চট্টগ্রামের ডবলমুরিং এলাকায় মুদি দোকানদার শাহাদাত হোসেন খুনের ঘটনায় মো. আদনান জিসান নামে একজনকে আনোয়ারা থেকে গ্রেপ্তার করেছে চট্টগ্রাম মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (বন্দর ও পশ্চিম)। ডিবি পুলিশ বলছে, গত দুই মাস ধরে শাহাদাত আসামি  জিসানকে বলাৎকার করে। 

শনিবার (৬ আগস্ট) চট্টগ্রামের মুনসুরাবাদ নিজ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান চট্টগ্রাম মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার (বন্দর ও পশ্চিম) মুহাম্মদ আলী হোসেন। 

তিনি বলেন, গত ১ আগস্ট চট্টগ্রামের ডবলমুরিং থানার দাইয়াপাড়া এলাকায় একটি টয়লেট থেকে মুদি দোকানদার শাহাদাত হোসেনের রক্তাক্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এরপর এই ঘটনায় ডবলমুরিং থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন নিহতের বাবা। এরপরই হত্যাকাণ্ডের প্রকৃত রহস্য উদঘাটনে এবং আসামিদের গ্রেপ্তারে কাজ শুরু করে ডিবি পুলিশ। 

পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, হত্যাকাণ্ডের কোনো ক্লু না থাকায় মহানগর গোয়েন্দা (বন্দর ও পশ্চিম) বিভাগের স্পেশাল টিম চুলচেরা বিশ্লেষণ ও ঘটনার রহস্য উদঘাটনে কাজ করতে থাকে। এরই ধারাবাহিকতায় আশপাশের সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা, এলাকার নাইট গার্ডসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার লোকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেও ঘটনার বিষয়ে কোনো তথ্য পাওয়া যাচ্ছিল না। ঘটনাস্থল এবং আশপাশের নানামুখি তথ্য সংগ্রহের পাশাপাশি চলতে থাকে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার।

একপর্যায়ে ভিকটিমের মোবাইলের কল লিস্ট পর্যালোচনা করে জিসানকে শনাক্ত করা হয়। এরপর শুক্রবার (৫ আগস্ট) রাতে  চট্টগ্রামের আনোয়ারা থানার তেকোটা এলাকা থেকে আসামি মো. আদনান জিসানকে গ্রেপ্তার করা হয়। এসময় ভিকটিমের চুরি যাওয়া মোবাইলটি উদ্ধার করা হয়। এরপর তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ঘটনাস্থলের পাশের একটি ঝোঁপ থেকে খুনের ঘটনায় ব্যবহৃত ছুরিটি উদ্ধার করা হয়েছে।  

ঘটনার বর্ণনা করে পুলিশ কর্মকর্তা আলী হোসেন বলেন, ডবলমুরিং এলাকায় একা থাকতেন শাহাদাত। তার মুদি দোকানে গিয়ে  কেনাকাটার সূত্রে গত ৪-৫ মাস আগে শাহাদাতের সঙ্গে আসামি জিসানের পরিচয় হয়। পরিচয়ের একপর্যায়ে তাদের মধ্যে সুসম্পর্ক গড়ে ওঠে। একদিন জিসানের বর্তমান বাসায় ফিরতে বেশি রাত হলে গেট বন্ধ হয়ে যায়। নিজ বাসায় ঢুকতে না পারায় জিসান শাহাদাত হোসেনের দোকানে গিয়ে তার বাসায় রাত্রীযাপন করতে চাইলে ভিকটিম মো. শাহাদাত হোসেন আসামি আদনান জিসানকে তার বাসায় নিয়ে যায়। এরপর ভিকটিম মো. শাহাদাত হোসেন তার শয়ন কক্ষে জিসানকে বলাৎকারের চেষ্টা করেন। জিসান রাজি না হলে ভিকটিম শাহাদাত আসামিকে চুরির দায়ে মামলা করে কারাগারে পাঠাবেন বলে ভয় দেখায়। এরপর ভিকটিম মো. শাহাদাত হোসেন জিসানকে বলাৎকার করে। 

তিনি বলেন, ভিকটিম শাহাদতের স্ত্রী তার সঙ্গে বসবাস না করায় মাঝে মধ্যেই আসামি জিসানকে তার বাসায় নিয়ে এবং দোকানের পেছনের ঘটনাস্থলে নিয়েও বলাৎকার করত।

এরপর জিসান ভিকটিমের নির্যাতনে অতিষ্ট হয়ে ক্রাইম পেট্রোল দেখে তাকে হত্যার পরিকল্পনা করে এবং চট্টগ্রামের নিউমার্কেট এলাকা থেকে ৪০০ টাকা দিয়ে একটি টিপ ছুরি ক্রয় করে। শাহাদাতকে খুন করার জন্য এই ছোরা নিজের সঙ্গেই রাখে।

সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, খুন হওয়ার ২ দিন আগে অর্থাৎ ২৮ জুলাই রাতে ভিকটিম মো. শাহাদাত হোসেন আসামি আদনান  জিসানকে দোকানের পেছনে নিয়ে বলৎকার করে। তখন আসামি জিসানের ভিকটিমকে হত্যার পরিকল্পনা ও প্রস্তুতি থাকলেও সাহস করতে না পারায় হত্যা করতে করেনি। 

একপর্যায়ে আসামি জিসানকে বলাৎকারের বিষয়টি শাহাদাতের নেশায় পরিণত হয়। এরপর ৩১ জুলাই দিনগত রাত দেড়টার দিকে জিসান আবার দোকানে নিজ থেকে ফোন করে আসে। তখন শাহাদাত দোকান বন্ধ করে জিসানকে দোকানের পেছনে বাথরুমে নিয়ে যায়। কেউ যেন না দেখে সেজন্য আলো বন্ধ করে দেয়। ভিকটিম আসামিকে বলাৎকার করার জন্য উদ্দত হলে আসামি জিসান পকেট থেকে ছোরা বের করে ভিকটিমের পেটে ৩ বার, রানে ও হাতে একবার করে ছুরিকাঘাত করে। ভিকটিম শাহাদাত চিৎকার করে উঠলে আসামি ভিকটিমের গলা চেপে ধরে। শাহাদাতের মৃত্যু নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত আসামি জিসান ঘটনাস্থলে ৭-৮ মিনিট অবস্থান করে। পরে সে তার বোন জামাইয়ের বাড়িতে পালিয়ে যায়। 

জিসান আগে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করলেও বর্তমানে কিছু করে না বলেও জানান উপ-পুলিশ কমিশনার মুহাম্মদ আলী হোসেন।

কেএম/জেডএস