ঢাকা ওয়াসার (টেকনিক্যাল) পরিচালক এ কে এম শহিদ উদ্দিন আহমেদ বলেছেন, পর্যাপ্ত অর্থের অভাব, সিটি করপোরেশনের অসহযোগিতা ও অনৈতিক অর্থ দাবি করার কারণে এখনও অধিকাংশ ডিএমএ (ডিটেইলড মিটারড এরিয়া) চালু করা যাচ্ছে না। এক কিলোমিটার রাস্তা কাটতে সিটি করপোরেশনকে তিন কোটি টাকা দিতে হয়।

সোমবার (২২ আগস্ট) বেলা ১১টায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর রুনি মিলনায়তনে বাংলাদেশ সাধারণ নাগরিক সমাজ আয়োজিত ‘ন্যায্য মূল্যে পর্যাপ্ত নিরাপদ পানি পাওয়া নাগরিকের মৌলিক অধিকার’ শীর্ষক এক নাগরিক মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

শহিদ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ১৪৮ বছর আগে ঢাকা শহরে পানি সরবরাহ শুরু হয়। ওই সময়ে যে পাইপলাইন ছিল তা এখনও অনেক ক্ষেত্রে বিদ্যমান রয়েছে। বর্তমান দৈনিক চাহিদার বিপরীতে সরবরাহ করা হচ্ছে ২৬৫ কোটি লিটার পানি। ডিএমএ চালু করায় বর্তমানে ঢাকা শহরের অনেক এলাকায় সুপেয় নিরবচ্ছিন্ন পর্যাপ্ত পানি সরবরাহ করা হচ্ছে। আমাদের লক্ষ্যমাত্রা— ১৪৫টি ডিএমএ পুরোপুরি চালু হয়ে গেলে ২৪ ঘণ্টা নাগরিকরা নিরাপদ সুপেয় পানি পাবে।

পদ্মার পানি কেন পাওয়া যাচ্ছে না— এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অর্থের অভাবে এবং দুর্নীতির অভিযোগের বেড়াজালের কারণে এই প্রকল্প পুরোপুরি বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। তারপরও এখনও পদ্মা থেকে দৈনিক তিন কোটি লিটার পানি সরবরাহ করা হচ্ছে। পানি উৎপাদনে কেমিক্যালের উচ্চ মূল্য এবং ব্যয় বৃদ্ধি অন্যতম কারণ। তবে সরকারের ভর্তুকি যদি অব্যাহত থাকে তাহলে দাম বাড়ানোর প্রয়োজন পড়বে না।

আরও পড়ুন: ওয়াসার তাকসিমের ১৩ বছরের ‘আমলনামা’ চান হাইকোর্ট

পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের সভাপতি আবু নাছের খান বলেন, আমরা প্রাকৃতিক পানি সরবরাহ না করে ভূগর্ভস্থ পানিতে কেন গেলাম তা খতিয়ে দেখা দরকার। রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী না করে আমরা আমেরিকান পলিসিতে গেলাম। ওয়াসার এমডির বেতনও বিশ্ব ব্যাংক নির্ধারণ করে। নাগরিক সমাজের উচিত বিশ্ব ব্যাংকের সমালোচনা করা। সুপেয় পানি পাওয়া প্রত্যেক নাগরিকের অধিকার। তাই সুপেয় পানি পাওয়ার দাবিতে আন্দোলন আরও জোরদার করা উচিত।

ন্যাপের মহাসচিব গোলাম মোস্তফা ভূইয়া বলেন, বর্তমান সময়ে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হওয়া দরকার— সরকার নাগরিকের কেন সুপেয় পানি দিতে পারছে না। ওয়াসার এমডি পরিবর্তন বা তার বেতন নিয়ে আলোচনা কোনো সমাধান হতে পারে না। বর্তমান পরিস্থিতিতে যাকেই দায়িত্ব দেওয়া হোক সেই ব্যর্থ হবে। যতক্ষণ পর্যন্ত না আমলাতান্ত্রিক জটিলতা দূর করা যায়।

সুজনের কো-অর্ডিনেটর নাছের আমিন বলেন, ওয়াসার সুশাসন ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা দরকার। উন্নয়ন বলতেই আমরা নাগরিক সমস্যা সমাধান মনে করি না।

লেবার পার্টির মহাসচিব আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ওয়াসার এমডির বেতন এবং তার চাকরির মেয়াদ ইস্যু তৈরি করে নাগরিকদের মৌলিক অধিকার ভিন্ন দিকে প্রবাহিত করার অপচেষ্টা করা হচ্ছে।

সভাপতির বক্তব্যে মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, পানির অপর নাম জীবন। তাই প্রত্যেক নাগরিকের নিরাপদ পানি ন্যায্য মূল্যে পাওয়া এবং নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ পাওয়া মৌলিক অধিকার। আমরা গত ২৫ ফেব্রুয়ারি ঢাকা ওয়াসা ভবনের সামনে ২০ শতাংশ পানির মূল্যবৃদ্ধির সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছি। সেখানে আমাদের দাবি ছিল, মূল্যবৃদ্ধির সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণ অযৌক্তিক। তাছাড়া বর্তমানে পানি অনেক ক্ষেত্রে দুর্গন্ধযুক্ত এবং মানহীন।

আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন অ্যাডভোকেট আবু বক্কর সিদ্দিক, অ্যাডভোকেট রাশিদ বেগম, সংগঠনের সদস্য শাজাহান মিয়া, ছাব্বির হাজরা প্রমুখ।

আইবি/এসএসএইচ