ঢামেক হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের অপরিচ্ছন্ন ওয়ার্ডের একাংশ/ ছবি- ঢাকা পোস্ট

টেবিলে খাবার রাখার পর ঘিরে ধরে তেলাপোকা। বেসিন আর ওয়াশরুমে দুর্গন্ধ। ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের অপরিচ্ছন্ন ওয়ার্ডে এক রোগ সারাতে এসে আরেক রোগের কবলে পড়ার সম্ভাবনা অনেক। 

বৃহস্পতিবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) ঢামেকের ২১৭ নং ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা যায়, বেশির ভাগ রোগীর বেডের কাছেই খাবার টেবিল। টেবিলগুলোর কোনোটি রুটি-কলা, কোনোটিতে আপেল, কমলা, মালটা এবং আঙুরসহ বিভিন্ন ফল। এসবের মধ্যে বসে আছে তেলাপোকা।

খাবার টেবিলে তেলাপোকার রাজত্ব/ ছবি- ঢাকা পোস্ট

কুমিল্লার নাঙ্গলকোট থেকে প্লাস্টিক সার্জারির জন্য গত এক মাস ধরে অবস্থান করছেন প্রমিত কুমার। তিনি বলেন, কেবিনগুলোর টেবিলে কোনো কিছু রাখা যায় না। ৫ মিনিটির মধ্যে তেলাপোকা আক্রমণ করে। প্রথম দু-তিন দিন আমি ওয়ার্ডবয়দের বলেছি। তারা বলে আমরা কী করব, ক্লিনারদের বলেন।

প্রমিত কুমার বলেন, এরপর ডাক্তারদেরও বলেছি। ডাক্তাররা ওয়ার্ডবয়দের বলার পর স্প্রে করে যায়। স্প্রের গন্ধে কিছুক্ষণ তেলাপোকা থাকে না। কিন্তু আধা ঘণ্টাখানেকের মধ্যে যেই সেই। তাই এখন আর কিছু বলি না। হাসপাতালের কোনো খাবারও খাই না। আমার ছেলে-মেয়েরা খাবার নিয়ে আসে, সেগুলো খাই।

এই ওয়ার্ডটিতে প্রতি রোববার নতুন রোগী ভর্তি করানো হয়। গত রোববার ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা থেকে সার্জারি করাতে এসেছেন এনায়েত উল্লাহ। 

ঢাকা পোস্টকে তিনি বলেন, সোমবার দুপুরে আমি ঘুমে ছিলাম। টেবিলে খাবার রেখে যায় কর্মচারীরা। দুপুর দুইটার দিকে ঘুম থেকে উঠে দেখি ভাতের মধ্যে তেলাপোকা হাঁটছে। ক্ষুধা মেটাতে উপর থেকে ফেলে দিয়ে অল্প কিছু ভাত খেয়েছিলাম। এরপর শুরু হয় পেটের সমস্যা। এখনও ভালো হয়নি।

নোংরা ওয়াশরুমে নেই আলো/ ছবি- ঢাকা পোস্ট

ওয়ার্ডটির শেষ অংশে ওয়াশরুম। ওয়াশরুমের কাছাকাছি যেতেই গন্ধে সামনে এগোনো যাচ্ছিল না। এগুলো যেমন নোংরা, তেমনি ভাঙাচোরা। ঠিকমতো পরিষ্কার করা হয় না। তিনটি টয়লেটের একটিতে লাইট নেই। একটিতে টয়লেট করতে বসলে ওপর থেকে টয়লেটের নোংরা পানি পরে। আরেকটিতে পানিই নেই।

ঠিক বিপরীত দিকের ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের জন্য দুটি টয়লেট এবং একটি ওয়াশরুম রয়েছে। দুটি টয়লেটের মধ্যে একটি টয়লেট এতোটা অপরিষ্কার যে গন্ধে ওয়াশরুমে যাওয়া যাচ্ছে না।

চার বছরের বাচ্চাকে নিয়ে চাচাকে দেখতে আসা কিশোরগঞ্জের আসমা আক্তার পড়েন বিপদে। তার ছেলেকে নিয়ে টয়লেটের কাছে যান ওড়না দিয়ে নাক চেপে ধরে। ছেলেকে ভেতরে যেতে বলছেন কিন্তু ছেলে যাচ্ছে না। কারণ একটিতে পানি নেই, অন্যটিতে অন্ধকার। ছেলের চিৎকারে বাধ্য হয়ে ওয়াশরুমে গেলেন। এরপর সেখান থেকে কেবিনে এসে অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি।

এ বিষয়টি স্বীকার করেন ঢামেকের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাজমুল হক। তিনি বলেন, এতো ভালো কাজ করছি, আপনাদের চোখে পড়ে না। ওয়াশরুমের সমস্যা আপনাদের কাছে বড়।

তিনি বলেন, আমি কেন, যে কেউ দায়িত্ব নিক- এটা শতভাগ ঠিক করতে পারবে না। কারণ আমাদের মানুষগুলো সচেতন না। তারা ওয়াশরুম ঠিকমতো ব্যবহার করতেও পারে না। আমাদের ওয়ার্ডগুলো আগের থেকে অনেক পরিষ্কার। আরও পরিষ্কার রাখবেন বলে প্রত্যাশা জানান তিনি।

এমআই/এইচকে