ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারের বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা ৩৫ বছর করার দাবি জানিয়েছে ‘চাকরিপ্রত্যাশী যুব প্রজন্ম’।

রোববার (৭ আগস্ট) সকালে রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) এক সংবাদ সম্মেলনে এই দাবি জানায় সংগঠনের নেতারা।

লিখিত বক্তব্যে সমন্বয়ক সাজিদ সেতু বলেন, দেশের উচ্চশিক্ষিত যুবসমাজ বিগত এক যুগ ধরে সরকারি চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা ৩০ থেকে বৃদ্ধি করে ৩৫ বছরে উন্নীতকরণের গঠনমূলক ও যৌক্তিক দাবি জানিয়ে আসছে। করোনার আঘাতে সকল বয়সী শিক্ষার্থীরা ২ বছরের অধিক সময় হারানোর পর বর্তমান যুব প্রজন্ম সাংবিধানিক অধিকার ‘সুযোগের সমতা’ বঞ্চিত হয়ে আবারও চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা ৩৫ বছরে উন্নীতকরণের দাবি জানিয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিকট। চাকরিপ্রত্যাশী যুব প্রজন্ম এখন অবধি এমন কোনো আন্দোলন সংগ্রাম বা কর্মসূচিতে যায়নি যাতে রাষ্ট্র ও সরকারকে বিব্রত হতে হয় বা জনজীবনে সমস্যার সৃষ্টি হয়।

তিনি বলেন, ২০১৮ সালের আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা বৃদ্ধির অঙ্গীকার উল্লেখ করা হয়। আওয়ামী লীগ সরকারের বর্তমান মেয়াদ শেষে আরও একটি নির্বাচনের সামনে। এর মধ্যে উক্ত ওয়াদা বাস্তবায়ন করেনি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শের রাজনীতি করা এই দলটি। 

২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচন পূর্ববর্তী সময়ে দৈনিক ইত্তেফাকে প্রকাশিত সংবাদে দলীয় সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের স্টেটমেন্ট দিয়েছিলেন কয়েক মাসের মধ্যেই চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা ৩৫ বছরে উন্নীত করা হবে। পরে মিডিয়াতে একই অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন ছাত্রলীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক গোলাম রব্বানী। করোনায় ২ বছরের অধিক সময় কেড়ে নেওয়ার পর বয়সসীমা হারিয়ে ফেলা চাকরিপ্রত্যাশী উচ্চশিক্ষিত বেকারের সংখ্যা বর্তমানে দাঁড়িয়েছে ৫ লক্ষাধিক। নিত্যনৈমিত্তিক আত্মহত্যার ঘটনা ঘটছে দেশজুড়ে।

তিনি বলেন, জাতীয় সংসদে এখন অবধি ৭১ বার বয়সসীমা বৃদ্ধির দাবিটি উত্থাপিত হয়েছে যার সাম্প্রতিক উদাহরণ জাতীয় পার্টির সাংসদ শামীম হায়দার পাটোয়ারীর বক্তব্য। সরকারি চাকরিতে আবেদনের বয়য়সীমা ২৭ থেকে ৩০ বছরে উন্নীত হয় এখন থেকে ৩১ বছর আগে ১৯৯১ সালে, সেটাও অন্য সরকারের আমলে। তখন গড় আয়ু ছিল ৫৭ বছর, আর এখন ৭৩। বিশ্বের ১৬২টি দেশে আমাদের চেয়ে চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা অধিক। 

সাজিদ সেতু বলেন, দেশের জাতীয় যুবনীতিতে যুবকের সংজ্ঞায় ১৮ থেকে ৩৫ বছর বয়স বলা হচ্ছে। আবার এখানে ৩০ বছরে আটকে দেওয়া হচ্ছে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করার সুযোগ। অথচ জনপ্রশাসনের সংসদীয় স্ট্যান্ডিং কমিটি লিখিতভাবে বয়সসীমা ৩৫ অনুমোদনের জন্য সুপারিশ করেছে। শুধুমাত্র বিসিএস কোয়ালিফাই করার বয়সের তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণ করে বয়সসীমার ৩১ বছরের অচলায়তন চলমান। আবার জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের চেয়ে ন্যূনতম তিনটি বিসিএস পরীক্ষায় কম আবেদন করতে পারেন।

বক্তারা বলেন, আজকের কর্মসূচির অংশ হিসেবে দুপুর ৩টায় শাহবাগ প্রজন্ম চত্বরে জনসমাবেশের আয়োজন করা হয়েছে। যেখানে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করতে ঢাবি, রাবি, জবি, জাবি, চবি, ইবি, বাকৃবি এবং সাত কলেজসহ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন প্রায় কয়েক শতাধিক শিক্ষার্থী শান্তিপূর্ণভাবে সমবেত হবে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সারা দেশজুড়ে বিষয়টি গণদাবী হিসেবে উচ্চারিত হচ্ছে। সুশীল সমাজ ও বুদ্ধিজীবী শ্রেণীর অসংখ্য প্রতিনিধি ৩৫ এর স্বপক্ষে তাদের মতামত তুলে ধরেছেন। অসংখ্য যুবকের কথা ভেবে সরকার এটি বাস্তবায়ন করবে, এটাই প্রত্যাশা।

চাকরিপ্রত্যাশী যুব প্রজন্মের পক্ষে এ সময় উপস্থিত ছিলেন মো. তানভীর হোসেন, সানিয়া সুমি, আসিফ হাসান, সাজিদ সেতু, রবিউল বনি, রাজ্জাক হাবিব, জহিরুল জনি, আনোয়ার জনি, কামরুল হাসান, কিশোর সাহা, মর্তুজা হাসান, মাহফুজ সনেট, পিন্টু সরকার, সঞ্জয় সরকার, আব্দুল দ, আহসানুল বাবু, ফারহা জুবায়ের, শাওন সোমা, রেজোয়ানা সুলতানা, মইনুল হোসেন, সোহেল শেখ প্রমুখ।

আইবি/ওএফ