গ্রামীণ টেলিকম শ্রমিক-কর্মচারীদের সঙ্গে প্রতারণা ও জালিয়াতির মাধ্যমে ২৬ কোটি টাকা অর্থ আত্মসাতের ঘটনায় আরও একজনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের গুলশান বিভাগ।

গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তির নাম মো. মাইনুল ইসলাম (৩৯)। তিনি গ্রামীণ টেলিকম শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের সহ-সভাপতি। গত বুধবার (২৪ আগস্ট) কুমিল্লা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারের সময় তার কাছ থেকে ১ কোটি ৭০ লাখ টাকার একটি চেক জব্দ করা হয়।

রোববার (২৮ আগস্ট) দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে এ নিয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন ডিবি পুলিশের প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ। এসময় তিনি জানান, গ্রেপ্তার হওয়া মায়নুল প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে বলেছেন, গ্রামীণ টেলিকমের বিরুদ্ধে মামলা তুলে নিয়ে সমঝোতা করতে তাদের বাধ্য করেন ড. ইউনূসের লোকেরা। তারা সবার মধ্যে ভীতি ছড়িয়ে দেন।  

ডিবি প্রধান বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে মাইনুল ইসলাম জানান, লভ্যাংশ ও পাওনা পরিশোধ এবং অতিরিক্ত অর্থ দেওয়ার প্রলোভনের পাশাপাশি গ্রামীণ টেলিকম কর্তৃপক্ষ বার্তা ছড়িয়ে দেয় যে, বাংলাদেশের পরিস্থিতি শ্রীলঙ্কার মত হবে। এরপর ক্ষমতার পট পরিবর্তনে প্রধানমন্ত্রী হবেন ড. ইউনূস। তখন শ্রমিকদের এসব মামলা কোনো কাজে আসবে না; শ্রমিকরা কোনো ক্ষতিপূরণও পাবে না। বিপরীতে তারা চাকরি হারাবে এবং জেল-জুলুম সহ্য করতে হবে।

মায়নুলের ভাষ্য, এই ভয়ে এবং ‘কিছুই না পাওয়া’র অনিশ্চয়তার বিপরীতে ৪৩৭ কোটি টাকার প্রলোভনে আইনজীবীর পরামর্শে তারা মামলা তুলে নেন।

কর্মচারীদের অর্থ আত্মসাতের ঘটনায় গত ৫ জুলাই গ্রামীণ টেলিকম কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি মো. কামরুজ্জামান ও সেক্রেটারি ফিরোজ মাহমুদ হাসানকে গ্রেপ্তার করা হয়। তারা আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন।

গত ৪ জুলাই গ্রামীণ টেলিকম কর্মচারী এবং টেলিকম ইউনিয়নের অর্থ সম্পাদক মোহাম্মদ আকতারুজ্জামান (৩৮) মিরপুর মডেল থানায় এ বিষয়ে অভিযোগ দায়ের করেন।

হারুন অর রশিদ জানান, লভ্যাংশ না দেওয়াসহ নানা অভিযোগে শ্রমিক-কর্মচারীদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দিলে তারা গ্রামীণ টেলিকম কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেন। এর প্রেক্ষিতে গত বছর প্রতিষ্ঠানটি থেকে ৯৯ জন শ্রমিককে বে-আইনিভাবে ছাঁটাই করা হয়। এর বিরুদ্ধে শ্রমিকরা শ্রম আদালতে ১৯০টি মামলা দায়ের করেন। কিন্তু শ্রমিকদের মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে কোম্পানি ও শ্রমিক ইউনিয়নের কয়েকজন নেতা যোগসাজশ করে শ্রমিকদের দিয়ে মামলাগুলো তুলিয়ে নেন।

তিনি বলেন, মামলা তোলার আগে এ বছরের ২৭ এপ্রিল একটি চুক্তিপত্র স্বাক্ষরিত হয়। চুক্তি অনুযায়ী ১০ মে ঢাকা ব্যাংক গুলশান শাখায় একটি সেটেলমেন্ট অ্যাকাউন্ট খোলা হয়। সেখানে প্রায় ৪৩৭ কোটি টাকা জমা করা হয়। চুক্তি অনুযায়ী ওই অ্যাকাউন্ট থেকে অর্থ উত্তোলনের জন্য গ্রামীণ টেলিকমের এমডিকে বাধ্যতামূলক সিগনেটরি এবং ইউনিয়নের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে অন্য দুই সিগনেটরি হিসেবে রাখা হয়।

ডিবি প্রধান বলেন, শ্রমিকদের সব পাওনা এই অ্যাকাউন্ট থেকে পরিচালিত হওয়ার কথা। চুক্তি অনুযায়ী সেটলমেন্ট অ্যাকাউন্ট থেকে শ্রমিকদের পাওনা এবং ৫ শতাংশ অগ্রিম কর ছাড়া অন্য কোনো অর্থ ছাড় করার কোনো সুযোগ নেই। কিন্তু বিধি বর্হিভূতভাবে কোম্পানির ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের যোগসাজশে কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি, সহ-সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ আরও কয়েকজন মিলে অ্যাকাউন্ট থেকে ২৬ কোটি ২২ লাখ টাকা সরিয়ে আত্মসাৎ করেন।

অন্যান্য শ্রমিকদের মতো মাইনুল ইসলাম আইনানুগভাবে প্রাপ্য ৪ কোটি টাকা নেওয়ার পরও তার ডাচ বাংলা ব্যাংক ও ব্র্যাক ব্যাংকের ২টি অ্যাকাউন্টে ৩ কোটি টাকা সরিয়ে নেন।

এছাড়া তার অন্য দুই সহকর্মী অর্থাৎ টেলিকম ইউনিয়নের সভাপতি ও সেক্রেটারিও ৩ কোটি করে ৬ কোটি টাকা নেন।

ড. ইউনূস এই ‘সমঝোতা ষড়ডন্ত্রে’র সঙ্গে জড়িত আছে কি না জানতে চাইলে ডিবি প্রধান বলেন, প্রাথমিকভাবে আমরা মনে করছি এর দায় তিনি এড়াতে পারেন না। তার পরও আমরা আরও জিজ্ঞাসাবাদ করছি। এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলব। তদন্তে যা আসবে সে অনুযায়ী আমরা ব্যবস্থা নেব।

এমএসি/এসএম