মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, বিচারের নামে প্রহসন করে গণহত্যার জন্য খুনি হিসেবে মেজর জিয়ার মরণোত্তর বিচার হতে পারে। অন্তত কমিশন গঠন করে ১৯৭৭ সালের সেই সত্যকে উদঘাটন করা সম্ভব। আমি সেই দাবি সংসদে উপস্থাপন করব। 

গুমের শিকার ব্যক্তিদের স্মরণে আন্তর্জাতিক গুম দিবস উপলক্ষে মঙ্গলবার (৩০ আগস্ট) কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন মন্ত্রী।

আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, আমরা ১৯৭১ সালে যখন যুদ্ধ করেছি তা কিন্তু আইন মেনে করিনি। তখন কিন্তু পাকিস্তান বলে রাষ্ট্র ছিল। মানুষের প্রয়োজনে আইনের ব্যত্যয়ও ঘটে। মরণোত্তর বিচারের নজির আছে। হয়ত সাজাভোগ করানো যায়নি। কিন্তু ইতিহাসে দোষী হিসেবে নাম রয়ে গেছে। জিয়ারও নাম রয়ে যাবে খুনি হিসেবে। সেজন্য তখনকার সেই গণহত্যার বিচারের নামে প্রহসনের তদন্ত হওয়া দরকার, বিচার হওয়া দরকার। এটা কোনো বেআইনি কিছু হবে না। সত্যকে উদঘাটন ও প্রতিষ্ঠা করাটাও আইনের দায়িত্ব। 

তিনি বলেন, ১৯৭৭ সালের ২ অক্টোবর ঢাকায় জাপানি বিমান ছিনতাইয়ের ঘটনায় তৎকালীন স্বৈরশাসক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান পরিকল্পিতভাবে একটি অভ্যুত্থানের প্রেক্ষাপট তৈরি করেন। পরে তথাকথিত বিদ্রোহ দমনের নামে সামরিক আদালতে বিচার করে সেই রাতেই ফাঁসি সম্পন্ন করে লাশ গুম করেন ঢাকা, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, রংপুর, যশোর ও বগুড়া কেন্দ্রীয় কারাগারে। রাতের আঁধারে কারফিউ দিয়ে ফাঁসি কার্যকর করা হয়।

আরও পড়ুন: সজাগ থাকলে কোনো ষড়যন্ত্র ঘরে প্রবেশ করতে পারবে না

জিয়াউর রহমান পাকিস্তানীদের খুশি করতেই বীর মুক্তিযোদ্ধাদের হত্যার নীলনকশা বাস্তবায়ন করেছেন— উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, অনেকে হয়ত বলতে পারেন তিনি তো মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন, সেক্টর কমান্ডার ছিলেন। জেড ফোর্সের অধিনায়ক ছিলেন, যুদ্ধ করেছেন। বাহ্যিক এসব কথার পেছনে সত্যিটা অনেকে জানে না। মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি বলেছিলেন, ওয়ার কাউন্সিল করে যুদ্ধ করতে হবে। রাজনৈতিক নেতারা তথা মুজিবনগর সরকারের অধীনে তিনি যুদ্ধ করতে রাজি ছিলেন না। অন্য সেক্টর কমান্ডারদের দৃঢ়তার কারণে জিয়ার ষড়যন্ত্র বাস্তবায়ন হয়নি। 

আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, জিয়াউর রহমান ও খুনি মোস্তাক ১৫ আগস্টে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার জন্য প্রত্যক্ষভাবে দায়ী ও তারা জড়িত। প্রশ্ন উঠতে পারে কীভাবে? আত্মস্বীকৃত খুনি যারা বলেছিল আমরা খুন করেছি, খুনি মোস্তাক ও জিয়া তাদের নিরাপদে বিদেশে পাঠিয়েছেন। বিদেশে দূতাবাসগুলোতে চাকরির ব্যবস্থা করেছিলেন। তাদের সম্পৃক্ততা না থাকলে তা করা যায় না।

তিনি বলেন, শুধু তাই নয়, ইনডেমনিটি আইন করে খুনিদের রক্ষার ব্যবস্থা করেছিলেন মেজর জিয়া। তিনি মন্ত্রী সভা করে সেখানেও রাজাকারদের ঠাঁই দিয়েছিলেন।

মন্ত্রী বলেন, ১৫ আগস্টের আত্মস্বীকৃত খুনিদের বিচার হয়েছে। কিন্তু যারা মদদদাতা, পদ্মার অন্তরালে ছিল তাদের বিচার হয়নি। তাদেরও বিচারের আওতায় আনতে কমিশন গঠনের মাধ্যমে বিচার করা সময়ের দাবি। আমি চেষ্টা করব আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করার। যাতে দেশবাসী জানতে পারে মেজর জিয়ার কুকীর্তি।

তিনি আরও বলেন, যেসব নিরপরাধ মানুষ সেদিন হত্যার শিকার হয়েছিলেন তারা জানেননি কি তাদের অপরাধ। অনেক দিন আটকে রেখে জানানো হয় তাকে ফাঁসি দেওয়া হবে। আজ বিচারের দাবিতে শহীদ মিনারে সেসব নিরপরাধ মানুষগুলোর পরিবার আত্মীয়-স্বজনদের কান্না-আহাজারি আল্লাহ’র আরশ পর্যন্ত পৌঁছেছে। 

অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন সাবেক বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক, বীর মুক্তিযোদ্ধা মেজর জেনারেল (অব.) হেলাল মোর্শেদ বীর বিক্রম, এশিয়াটিক সোসাইটির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক ড. খন্দকার বজলুল হক, সাবেক আইজি প্রিজন্স বীর মুক্তিযোদ্ধা লিয়াকত আলী খান, মুক্তিযুদ্ধ গবেষক লে. কর্ণেল (অব.) সাজ্জাদ আলী জহির বীরপ্রতীক। সশস্ত্র বাহিনীতে গণহত্যা বিষয়ক গবেষক ও সাংবাদিক আনোয়ার কবির এবং ১৯৭৭ সালে গণফাঁসি ও গণগুমের শিকার সেনা ও বিমানবাহিনীর সদস্যদের সন্তানরা।

জেইউ/এসএসএইচ