দৈনিক মজুরি ৩০০ টাকা করার দাবিতে আন্দোলন করছেন চা শ্রমিকরা। তাদের মজুরি নির্ধারণে প্রায় ৫ ঘণ্টার মতো ত্রিপক্ষীয় বৈঠকের পরও কোনো সমঝোতা হয়নি। ফলে চলমান ধর্মঘটও প্রত্যাহার করেননি শ্রমিকরা।  

বুধবার (১৭ আগস্ট) রাজধানীর বিজয়নগরে শ্রম ভবনে চা-বাগান মালিক ও শ্রমিক নেতাদের সঙ্গে শ্রম অধিদপ্তরের মহাপরিচালক খালেদ মামুন চৌধুরীর এই বৈঠক হয়। সন্ধ্যায় ৬টার দিকে শুরু হওয়া বৈঠক শেষ হয় রাত পৌনে ১১টায়।

ত্রিপক্ষীয় বৈঠক শেষে শ্রম অধিদপ্তরের মহাপরিচালক খালেদ মামুন চৌধুরী সাংবাদিকদের জানান, আজও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয় নাই যে শ্রমিকরা ধর্মঘট প্রত্যাহার করবেন কি না। শ্রমিক নেতারা একদিন সময় চেয়েছেন। তারা শ্রীমঙ্গল চলে যাবেন। সেখানে স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে আলাপ করে আমাদেরকে কালকের মধ্যে জানাবেন।

তিনি বলেন, আমরা যে আলোচনা করেছি তা অব্যাহত থাকবে। আলোচনা এখনও শেষ হয়নি। প্রয়োজনে আমরা পরশুদিন আরেকটা মিটিং করব। সেই সিদ্ধান্ত আপাতত হয়েছে। একই সঙ্গে ২৩ তারিখ যে ত্রিপক্ষীয় বৈঠক হওয়ার কথা আছে তা বহাল আছে।

আরও পড়ুন : ৩০০ টাকা মজু‌রি‌র দা‌বি না মানলে আন্দোলন চলবে

খালেদ মামুন চৌধুরী বলেন, আমরা মোটামুটি একটা সিদ্ধান্তে এসেছি। তবে সেটা শ্রমিকপক্ষ জানানোর পর আমরা আপনাদেরকে জানাতে পারব। এছাড়া আমরা এ মুহূর্তে তা ঘোষণা করতে পারছি না।।

বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের নির্বাহী উপদেষ্টা রামভোজন কৈরি সাংবাদিকদের বলেন, আমরা যে বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে চাই, আমরা মনে করি যে, উনাদের (মালিকদের) প্রস্তাবটা নিতে পারছি না। কিন্তু উনাদের অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে আমরা বলেছি যে, ক্লিয়ার কিছু বলতে হলে যারা লড়াইয়ে আছে, মাঠে আছে, যারা দৈনিক আড়াই কোটি টাকা মজুরি ত্যাগ করে মাঠে লড়াই করে যাচ্ছে, তাদের সঙ্গে কথা বলতে হবে, তাদের সঙ্গে বুঝতে হবে। তারপরে আমরা আপনাদের বলতে পারব। সেজন্য একদিনের সময়ের বিষয়টা এসেছে।

তিনি বলেন, উনাদের (মালিকপক্ষের) যে প্রস্তাব আছে সেটা ৩শ টাকার কম। আমরা বলছি এটা আমরা মানতে পারব না। যার ফলে শ্রমিকদের এ আন্দোলন কর্মসূচি চলমান থাকবে।

বাংলা‌দেশ চা শ্র‌মিক ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নৃ‌পেন পাল ঢাকা পোস্ট‌কে ব‌লেন, আমাদের দাবি মজুরি ৩০০ টাকা। আজকে মালিকপক্ষ ১২০ টাকা থেকে ১৪০ টাকা মজুরি দিতে রাজি হয়েছে।  

বাংলাদেশ টি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শাহ আলম বলেন, আমাদের একটা অফার আছে তাদের কাছে। আমরা এখন কিছু বলতে পারব না। শ্রমিকনেতারা শ্রীমঙ্গল যাবেন। তারপর সিদ্ধান্ত জানাবেন। তারপরে বলব। 

তিনি বলেন, আমরা ইন্ডাস্ট্রি চালাতে চাই, শ্রমিকদের উন্নতি চাই। আমরা শান্তিপূর্ণভাবে একসঙ্গে বসবাস করতে চাই। উনাদের সঙ্গে আমাদের দীর্ঘদিনের উঠাবসা। আমরা বিপদে-আপদের একসঙ্গে চলি।

বাংলাদেশ টি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি বলেন, আজ যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে, তা দেশের স্বার্থে, শ্রমিকদের স্বার্থে এবং মালিকদের স্বার্থে সামাল দিতে হবে। আমাদের উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। আমরা অনুরোধ করেছি ধর্মঘট প্রত্যাহার করে কাজে যান। মজুরির বিষয়টা সমাধান করব আমরা। আমরা ৫০ বছর পেরেছি। তাহলে এখন কেন পারব না?

আরও পড়ুন : প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছেন চা-শ্রমিকরা

বৈঠকে আসা শ্র‌মিক নেতারা জানান, চা শ্রমিকদের সঙ্গে সর্বশেষ দ্বি-বার্ষিক চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়েছে ২০২০ সালের ডিসেম্বরে। এরপর চা শ্রমিক ইউনিয়নের নেতারা ২০২১ সালের ১৯ জানুয়ারি বাংলাদেশ চা সংসদের কাছে ২০ দফা দাবি নামায় ৩০০ টাকা দৈনিক মজুরি দাবি করেন। এ নিয়ে দফায় দফায় এ পর্যন্ত ১৩টি বৈঠক হয়েছে সমাধান দি‌তে পা‌রে‌নি। 

এ সময় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা ক‌রে চা শ্র‌মিকরা ব‌লেন, প্রধানমন্ত্রীর কা‌ছে আমা‌দের দা‌বি, তিনি আমাদের ন্যায্য মজু‌রি নির্ধারণ ক‌রে দে‌বেন। আপ‌নি যে সিদ্ধান্ত দেবেন আমরা তা মে‌নে নেব।

জানা গে‌ছে, গত ৯ আগস্ট থেকে চার দিন দুই ঘণ্টা করে কর্মবিরতির পর শনিবার পূর্ণদিবস কর্মবিরতি বা ধর্মঘট পালন করেছেন মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ ও সিলেটসহ দেশের ২৪১টি চা বাগানের শ্রমিকরা। রোববার সাপ্তাহিক ছুটি ও সোমবার জাতীয় শোক দিবসের জন্য দুদিন কর্মসূচি শিথিল করে চা শ্রমিক ইউনিয়ন। মঙ্গলবার থেকে ফের ধর্মঘটে যান শ্রমিকরা।

নিজেদের দাবি আদায়ে শ্রমিকরা শক্ত অবস্থানে থাকায় এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে চা বাগানগুলোতে। বন্ধ হয়ে গেছে দেশের সব চা বাগান ও কারখানার কার্যক্রম। এ সংকট কাটাতে উদ্যোগ নিয়েছে শ্রম অধিদপ্তর। গতকাল ‌মঙ্গলবার মৌলভীবাজারে শ্রম অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের সঙ্গে আলোচনা হ‌লেও কো‌নো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। আজ বুধবার সন্ধ্যায় রাজধানীতেই বৈঠকে বসেন শ্রমিক-মালিক-সরকার তিনপক্ষ। প্রায় পাঁচ ঘণ্টা বৈঠকে করেও কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেননি। ফলে ধর্মঘট অব্যাহত থাকবে বলে জানান শ্রমিক পক্ষ।

এসআই/আইএসএইচ