সিরাজুল ইসলাম, গত আট বছর ধরে রাজধানীর মহাখালী এলাকায় ভ্যানে দাব বিক্রি করেন তিনি। আগের তুলনায় বর্তমানে তার ব্যবসা খারাপ যাচ্ছে। তিনি বলেন, বর্তমানে ডাবের দাম অনেক বেশি বেড়েছে। এত দাম দিয়ে মানুষ আগের মতো ডাব কিনে খায় না। যার কারণে ব্যবসা কমে গেছে।

বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ১২০ টাকার নিচে ডাব পাওয়া যাচ্ছে না। দেখতে সুন্দর, আর একটু বড় হলেই সেই ডাব বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকায়। তবে ১২০ টাকা দামের ডাবের সংখ্যাই বাজারে বেশি।

ডাব কিনতে মহাখালী টিভি গেট সংলগ্ন এলাকায় এসেছেন আব্দুস সোবহান। দাম জিজ্ঞেস করতেই বিক্রেতা স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন- বড় ডাব ১৫০ আর ছোটগুলো ১২০ টাকা। দাম শুনেই চোখ কপালে ক্রেতা আব্দুস সোবাহানের। তিনি বলেন, বোন হাসপাতালে ভর্তি। ভাবলাম তার জন্য একটি ডাব কিনে নিয়ে যাই। ১৫০ টাকা দিয়ে একটি ডাব কিনতে হবে ভাবতেও পারেনি। এত দাম দিয়ে ডাব কিনে খাওয়া কি সম্ভব?

দাম বাড়ার কারণ জানতে চাইলে টিভি গেট এলাকার ওই ডাব বিক্রেতা আওয়াল মিয়া বলেন, বাজারে কেনা দাম বেশি। এই ছোট ডাবই প্রতি পিস কেনা পড়েছে ৯৬ টাকা, আগে যেটা পড়ত ৪০/৫০ টাকা। বড় ডাবের দাম তো আরও বেশি। ১০০ পিস বড় ডাব কিনতে ১০/১১ হাজার টাকা খরচ হয়। তাই এখন বেশি দামে বিক্রি করা ছাড়া কোনো উপায় নেই।

তিনি আরও বলেন, দাম বাড়ার পর থেকে মাল বিক্রি অনেক কমে গেছে। আগের মতো বিক্রি নেই। কিছুদিন আগেও ৬০ থেকে ৮০ টাকা পিস ডাব বিক্রি করেছি। এখন বলতে গেলে প্রায় ডাবল দাম। যে কারণে আমাদের ব্যবসাও আগের চেয়ে অনেক কমে গেছে।

মালিবাগ এলাকায় কথা হয় স্থানীয় ডাব বিক্রেতা মেহেদি হাসানের সঙ্গে। তিনি বলেন, চাহিদার তুলনায় ডাবের সরবরাহ কম। গ্রামেও এখন আর আগের মতো ডাব পাওয়া যায় না। আবার ডাব পরিবহনের খরচও বেড়েছে। রাজধানীতে সবচেয়ে বেশি পিরোজপুর, বাগেরহাট, বরিশাল, লক্ষ্মীপুর, নোয়াখালী, ভোলা এলাকা থেকে ডাব আসে। কিছুদিন আগে মানুষ দুটি ডাব কিনতো ১৬০ টাকায়। এখন এক ডাবের দামই ১৫০ টাকা। তবে ছোট ডাব ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ছোট ডাবের চাহিদাই বেশি।

কারওয়ান বাজার, যাত্রাবাড়ী, মিরপুর, আব্দুল্লাহপুর এলাকায় পাইকারি দামে ডাব বিক্রি হয়। আর সেখানেই ডাবের দাম বেশি জানিয়ে আরেক বিক্রেতা সেলিম আহমেদ বলেন, দাম বেড়ে যাওয়ার পর থেকে আমাদের মতো ছোট ব্যবসায়ীদের বেশি লোকসান হচ্ছে। আগের চেয়ে বিক্রি অনেক কমে গেছে। এত দাম দিয়ে মানুষ ডাব কিনে খেতে চায় না।

তিনি বলেন, আগে সারাদিনে ১০০ ডাব বিক্রি হতো। এখন সেখানে ৬০/৭০ পিস বিক্রি হয়। বিক্রি কমে যাওয়ায় অনেক ব্যবসায়ীরা ডাব বিক্রি ছেড়ে দিয়ে মৌসুমি ফলের ব্যবসা ধরেছেন।

মহাখালী টিভি গেট এলাকায় একটি অস্থায়ী ডাবের দোকানের সামনে কথা হয় পথচারী হাবীবুর রহমানের সঙ্গে। তিনি বলেন, যখন দাম কম ছিল তখন চলাফেরার সময় রাস্তার পাশের দোকান থেকে ডাব কিনে খেতাম। বর্তমানে আমাদের মতো সাধারণ মানুষরা ডাব কিনে খাওয়ার সাহস দেখাতে পারে না। কারণ এক ডাবের দাম ১৫০! চিন্তা করা যায়?

এএসএস/এমএইচএস