রাজধানীর কাফরুল থানাধীন একটি মন্দিরের সেবায়েত পরীক্ষিত দাসের (৬৫) বিরুদ্ধে মন্দির থেকে ফল চুরির অভিযোগ আনে কর্তৃপক্ষ। অভিযোগের কারণে মন্দির কর্তৃপক্ষের কাছে পা ধরে ক্ষমা চান তিনি। কিন্তু এতেও মন গলেনি কর্তৃপক্ষের। এ বিষয়ে সালিশ করার হুমকি দেয় কর্তৃপক্ষ।

সালিশ হলে আত্মীয় স্বজন সবাই বিষয়টি জেনে গেলে কীভাবে মুখ দেখাবেন, এ ভয়ে আত্মহত্যা করেন পরীক্ষিত। গত ১৬ আগস্ট মন্দিরের ভেতরে আত্মহত্যা করেন তিনি। এ ঘটনায় গত ২২ আগস্ট মৃতের ছেলে ভক্ত দাস কাফরুল থানায় আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগ এনে একটি মামলা দায়ের করেন। পরে মামলাটির তদন্ত শুরু করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) মিরপুর বিভাগ।

তদন্তের এক পর্যায়ে সোমবার (২৯ আগস্ট) দিবাগত রাতে গাজীপুরের রাজেন্দ্রপুর থেকে পরীক্ষিতকে আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগে ৩ জনকে গ্রেপ্তার করে ডিবি।

গ্রেপ্তার হওয়া অভিযুক্তরা হলেন, মন্দিরের সভাপতি বিপ্লব বিজয়ী হালদার (৪৬), সাংগঠনিক সম্পাদক সুমন সাহা (৫৩) ও দপ্তর সম্পাদক বাদল সরকারের (৩৫)।

মঙ্গলবার (৩০ আগস্ট) দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ডিবি প্রধান) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।

হারুন অর রশীদ বলেন, গত ১৬ আগস্ট কাফরুলের মন্দিরের ভেতরেই আত্মহত্যা করেন সেবায়েত। পরীক্ষিত কাফরুল কেন্দ্রীয় মন্দিরে প্রায় ৬ বছর ধরে সেবায়েত হিসেবে কর্মরত ছিলেন। গত ১৫ আগস্ট রাত পৌনে ১২টার দিকে একটি ব্যাগ নিয়ে মন্দির থেকে বের হচ্ছিলেন তিনি। ওই ব্যাগে মন্দিরের ফল ছিল এবং সেগুলো চুরির অভিযোগ তোলেন মন্দিরের সভাপতি বিপ্লব বিজয়ী হালদার, সাংগঠনিক সম্পাদক সুমন সাহা ও দপ্তর সম্পাদক বাদল সরকার। পর দিন সকালে প্রকাশ্যে সালিশ বসিয়ে বিচার করার হুমকি দেওয়া হয়।

মন্দিরের একটি সিসি ক্যামেরার ফুটেজের বরাত দিয়ে তিনি বলেন, পরীক্ষিত দাস বের হচ্ছেন। এ সময় বিপ্লব, সুমন ও বাদল তাকে বাধা দেন। তারা হাত নাড়িয়ে কথা বলছেন পরীক্ষিত দাসের সঙ্গে। একপর্যায়ে পরীক্ষিত দাস তাদের একজনের দুই পা জাড়িয়ে ধরেন। পরে উঠে ওই ব্যক্তিকে বুকে আঁকড়ে ধরেন তিনি। ভিডিওতে স্পষ্ট, তিনি বারবার ক্ষমা চাচ্ছেন। পর্যায়ক্রমে অপর দুজনেরও পা জড়িয়ে ধরে ক্ষমা চান।

পরে তারা পরীক্ষিত দাসকে রেখে চলে যান। এরপরই তিনি মন্দিরে দ্বিতীয় তলায় ওঠার সিঁড়ির রেলিংয়ের সঙ্গে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন। পর দিন সকালে সেখান থেকে তার লাশ উদ্ধার করে কাফরুল থানা পুলিশ। এই ঘটনায় মৃত ব্যক্তির ছেলে ভক্ত দাস বাদী হয়ে কাফরুল থানায় আত্মহত্যার প্ররোচনার মামলা করেন। সেই মামলায় এজাহারভুক্ত তিন আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে ডিবি।

এক প্রশ্নের জবাবে হারুন অর রশীদ বলেন, এই ঘটনায় আরও কোনো কারণ রয়েছে কি না সে বিষয়ে তদন্ত চলছে।

এমএসি/এসকেডি