলএনজি আমদানি পর্যায়ে সমন্বয় করে গ্যাসের মূল্যহার ৯ দশমিক ৫৩ টাকা নির্ধারণ করা। অর্থাৎ বিদ্যমান মূল্যহার অপেক্ষা গ্যাসের মূল্যহার ০ দশমিক ১৭ টাকা কমানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। তিতাসের বিতরণ চার্জ নির্ধারণে ২ শতাংশ সিস্টেম লস সমন্বয়ের প্রস্তাবে ক্যাবের আপত্তি, তিতাসকে ঝুঁকিমুক্ত বিনিয়োগকৃত মূলধনের ওপর ১০ শতাংশ মুনাফা দেওয়াতেও ক্যাবের আপত্তি।

তাদের প্রস্তাবে আরও বলা হয়েছে, পেট্রোবাংলা ও জ্বালানি বিভাগের নিয়ন্ত্রণমুক্ত করে বিইআরসির নিয়ন্ত্রণে পক্ষসমূহের প্রতিনিধি সমন্বয়ে গঠিত কমিটি দ্বারা ‘গ্যাস উন্নয়ন তহবিল’ পরিচালনা করা, বিইআরসি অনুমোদিত কৌশলগত পরিকল্পনা ব্যতীত অর্থাৎ বিইআরসির আদেশ ও আইন লঙ্ঘন করে এক্তিয়ার বহির্ভূতভাবে ‘গ্যাস উন্নয়ন তহবিল’-এর অর্থ ব্যয়ের দায়ে পেট্রোবাংলার বিরুদ্ধে বিইআরসি আইনের ৪২, ৪৩ ও ৪৬ ধারামতে ব্যবস্থা নেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে।

গ্যাস উন্নয়ন তহবিলের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য অর্জনে ক্যাবের প্রস্তাবে বলা হয়েছে, পেট্রোবাংলা ও জ্বালানি বিভাগ উভয়ের বিরুদ্ধেই আনিত অদক্ষতা ও ব্যর্থতার অভিযোগ তদন্তের জন্য ভোক্তা পক্ষের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে একটি কারিগরি কমিটি গঠন করা, রি-গ্যাসিফিকেশন চার্জ নির্ধারণে ঋণ বা বিনিয়োগকৃত মূলধনের ওপর মুনাফা ১৮ শতাংশের পরিবর্তে ৭ শতাংশ, এলএনজি ক্রয়, নবায়নযোগ্য জ্বালানি উন্নয়ন এবং সঞ্চালন ও বিতরণ ক্ষমতা উন্নয়নে গৃহীত বিইআরসি অনুমোদিত প্রকল্পসমূহে বিনিয়োগকারীর ‘ইকুইটি বিনিয়োগ’ হিসেবে বিনিয়োগ করা, গ্যাস খাতে সুশাসন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সুপারিশ প্রণয়নের জন্য পক্ষসমূহের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কমিশন গঠন করা।

বিদ্যুৎখাত সংস্কারে ক্যাবের ১১ দফা প্রস্তাব:

সরকারি কোম্পানিসমূহের অযৌক্তিক ও লুণ্ঠনমূলক পুঞ্জীভূত মুনাফা এবং ক্যাপাসিটি চার্জের অর্থে ও ক্যাবের প্রস্তাব মতে সাশ্রয়ী উদ্বৃত্ত অর্থে সরকারি ভর্তুকি সমন্বয় করে ক্যাব ৩ হাজার ৩২৪ কোটি টাকা সরকারি ভর্তুকি নির্ধারণ করার প্রস্তাব করেছে, অবৈধভাবে নির্ধারিত ডিজেল ও ফার্নেস অয়েলের বর্ধিত মূল্য এবং কুইক রেন্টালের বিদ্যুৎ অবৈধভাবে ক্রয়কৃত মূল্য বিইআরসি কর্তৃক পুনর্মূল্যায়নক্রমে নির্ধারিত যৌক্তিক বর্ধিত মূল্য ও পুনর্নির্ধারিত মূল্য পিডিবির পরিবর্তে সরকারি ভর্তুকি দ্বারা পরিশোধের করা, পিডিবির রাজস্ব চাহিদায় মুনাফা ও করপোরেট ট্যাক্স অন্তর্ভুক্তির ব্যাপারে বিইআরসির কারিগরি কমিটির (টিসি) প্রস্তাবে ক্যাবের আপত্তি রয়েছে। 

সরকারি, যৌথ ও ব্যক্তি মালিকানাধীন প্ল্যান্টসমূহে বিদ্যুৎ উৎপাদনে সংশ্লিষ্ট ব্যয়সমূহে অন্যায় ও অযৌক্তিক ব্যয় উল্লেখ করে ক্যাব দাবি জানিয়েছে, নওপাজেপাকোর খুলনা ডিজেল বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং যৌথ মালিকানাধীন পায়রা কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ক্ষেত্রে বিশেষভাবে প্রযোজ্য, নবায়নযোগ্য জ্বালানি (আরই) উন্নয়নে বিদ্যুৎ ও জ্বালানির বাজার আরই-এর জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড হতে হবে, বিদ্যুৎ খাতে সুশাসন, দক্ষতা ও সক্ষমতা উন্নয়ন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে পিডিবি ও বিইআরসির কাছে তাদের জবাবদিহি নিশ্চিত করতে প্রস্তাব করা হয়েছে।

সংলাপে ক্যাবের সিনিয়র সহ-সভাপতি অধ্যাপক এম শামসুল আলমের সভাপতিত্বে স্বাগত বক্তব্য রাখেন ক্যাবের সভাপতি গোলাম রহমান এবং প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ তানজীমউদ্দিন খান।
 
আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন ক্যাব সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির, ক্যাবের কোষাধ্যক্ষ ড. মনজুর ই খোদা, প্রকৌশলী শুভ কিবরিয়াসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আগত এনজিও সংগঠনের প্রতিনিধিরা।

আইবি/আইএসএইচ