পুরান ঢাকার চকবাজারের কামালবাগ এলাকায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের শিকার ভবনটি গ্যাস-বিদ্যুৎ সংযোগ কীভাবে পেয়েছে, এমন প্রশ্ন রেখেছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস।

তিনি বলেছেন, আমরা তো বাণিজ্যিক অনুমোদন বন্ধ রেখেছি, তাহলে অন্য সংস্থাগুলো কোনো ধরনের যাচাই-বাছাই না করে কীভাবে এই ভবনে গ্যাস-বিদ্যুতের সংযোগ দিলো?

বুধবার (১৭ আগস্ট) দুপুরে পুরান ঢাকার চকবাজারের কামালবাগ এলাকায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাস্থল পরিদর্শনে এসে তিনি এ প্রশ্ন রাখেন।

মেয়র বলেন, যেই ভবনের কোনো বৈধতা নেই, কোনো বাণিজ্যিক অনুমোদন নেই, যেই প্রতিষ্ঠানের ব্যবসায়িক অনুমোদন আমরা দেইনি, সেই প্রতিষ্ঠান কীভাবে গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংযোগ পেল, তাই এখন প্রশ্ন।

এই বিষয়ে সব সংস্থাকে একসঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করতে হবে। নয়তো এমন দুর্ঘটনা বারবার ঘটতেই থাকবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

তাপস বলেন, আমরা জানি পুরো ঢাকা শহরেই অনেকেই অবৈধভাবে বিভিন্ন সংযোগ নিয়ে থাকেন। এটাও খতিয়ে দেখলে দেখা যাবে যে কোনো না কোনোভাবে অবৈধপন্থা অবলম্বন করে এই গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংযোগ তারা নিয়েছে। এগুলোর প্রতি আমাদের সব সংস্থারই সুদৃষ্টি দেওয়া উচিত। যেন এরকম দুর্ঘটনা রোধ করতে পারি আমরা। মাঠ পর্যায়ে যথাযথ পদক্ষেপের মাধ্যমে সবকিছু যাচাই বাছাই না করেই যদি এমনভাবে সংযোগ দেওয়া হয়, বৈধতা দেওয়া হয় তাহলে প্রতি বছরই দেখছি এমন দুঃখজনক ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটছে। 

শুধু নিমতলী বা চুড়িহাট্টা নয়, প্রতিবছরই দেখছি এমন ঘটনা ঘটছে। এর একমাত্র কারণ ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় এসব ঝুঁকিপূর্ণ কারখানা, গুদাম পরিচালিত হওয়া। এগুলো সবকিছু স্থানান্তর না হওয়া পর্যন্ত আমাদের এরকম দুর্ঘটনা ঘটতেই থাকবে। তাই এগুলোকে স্থানান্তর করতে হবে। সবার মধ্যে উপলব্ধি বোধ সৃষ্টি হতে হবে। আর এভাবে যদি অবৈধভাবে বেআইনি এসব গুদাম কারখানা কার্যক্রম চলতেই থাকে তাহলে এমন দুর্ঘটনা আমরা বন্ধ করতে পারব না, বলেন ডিএসসিসি মেয়র।

তিনি বলেন, আইন কঠিনভাবে পরিপালন করতে হবে আমাদের। নয়তো এরকম দুঃখজনক মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটবে। ঝুঁকিপূর্ণ এসব গুদাম-কারখানা চিহ্নিত করার জন্য আমাদের একটি কমিটি আছে সেই কমিটি প্রতিবেদন জমা দেবে। সে অনুযায়ী আমরা ব্যবস্থা নেব। প্রতিবেদন আমরা মন্ত্রণালয়ে জমা দেব। সেখানে নেওয়া সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আমাদের সমন্বয়ের মাধ্যমে এই কাজ করা হবে। এসব এলাকার কারখানা-গুদামে মানুষ ঝুঁকি নিয়ে তাদের ব্যবসা পরিচালনা করছে। ফলে বারবার এমন দুর্ভাগ্যজনক দুর্ঘটনা ঘটছে। ঘনবসতিপূর্ণ এই এলাকায় এসব রাসায়নিক কারখানা, গুদাম, বিভিন্ন ধরনের ফ্যাক্টরির কারণে এই এলাকায় যানজট যেমন বেশি থাকে, তেমনি অত্যন্ত ঝুঁকির মধ্যে থাকে সবাই। এমন অবস্থা থেকেই বারবার অগ্নিকাণ্ডসহ বিভিন্ন দুর্ঘটনা ঘটে চলেছে। তাই সবশেষ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী শ্যামপুরে এসব রাসায়নিক গুদাম, কারখানগুলো স্থানান্তর করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। যে অনুযায়ী আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে সেখানে অন্তত ৫০০ কারখানা, গুদাম স্থানান্তর করা হবে।

গত ১৫ আগস্ট (সোমবার) দুপুর ১২টার দিকে চকবাজারে পলিথিন কারখানায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। পরে দুপুর ২টা ২০ মিনিটের দিকে ফায়ার সার্ভিসের ১০টি ইউনিটের চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। এ ঘটনায় ছয়জনের মরদেহ উদ্ধারের কথা জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস। অন্যদিকে অগ্নিকাণ্ডের তদন্ত করতে পাঁচ সদস্যদের কমিটি গঠন করেছে ফায়ার সার্ভিস।

এএসএস/জেডএস