রোহিঙ্গারা যেন যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে তাদের জীবন পুনর্গঠন করতে পারে সেজন্য তাদের (যুক্তরাষ্ট্রে) পুনর্বাসন (resettlement) উল্লেখযোগ্য হারে বাড়াতে কাজ করছে ওয়াশিংটন। এক বিবৃতিতে এ কথা জানান যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এন্টনি ব্লিনকেন। তবে কখন কী পরিমাণ রোহিঙ্গাকে যুক্তরাষ্ট্রে পুনর্বাসন করা হবে তা পরিষ্কার করেননি তিনি। বিবৃতিতে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে গাম্বিয়ার করা মামলায় যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনের কথাও জানান ব্লিনকেন। 

রোহিঙ্গাদের ওপর পরিচালিত গণহত্যার পাঁচ বছর পূর্তি উপলক্ষে এ বিবৃতি দেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। দেশটির পররাষ্ট্র দপ্তরের ওয়েবসাইটে বিবৃতিটি প্রকাশ করা হয়েছে।

বিবৃতিতে বলা হয়, পাঁচ বছর আগে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে একটি নৃশংস অভিযান শুরু করেছিল। তারা সেখানে গ্রামগুলো ধ্বংস করে; ধর্ষণ, নির্যাতন ও বড় আকারের সহিংসতা চালায়। হাজার হাজার রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ-শিশুকে হত্যা করা হয়। ৭ লাখ ৪০ হাজারেরও বেশি রোহিঙ্গা তাদের বাড়িঘর ছেড়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়।

এতে উল্লেখ করা হয়, ২০১৭ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্র রোহিঙ্গাদের অব্যাহত সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। কেননা তারা পরিস্থিতি বিবেচনায় নিরাপদে তাদের নিজ ভূমি মিয়ানমারে ফিরে যেতে পারছে না। মিয়ানমার, বাংলাদেশ এবং এ অঞ্চলে ক্ষতিগ্রস্ত রোহিঙ্গাদের জন্য যুক্তরাষ্ট্র (এ পর্যন্ত) ১ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলারের বেশি সহায়তা দিয়েছে। 

বিবৃতিতে ব্লিনকেন বলেন, একটি আন্তর্জাতিক সমন্বিত মানবিক প্রতিক্রিয়ার অপরিহার্য উপাদান বিবেচনায় আমরা বাংলাদেশসহ ওই অঞ্চল থেকে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের পুনর্বাসন উল্লেখযোগ্য হারে বাড়াতে কাজ করছি, যাতে রোহিঙ্গারা যুক্তরাষ্ট্রে তাদের জীবন পুনর্গঠন করতে পারে।

তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র রোহিঙ্গা ও মিয়ানমারের সব জনগণের ন্যায়বিচার ও জবাবদিহিতার বিষয়ে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। দেশটি মিয়ানমারে একটি স্বাধীন তদন্ত প্রক্রিয়াকে সমর্থন করে যাবে।

বাংলাদেশ সরকার এবং রোহিঙ্গাদের দেখভাল করা অন্যান্য দেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র সংহতি প্রকাশ করছে বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করেন ব্লিনকেন। 

যুক্তরাষ্ট্র আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তাকে উন্নত করার জন্য মিয়ানমারে সেনাবাহিনীর কার্যক্রমের (অপরাধের) ন্যায়বিচার ও জবাবদিহিতার জন্য জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের পদক্ষেপকে সমর্থন করে বলে জানান ব্লিনকেন।

তিনি বলেন, আমরা আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে আনা গাম্বিয়ার গণহত্যার মামলায়ও অব্যাহত সমর্থন দিয়ে যাব।

পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র রোহিঙ্গা ও মিয়ানমারের জনগণকে তাদের স্বাধীনতা এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক চাপ বৃদ্ধি করবে এবং মিয়ানমারের সব ব্যক্তির মানবাধিকার ও মানবিক মর্যাদা রক্ষায় সমর্থন অব্যাহত রাখবে বলে উল্লেখ করেন এন্টনি ব্লিনকেন।

উল্লেখ্য আনুষ্ঠানিকভাবে এখনো কোনো দেশ রোহিঙ্গা শরণার্থীদের পুনর্বাসন (resettlement) করেনি। যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের কিছু দেশে আগে থেকে কিছুসংখ্যক রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়ে আছে। সম্প্রতি, রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহ হত্যাকাণ্ডের পর তার পরিবারের সদস্যদের যুক্তরাষ্ট্রে পুনর্বাসন করে ওয়াশিংটন। 

এনআই/আরএইচ