জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধিতে বেড়ে গেছে বাস ভাড়া। প্রায় সব রুটেই বেশি ভাড়া দিয়ে টিকিট কিনতে হচ্ছে যাত্রীদের। এখনও দাম বৃদ্ধির তালিকা টানানো হয়নি বাস কাউন্টারগুলোতে। এতে ইচ্ছেমতো ভাড়া নিচ্ছে কোম্পানিগুলো। 

রোববার (০৭ আগস্ট) সকালে রাজধানীর সায়েদাবাদের বাস কাউন্টারগুলো ঘুরে দেখা গেছে একেক কাউন্টারে টিকিটের দাম একেক রকম। প্রতি টিকিটে ২০০ টাকা পর্যন্ত বেশি নেওয়া হচ্ছে। অনেক যাত্রী আবার বাস ভাড়া বৃদ্ধির খবর জানতেন না, এজন্য তারা পড়েছেন বিপাকে।

শ্যামলী কাউন্টারে গিয়ে দেখা যায়, ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম নন-এসি বাসের টিকিটের দাম রাখা হচ্ছে ৬৫০ টাকা। আগে এই টিকিটের দাম ছিল ৫৮০ টাকা। এসি বাসের টিকিটের দাম ছিল ৮০০ টাকা, আজ সেটি নেওয়া হচ্ছে ৯০০ টাকা।

এই বাসে ঢাকা থেকে কক্সবাজার নন-এসি বাসের ভাড়া ছিল ৯০০ টাকা,  আজ নেওয়া হচ্ছে ১০০০ টাকা। এসি বাসের ভাড়া ছিল ১২০০ টাকা, আজ নেওয়া হচ্ছে ১৩০০ টাকা।

ঢাকা থেকে সিলেট নন-এসি বাসের ভাড়া ছিল ৫৭০ টাকা, আজ সকাল থেকে নেওয়া হচ্ছে ৬৫০ টাকা। এসি বাসের ভাড়া ছিল ৭০০ টাকা, আজ সকাল থেকে নেওয়া হচ্ছে ৮০০ টাকা।

আরও পড়ুন : জ্বলছে জ্বালানি তেল 

শ্যামলী কাউন্টারের টিকিট বিক্রেতা সোহরাব মিয়া ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা সকাল থেকে ৬০-৭০ টাকা বাড়িয়ে নিচ্ছি। এখনও সরকারি তালিকা পাইনি। সরকারি তালিকা পেলে এই ভাড়া আরও বাড়তে পারে।

হানিফ এন্টারপ্রাইজে গিয়ে দেখা যায়, ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম নন-এসি বাসের ৫৮০ টাকার টিকিট বিক্রি হচ্ছে ৭০০ টাকা।কক্সবাজারের ৯০০ টাকার টিকিট ১০০০ টাকা এবং সিলেটের ৫৭০ টাকার টিকিট নেওয়া হচ্ছে ৭০০ টাকা।

কাউন্টারের টিকিট বিক্রেতা নজরুল ইসলাম বলেন, একেক বাসে একেক ভাড়া। সরকারিভাবে এখনও ভাড়ার চার্ট করা হয়নি। সেটি হয়ে গেলে সবার কাছে চার্ট চলে যাবে, আমরাও সে অনুযায়ী ভাড়া নেব।

ইউনিক বাসে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামের ভাড়া ১২০ টাকা বাড়িয়ে নেওয়া হচ্ছে ৭০০ টাকা। সিলেটের ভাড়া ১১০ টাকা বাড়িয়ে ৬৮০ টাকা নেওয়া হচ্ছে। তবে কক্সবাজারে আগের মতোই ৯০০ টাকা ভাড়া নেওয়া হচ্ছে।

ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম যাওয়ার জন্য রোববার সকালে ইউনিক পরিহনের সায়েদাবাদ কাউন্টারে আসেন কলেজ শিক্ষার্থী ইসমাইল হোসেন। তেলের দাম বাড়ায় ভাড়া বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে জানা ছিল না তার। 

ইসমাইল ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি জানতাম আগের ভাড়াই আছে, কিন্তু কাউন্টারে এসে দেখি ৫৮০ টাকার ভাড়া ১২০ টাকা বাড়িয়ে ৭০০ টাকা করা হয়েছে। বাড়ি যেহেতু যেতেই হবে, অগত্যা বেশি দাম দিয়ে টিকিট কাটতেই হলো। 

তিনি বলেন, এর আগে এক দফা তেলের দাম বাড়িয়ে ৪৮০ টাকার ভাড়া ৫৮০ টাকা করা হয়েছিল। এবার আবার দাম বাড়ানো হলো। মধ্যবিত্তদের কষ্ট হলেও নিম্ন আয়ের মানুষদের ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম যাওয়ায় নাভিশ্বাস উঠবে।

আরও পড়ুন : গণপরিবহন কি জনভোগান্তির অপর নাম?

সেন্ট মার্টিন ট্রাভেলসে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম এসি বাসের টিকিটের দাম ৭৫০ টাকা ছিল, আজকে ১৫০ টাকা বাড়িয়ে ৯০০ টাকা নেওয়া হচ্ছে। কক্সবাজারের ভাড়া ছিল ১২০০ টাকা, ২০০ টাকা বাড়িয়ে আজ নেওয়া হচ্ছে ১৪০০ টাকা। আর বরিশালের এসি বাসের ভাড়া ৬৫০ টাকা থেকে ১০০ টাকা বাড়িয়ে ৭৫০ টাকা করা হয়েছে।

এস আলম পরিবহনে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামের নন-এসি বাসের টিকিট ১০০ টাকা বাড়িয়ে ৬৮০ টাকা আর কক্সবাজারের এসি বাসের ৯০০ টাকার টিকিটের দাম আজকে ১০০০ টাকা।

ঢাকা থেকে নোয়াখালীগামী বাসে সবচেয়ে বেশি ভাড়া বাড়িয়েছে ইকোনো সার্ভিস। কাউন্টারে গিয়ে জানা যায়, ঢাকা থেকে নোয়াখালীর ভাড়া আগে ছিল ৪৫০ টাকা, আজ ২০০ টাকা ভাড়া বাড়িয়ে নেওয়া হচ্ছে ৬৫০ টাকা। 

কেন এত টাকা বাড়ানো হলো, জানতে চাইলে ইকোনো বাস কাউন্টারের টিকিট বিক্রেতা শরীফুল ইসলাম জানান, তেলের দাম বাড়ছে। সকাল থেকে যাত্রী কম, ভাড়া না বাড়ালে তেলের পয়সাও উঠবে না।

নোয়াখালীগামী একুশে এক্সপ্রেসে ৫০ টাকা বাড়িয়ে ভাড়া নেওয়া হচ্ছে ৫০০ টাকা। 

ড্রিম লাইনে ঢাকা থেকে বসুরহাট (নোয়াখালী) নন-এসি বাসের ভাড়া ছিল ৩৬০ টাকা। আজকে ৯০ টাকা বাড়িয়ে করা হয়েছে ৪৫০ টাকা। এসি বাসের ভাড়া ছিল ৩৮০ টাকা, ১০০ টাকা বাড়িয়ে আজ তারা বিক্রি করছেন ৪৮০ টাকায়। 

একই রুটের হিমাচল এক্সপ্রেসে নন-এসি বাসের ভাড়া আজ ৫০০ টাকা আর এসি ৫৫০ টাকা।

হিমাচল এক্সপ্রেসের টিকিট বিক্রেতা জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, সকাল থেকে ৪০ সিটের গাড়িতে ২০ জন যাত্রীও হচ্ছে না। তেলের দাম বেড়েছে। বাড়তি দাম না নিয়ে কী করব, বলেন?

ঢাকা থেকে ফেনী রুটে চলাচলকারী স্টার লাইন পরিবহনের নন-এসি বাসের ভাড়া ছিল ৩২০ টাকা। রোববার সকাল থেকে ৮০ টাকা বাড়িয়ে ৪০০ টাকা নেওয়া হচ্ছে। এসি বাসের ভাড়া ছিল ৩৭০ টাকা, আজ ১০০ টাকা বাড়িয়ে তা ৪৫০ টাকা করা হয়েছে।

আরও পড়ুন : যত দুর্ভোগ, তত ক্ষমতা! 

টিকিট বিক্রেতা নিজামুক হক বলেন, গতকাল যে দাম বাড়ানো হয়েছে, তার সঙ্গে সমন্বয় করে দাম নির্ধারণ করেছে মালিকপক্ষ। এরপর আমাদের দাম জানানো হয়েছে। সরকারিভাবে দাম নির্ধারণের পর আরেকটা চার্ট আসবে।

স্টার লাইন কাউন্টারে টিকিট নিতে আসা শরিফুল ইসলাম নামে ফেনীর এক যাত্রী অযোক্তিক ভাবে দাম বাড়ানোর অভিযোগ করেন বলেন, ‘ঢাকা থেকে ফেনীর দূরত্ব ১৬০ কিলোমিটারের একটু বেশি। সরকার নির্ধারিত নতুন ভাড়া ২ টাকা ২০ পয়সা করে হিসাব করলে ৩৫০ টাকার একটু বেশি আসার কথা। কিন্তু বাস্তবে নেওয়া হচ্ছে অনেক বেশি। সরকারের এ বিষয়গুলো শক্তহাতে মনিটরিং করা উচিত।’

স্টার লাইন পরিবহন লিমিটেডের পরিচালক মাইন উদ্দিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, ঢাকা থেকে ফেনীর ভাড়া পুনর্নির্ধারণ করা হয়েছে। আমরা নন-এসি ৩৮০ টাকা, আর এসি ৪৩০ টাকা ভাড়া নিচ্ছি।

তবে ব্যতিক্রম সৌদিয়া পরিবহন। তারা এখনও ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম নন-এসি বাসের টিকিট ৫৮০ টাকাতেই বিক্রি করছেন।

জানতে চাইলে টিকিট বিক্রেতা সৈকত হক বলেন, মালিকপক্ষ আগের দামেই বিক্রি করতে বলেছে। সেজন্য আমরা আগের দামেই টিকিট বিক্রয় করছি। তারা দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত দিলে তখন থেকে নতুন দাম কার্যকর হবে।

শনিবার বিকেলে বিআরটিএ এবং বাস মালিকদের বৈঠকের পর ভাড়া বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়। বিআরটিএর সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, দূরপাল্লার বাসে প্রতি কিলোমিটারের জন্য যাত্রীপ্রতি ভাড়া ৪০ পয়সা বাড়িয়ে ২ টাকা ২০ পয়সা নির্ধারণ করা হয়েছে। আর মহানগরে প্রতি কিলোমিটারের জন্য ৩৫ পয়সা বাড়িয়ে ২ টাকা ৫০ পয়সা ঠিক করা হয়েছে। এ ছাড়া বাসে সর্বনিম্ন ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ১০ টাকা আর মিনিবাসে ৮ টাকা।

এএজে/এসএম