চলতি বছরের শেষ নাগাদ বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন শুরু করতে পারবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন। 

রোববার (২১ আগস্ট) রোহিঙ্গা ইস্যুতে জাতিসংঘ এবং এর অঙ্গসংগঠনের সঙ্গে হওয়া ভার্চুয়াল টাস্কফোর্স মিটিং শেষে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে এমন আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

পররাষ্ট্রসচিব বলেন, সভায় প্রেসিডেন্ট কোঅর্ডিনেটরসহ ইউএনএইচসিআর, উব্লিউএফপি, ইউনিসেফ, আইওএম প্রতিনিধিরা ছিলেন। মিটিং খুবই ফলপ্রসূ ছিল। আমরা আবার জোর দিয়েছি রোহিঙ্গাদের রাখাইনে যত দ্রুত সম্ভব ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখা।

রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন শুরু না করার ব্যাপারে বাংলাদেশ হতাশ কি না-এমন প্রশ্নের জবাবে মাসুদ বিন মোমেন বলেন, হতাশ হলে তো সবই শেষ। আমাদের তো চেষ্টা করতে হবে। চেষ্টা আমাদের স্বার্থে। রোহিঙ্গারা বাংলাদেশের জন্য বার্ডেন (বোঝা)। আমাদের আরও বেশি চেষ্টা করতে হবে, কারণ রোহিঙ্গারা যেন হতাশ না হয়ে পড়ে, সেই রিস্কগুলো মিনিমাইজ করা। সেই কারণে আমাদের চেষ্টা করতে হবে। আমরা এখনও আশাবাদী, বিফর দ্যা ইনড অব দ্যা ইয়ার হয়তো শুরু করতে পারব।

বৈঠকে আলোচনার বিষয়ে পররাষ্ট্রসচিব জানান, আজকে আমরা দুটি পলিসি ডকুমেন্ট অ্যাডপট করেছি। একটি হলো- ‘স্ট্রিম লাইনিং দ্যা এনগেজমেন্ট অব রোহিঙ্গা অ্যান্ড হোস্ট কমিউনিটি বলেনটিয়ান ইন ক্যাম্প অ্যাকটিভিটিস’। এই ডকুমেন্টের উপকারিতা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এর আগে এটা নিয়ে কোনো পলিসি ছিল না। অনেক গ্যাপ ছিল, কে কি করছে সেই তথ্য সবসময় আমাদের কাছে থাকত না। এই পলিসির মাধ্যমে আমরা আশা করছি, একটা কমন ডেটাবেজ হবে এবং এই ডেটাবেজের মাধ্যমে আমরাও জানতে পারব যে, কাকে কোথায় কীভাবে কাজে লাগানো হচ্ছে এবং কি ধরনের রেনুমেশন দেওয়া হচ্ছে।

দ্বিতীয়টি হলো- স্কিল ডেভলপমেন্ট। এটার ব্যাপারে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের অনেক আগ্রহ রয়েছে। স্কিল ডেভলপমেন্ট অ্যান্ড কেপাসিটিজ ফর রোহিঙ্গাস অ্যান্ড হোস্ট কমিউনিটিজ। এটার ওপর আমাদের স্টেক হোল্ডারদের নিয়ে অনেক মিটিং হওয়ার পর আজ ফাইনালাইজ হয়েছে। এর মাধ্যমে রোহিঙ্গারা বিভিন্ন ধরনের ট্রেনিং বা স্কিলড ডেভলপমেন্ট করা হবে। এগুলো তারা ফিরে গেলে রাখাইনে কাজে লাগবে।

কক্সবাজার থেকে ভাসানচরে স্থানান্তরিত রোহিঙ্গাদের খাবার সরবরাহে বিশ্ব খাদ্য সংস্থার কাছ থেকে আশ্বাস মিলেছে জানিয়ে পররাষ্ট্রসচিব বলেন, ভাসানচরে এরইমধ্যে প্রায় ৩০ হাজার রোহিঙ্গা গেছে। তবে ওখানে জাতিসংঘের যে ইনভলমেন্ট সেটা পুরোপুরি শুরু হয়নি। বিশেষ করে ওখানে খাদ্যের যে প্রবাহ সেটা আমাদের লোকাল এনজিওরা ব্যবস্থা করছে। আজকে আমরা আশ্বাস পেয়েছি, উব্লিউএফপি এটা ইমিডিয়েট শুরু করছে এবং আগামী ডিসেম্বর-জানুয়ারি পর্যন্ত খাদ্যের সংকট হবে না। 

মাসুদ বিন মোমেন জানান, বৈঠকে জাতিসংঘ সাইট রাখাইনে কি করছে সে তথ্য শেয়ার করেছে। রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন সহায়ক ইনভলমেন্ট তৈরির ক্ষেত্রে তারা জানিয়েছে, রাখাইনে যে গ্রামগুলো আছে সেখানে তারা বিভিন্ন ধরনের কর্মকাণ্ড করছে। সেখানে রোহিঙ্গাদের রাখা হয়েছে।

রোহিঙ্গাদের ফ্যামিলি প্ল্যানিংয়ের বিষয়ে ইউএনএফপিএ কাজ করবে জানিয়ে পররাষ্ট্রসচিব বলেন, প্রতি বছর যে ত্রিশ হাজার করে রোহিঙ্গা যুক্ত হচ্ছে, তাতে করে ওভারঅল পপুলেশন অনেক বেড়ে যাচ্ছে। বৈঠকে ইউএনএফপিএ ফ্যামিলি প্ল্যানিংয়ের বিষয়ে জোরদার করার কথা বলেছে। তারাও শিগগিরই কাজ শুরু করবে। দ্রুত যেন এটা অ্যাডপট করা যায় সে বিষয়ে আমরা বলেছি।  

রোহিঙ্গা শিশুদের পড়ালেখার বিষয়টি আলোচনায় এসেছে জানিয়ে মাসুদ বিন মোমেন বলেন, রোহিঙ্গা শিশুদের পড়ালেখার বিষয়টি আলোচনা করেছি। কেজি থেকে গ্রেড নাইন পর্যন্ত মিয়ানমারের কারিকুলাম ঠিক রেখে কীভাবে কাজ করা যায় সেটা শুরু হয়ে গেছে, আজ তারা ব্রিফ করল। আন্তর্জাতিক কমিউনিটির এটা নিয়ে বেশ আগ্রহ রয়েছে। 

কক্সবাজার রোহিঙ্গা ক্যাম্প এবং ভাসানচরে বিদ্যুৎ এবং ডিজেল সাশ্রয়ের প্রসঙ্গে মাসুস বিন মোমেন বলেন, ডিজেল এবং ইলেকট্রিসিটি ব্যবহারে আমাদের যে পলিসি আছে তার আলোকে যেন সাশ্রয় করা হয়, সেটি আলোচনা করেছি। ভাসানচরে ডিজেল চালিত জেনারেটর ব্যবহার করা হয়। সেটার পরিবর্তে আমরা যদি আরও বেশি পরিমাণে সোলার ব্যবহার করতে পারি সেটা নিয়ে ডেভলপমেন্ট পার্টনারদের সঙ্গে আলোচনা করেছি। 

আগামী ২৫ আগস্ট রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে আসার পাঁচ বছর পূর্ণ হচ্ছে। বৈঠকে এ প্রসঙ্গটি ছিল বলেও জানান পররাষ্ট্রসচিব। 

এনআই/জেডএস