দুর্ঘটনা এড়াতে রেল লেভেল ক্রসিংয়ে স্বয়ংক্রিয় অ্যালার্ম বা সাইরেনের ব্যবস্থাসহ ১১টি সুপারিশ করেছে তদন্ত কমিটি। মিরসরাইয়ের ট্রেন দুর্ঘটনায় বাংলাদেশ রেলওয়ের প্রধান অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী (রেলপথ) আরমান হোসেনের নেতৃত্ব গঠিত তদন্ত কমিটি এসব সুপারিশ করে।

মঙ্গলবার (২৩ আগস্ট) চার সদস্যের এই তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন জমা দেয়। রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, তদন্ত কমিটি দুর্ঘটনার জন্য মাইক্রোবাসচালক ও গেটম্যানকে দায়ী করেছে।

এই কমিটির তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কর্তব্যরত গেটম্যান যদি গেট ব্যারিয়ার ফেলার পর সশরীরে সেখানে উপস্থিত থাকতেন তাহলে এই দুর্ঘটনা এড়ানো যেত। তাই তাকেও দায়ী করা হয়েছে। এছাড়া মাইক্রোবাসের চালক যদি মোটরযান অধ্যাদেশের ১৪২ ও ১৪৩নং ধারা মেনে গাড়ি চালাতেন তাহলে এই দুর্ঘটনা সংঘটিত হত না। তাই মোটরযান অধ্যাদেশ অনুসরণ না করায় মাইক্রোবাসের চালককে দায়ী করা হয়েছে তদন্ত প্রতিবেদনে।

তদন্ত প্রতিবেদনে দায়ী করা চালক গোলাম মোস্তফা দুর্ঘটনার দিন ঘটনাস্থলে মারা যান। আর গেটম্যান সাদ্দাম হোসেনকে চাকরিচ্যুত করতে তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। বর্তমানে তিনি কারাগারে আছেন। তিনি রেলওয়ের স্থায়ী কর্মী নন। একটি প্রকল্পের আওতায় গেটম্যানের দায়িত্বে ছিলেন সাদ্দাম।

গত ২৯ জুলাই দুপুরে চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ের খৈয়াছড়া এলাকায় ট্রেনের ধাক্কায় মাইক্রোবাসের ১১ জন নিহত হন। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরও ২ জনের মৃত্যু হয়েছে। ওইদিন সন্ধ্যায় গেটম্যান সাদ্দামকে আটক করে পুলিশ। পরে তাকে আসামি করে মামলা দায়ের করা হয়। এরপর থেকে এ মামলায় কারাগারে আছেন সাদ্দাম। এই ঘটনার পর রেলের পক্ষ থেকে দুইটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

এর আগে ১৬ আগস্ট রেলওয়ের বিভাগীয় পর্যায়ের পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি এই দুর্ঘটনার জন্য গেটম্যান ও চালককে দায়ী করে।

আর মঙ্গলবার প্রতিবেদন জমা দেওয়া তদন্ত কমিটির প্রধান অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী (রেলপথ) আরমান হোসেন। বাকি সদস্যরা হলেন— অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী (যান্ত্রিক) মোস্তফা জাকির হোসেন, অতিরিক্ত সিওপিএস জাকির হোসেন ও অতিরিক্ত প্রধান সংকেত ও টেলিযোগাযোগ প্রকৌশলী তারেক মো. শামস তুষার।

তদন্ত কমিটির এক সদস্য ঢাকা পোস্টকে বলেন, লেভেল ক্রসিং এলাকায় ট্রেন দুর্ঘটনা এড়াতে ১১টি সুপারিশ করেছে কমিটি। সুপারিশগুলো হচ্ছে- সব লেভেল ক্রসিং গেটে নিরাপদ দূরত্বে ট্রেন আসলে উচ্চ শব্দের (৮০-১০০ ডেসিবল) স্বয়ংক্রিয় এলার্ম বেজে ওঠার সিস্টেম স্থাপন করা; লেভেল ক্রসিং গেইটগুলো জরিপ করে কারিগরি সম্ভাব্যতা অনুযায়ী ওভার পাস বা আন্ডার পাস নির্মাণ করা; অন্যান্য গেটে শ্রেণি নির্ধারণসহ ন্যূনতম ৩ জন লোকবল মঞ্জুরি ও পদায়নের ব্যবস্থা নেওয়া; গেটকিপারদের প্রশিক্ষণ ও খাকি  ইউনিফরম সরবরাহ করার কথা বলা হয়েছে তদন্ত কমিটির সুপারিশে।

এছাড়া বলা হয়েছে, এলসি গেইটগুলো সার্বক্ষণিক যোগাযোগের আওতায় আনতে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়াসহ (সোলার গ্রিড সিস্টেম) টেলিফোন সংযোগ দেওয়া এবং সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণের জন্য সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা প্রয়োজন। সকল এলসি গেটে টয়লেট ও পানির ব্যবস্থা নিশ্চিত করা এবং লোকালয় থেকে দূরবর্তী স্থানের এলসি গেটে আবাসনের জন্য গেট লজ নির্মাণের কথা বলা হয়েছে।

এছাড়া তদন্ত কমিটি তাদের প্রতিবেদনের সুপারিশে আরও বলেছে, এলসি গেটের সড়ক পথের গ্র্যাডিয়েন্ট রেলপথের উভয়দিকে ন্যূনতম ৫০ ফুট পর্যন্ত সমান্তরাল রাখা ও তারপর থেকে সর্বোচ্চ তিন শতাংশ গ্র্যাডিয়েন্ট দিয়ে সড়ক নির্মাণ করা এবং সড়কের উভয় দিকে স্বল্প উচ্চতার স্পিড ব্রেকার নির্মাণ করা।

সকল এলসি গেটে গেট ব্যারিয়ারে লকিং সিস্টেম স্থাপন, গেট ব্যারিয়ারের পার্শ্ববর্তী স্থান থেকে অবৈধ বাজার, দোকানপাট, সাইনবোর্ড ইত্যাদি অপসারণের ব্যবস্থা নেওয়া এবং পুনঃদখল প্রতিরোধে ঘন ঘন উচ্ছেদ কার্যক্রম পরিচালনা করার কথা বলা হয়েছে।

কেএম/এমএইচএস