বাংলাদেশের সফল উদ্যোক্তা ও আমচাষি সোহেল রানা / ফাইল ছবি

জাল ভিসার অভিযোগ এনে বাংলাদেশের সফল উদ্যোক্তা ও আমচাষি সোহেল রানাকে আটকে দিল কাতার এয়ারওয়েজ। অথচ পাসপোর্ট ও ভিসা যাচাই-বাছাই শেষে বাংলাদেশের ইমিগ্রেশন তাকে যাওয়ার অনুমতি দিয়েছিল।

ভিসা নম্বরের শেষ দুই ডিজিট অস্পষ্ট থাকায় গতকাল শুক্রবার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে তাকে ফেরত পাঠানো হয়। সোহেল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স ও মাস্টার্স শেষ করে কৃষি কাজে যুক্ত হন। এ খাতে বেশ সফলতাও দেখান তিনি। 

২০২১ সালে সফল কৃষি উদ্যোক্তা হিসেবে তাকে জাতীয় যুব পুরস্কার দেন রাষ্ট্রপতি। গত দুই বছর ধরে তিনি আন্তর্জাতিক মানদণ্ড মেনে আম উৎপাদন করে আসছেন। তার উৎপাদিত আম ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যে রপ্তানি হচ্ছে। দেশে আসছে বৈদেশিক মুদ্রা। বাংলাদেশের পক্ষে রাষ্ট্রীয় উপহারের আমগুলো তার কাছ থেকেই কেনা হয়। এর স্বীকৃতি হিসেবে নেদারল্যান্ডসে আন্তর্জাতিক হর্টিকালচার মেলায় আমন্ত্রণ পেয়েছিলেন সোহেল। তবে শেষ মুহূর্তে তাকে যেতে দেয়নি কাতার এয়ারওয়েজ। ভুয়া ভিসার অভিযোগ তুলে তাকে অফলোড করা হয়। ইমিগ্রেশন পুলিশের কাছে তার বিরুদ্ধে জিডিও করা হয়।

আরও পড়ুন >> সোহেলের আম্রপালি যাচ্ছে ইংল্যান্ডে

সোহেল রানা ঢাকা পোস্টকে বলেন, নেদারল্যান্ডস যাবার জন্য আমাকে কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে জিও এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে এলওআই দেওয়া হয়। আমি নিজে ভিসার জন্য আবেদন করে সেনজেন ভিসা পাই। যথাসময়ে নিজে উপস্থিত থেকে ভিসা সংগ্রহ করি। মেলায় নিজ বাগানের লেট ভ্যারাইটির কিছু আমের স্যাম্পল নিয়ে যাচ্ছিলাম বিদেশি বায়ারদের জন্য। আম রপ্তানি বাড়াতে অনেকের সঙ্গে বিজনেস মিটিং ছিল। আমার বাগানে এখনও এক মাস লেট ভ্যারাইটির আমগুলো রয়েছে।

আমচাষি সোহেল রানার সঙ্গে খারাপ ব্যবহারও করে কাতার এয়ারওয়েজ / ফাইল ছবি 

‘নতুন নতুন জাত দিয়ে আম রপ্তানি সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো সম্ভব। এতে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা যেত। এমন সম্ভাবনা কাজে লাগানোর জন্য এক্সোতে যাওয়া ছিল আমার অন্যতম উদ্দেশ্য।’

তিনি বলেন, কাতার এয়ারওয়েজে ৫ তারিখে (অক্টোবর) ঢাকা-আমস্টারডাম টিকিট করি। নির্ধারিত দিনে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ১নং টার্মিনালে প্রবেশ করি। বোর্ডিং পাস দেওয়া শুরু হলে পাসপোর্ট, টিকিট, ভ্যাকসিন কার্ডসহ প্রয়োজনীয় কাগজ দেখিয়ে বোর্ডিং পাস সংগ্রহ করি এবং লাগেজ জমা দিয়ে ইমিগ্রেশনে যাই। ইমিগ্রেশনে পাসপোর্ট, বোর্ডিং পাস, জিও কপিসহ সব ডকুমেন্ট জমা দিয়ে ইমিগ্রেশন সম্পন্ন করি।’ 

আরও পড়ুন >> হাঁড়িভাঙা আমে ১৫০ কোটি টাকার ব্যবসার আশা

‘এরপর বিমানে ওঠার জন্য ৫নং গেটে অপেক্ষা করতে থাকি। নির্দিষ্ট সময়ে লাইনে দাঁড়িয়ে গেট পার হবার সময় কাতার এয়ারওয়েজের দায়িত্বরত স্টাফ আমার পাসপোর্ট দেখে ভিসা জালিয়াতির অভিযোগ তোলেন। তিনি পাসপোর্ট, বোর্ডিং পাস রেখে দিয়ে পাশে দাঁড়াতে বলেন। আমি তাকে জিও কপি, এলওআই, রাষ্ট্রপতির কাছ থেকে জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্তির কথা বলি। আরও বলি, আমি নিজ হাতে ভিসা-পাসপোর্ট সংগ্রহ করেছি, এখানে জালিয়াতির কোনো সুযোগ নাই। এরপর তিনি শত শত যাত্রীর সামনে আমার সঙ্গে খারাপ আচরণ করেন। আমি দ্রুত ইমিগ্রেশন পুলিশের কাছে গিয়ে ঘটনা খুলে বলি। ইমিগ্রেশন কর্মকর্তা এসআই দেলোয়ার আমাকে নিয়ে ৫নং গেটে গিয়ে কাতার এয়ারের কর্মকর্তার কাছ থেকে পাসপোর্টসহ আমার যাবতীয় ডকুমেন্ট সংগ্রহ করেন। সেগুলো বিমানবন্দরের ভিসা বিশেষজ্ঞ টিমের মাধ্যমে পুনরায় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ভিসা সঠিক বলে মত দেন। বিমান ছাড়ার আগে এসআই দেলোয়ার আমাকে সঙ্গে নিয়ে ৫নং গেটে কাতার এয়ারের স্টাফের কাছে ভিসা সঠিক বলে জানান। আমার বিমানে যাত্রার জন্য তিনি আন্তরিকভাবে অনুরোধ করেন।’

সোহেলের বাগানে উৎপাদিত আম ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যে রপ্তানি হচ্ছে / ছবি- ঢাকা পোস্ট

‘এসআই দেলোয়ার কাতার এয়ারের ওই কর্মকর্তাকে রাষ্ট্রীয় জিও, এলওআই, জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্তি, গণমাধ্যমে নানা প্রতিবেদনসহ সব ডকুমেন্ট দেখান। এসব দেখেও তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে কাতার এয়ার আমার বিমানযাত্রা নাকচ করে বিমানবন্দর ইমিগ্রেশন ইনচার্জ বরাবর প্যাসেঞ্জার অফলোডের জন্য আবেদন করেন। এর মধ্যে আমার ফ্লাইট ফ্লাই করে চলে যায়। কাতার এয়ারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে একটি জিডির মাধ্যমে আমার পাসপোর্টে ইমিগ্রেশন সিল বাতিল করা হয়।’

আরও পড়ুন >> ভারতের রাষ্ট্রপতি-প্রধানমন্ত্রীকে শেখ হাসিনার আম উপহার

হতাশ সোহেল রানা বলেন, কাতার এয়ারওয়েজের এমন জঘন্য ও নিন্দনীয় কাজের জন্য আমি তীব্র প্রতিবাদ জানাই। বিমানে ওঠার আগে যাত্রা বাতিল করে কাতার এয়ারওয়েজ আমার সম্মানহানির পাশাপাশি বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতি এবং ইউরোপের অনেক বায়ারদের সঙ্গে পূর্বনির্ধারিত মিটিং বাতিল হয়েছে। যা আম রপ্তানি রিলেটেড ছিল। ভিসা জালিয়াতির অভিযোগ করায় আমার রাষ্ট্রীয় সুনাম ক্ষুণ্ন হয়েছে। আমি কাতার এয়ারওয়েজের নিকট ক্ষতিপূরণসহ এমন ন্যক্কারজনক ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাই। এ বিষয়ে আমি আইনগত ব্যবস্থা নিব। পাশাপাশি নেদারল্যান্ডস অ্যাম্বাসির কাছে অভিযোগ করব।

এ বিষয়ে কাতার এয়ারওয়েজের অবস্থান জানতে তাদের বাংলাদেশের জনসংযোগ বিভাগে ফোন করা হলে তা বন্ধ পাওয়া যায়। শনিবার তাদের কল সেন্টারেও ফোন দেওয়া হয়। কিন্তু কেউ ফোন ধরেননি।

এআর/এমএআর/