যাত্রীর সঙ্গে প্রতারণা, সহজকে ২ লাখ ১৫ হাজার টাকা জরিমানা
ট্রেনের একটি টিকিট দুই যাত্রীর কাছে বিক্রি করে ক্রেতার সঙ্গে প্রতারণার অভিযোগে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান সহজডটকমকে ২ লাখ ১৫ হাজার টাকা জরিমানা করেছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর।
বুধবার (৩১ আগস্ট) রাজধানীর কারওয়ানবাজারে অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয়ে অভিযোগের শুনানি শেষে এ রায় দেওয়া হয়। শুনানি পরিচালনা করেন অধিদপ্তরের ঢাকা জেলা কার্যালয়ের অফিস প্রধান মো. আব্দুল জব্বার মন্ডল। এসময় অভিযোগকারী বিশ্বজিত সাহা এবং সহজ ডটকমের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
বিজ্ঞাপন
বিষয়টি ঢাকা পোস্টকে নিশ্চিত করেছেন অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বিকাশ চন্দ্র দাস।
সহজডটকমের বিরুদ্ধে বিশ্বজিত সাহার অভিযোগের ভিত্তিতে দুই পক্ষের উপস্থিতিতে মৌখিক ও লিখিত বক্তব্য নেওয়া হয়।
বিজ্ঞাপন
লিখিত বক্তব্যে অভিযোগকারী বলেন, সহজডটকম হতে গত ২৯ জুন চিত্রা (৭৬৩) ট্রেনের ঈশ্বরদী থেকে উল্লাপাড়া পর্যন্ত শোভন চেয়ার (জ-২৯) আসনটির জন্য টাকার বিনিময়ে টিকিট ক্রয় করেন। যাত্রার তারিখ ছিল ৩০ জুন। কিন্তু ওই (যার PNR-62BC19C5EA263) ট্রেনে উঠে সিটের পাশে গিয়ে অভিযোগকারী দেখতে পান একই আসন (জ-২৯) অন্য যাত্রীর কাছে বিক্রি করা হয়েছে। অন্য যাত্রীর টিকিট স্ক্যান করে দেখতে পান PNR 6287CF1ACEC4C এবং মোবাইল নম্বর ০১৭৯৬৪৮৫১৪৬। যাত্রীর নাম মো. মারুফ ইসলাম। যিনি ২৬ জুন জ-২৯ ও জ-৩০ টিকিট দুটি যশোর থেকে উল্লাপাড়া ভ্রমণের জন্য ক্রয় করেন।
অভিযোগকারী মো. মারুফ ইসলামের টিকিট পরীক্ষা করে সঠিক দেখতে পাওয়ায় ওই ট্রেনের কর্তব্যরত টিটিকে বিষয়টা জানালে টিটি অভিযোগকারীকে নকল টিকিট তৈরি করে ট্রেনে ভ্রমণ করছেন মর্মে দোষারোপ করেন এবং অভিযোগকারীর সঙ্গে খারাপ আচরণ করেন। আসন না পেয়ে এবং উপস্থিত ভ্রমণরত যাত্রীদের সামনে অপমানিত হয়ে অভিযোগকারী শারীরিক ও মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন।
সহজডটকম দেওয়া মূল্যের বিনিময়ে প্রতিশ্রুত পণ্য বা সেবা যথাযথভাবে বিক্রি বা সরবরাহ না করার কারণে অভিযোগকারীকে টিটির খারাপ আচরণ সহ্য করে সম্পূর্ণ রাস্তা দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছে এবং এর ফলে সেবা প্রদানকারীর অবহেলা, দায়িত্বহীনতা বা অসতর্কতা দ্বারা অভিযোগকারীর (সেবা গ্রহীতার) অর্থ ও স্বাস্থ্যহানী ঘটেছে।
সহজডটকম মৌখিক ও লিখিত বক্তব্যে অভিযোগকারীর অভিযোগ স্বীকার করেছে।
অর্থাৎ সহজডটকম একই ট্রেনের (চিত্রা ৭৬৩) একই সময়ের একই টিকিটি (জ-২৯) দুই জন যাত্রীর কাছে বিক্রি করেছে।
জানা গেছে, ভিনসেন কনসালটেন্সি, সিনেসিস আইটি লি. এবং সহজ ডট কম জয়েন ভেঞ্চারে টেন্ডার ক্রয় করে ও লিড পার্টনার হিসেবে সহজডটকমকে ট্রেনের টিকিটিং কার্যক্রম পরিচালনার জন্য পুরো টেকনিক্যাল ও অপারেশনের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। ফলে ট্রেনের টিকিটিং কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে অনিয়ম বা অপরাধের জন্য সব দায় সহজডটকমের।
অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে জানানো হয়, শুনানিতে অভিযোগ পর্যালোচনা করে সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে সহজডটকম একই ট্রেনের (চিত্রা এক্সপ্রেস) একই সময়ের একটি টিকিট (জ-২৯) দুই যাত্রীর কাছে বিক্রি করেছে।
এ কারণে টিকিট কাটার পরও অভিযোগকারী যাত্রী বিশ্বজিত সাহা পরিশোধ করা মূল্যের বিনিময়ে প্রতিশ্রুত সেবা পাননি। এটি সেবা প্রদানকারীর (সহজডটকম) অবহেলা, দায়িত্বহীনতা। এর ফলে অভিযোগকারীর অর্থ ও স্বাস্থ্যহানি ঘটেছে। এ অপরাধে ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ আইন ২০০৯ এর ৪৫ ধারায় ৪০ হাজার ও ৫৩ ধারায় এক লাখ ৭৫ হাজার টাকাসহ মোট দুই লাখ ১৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। জরিমানার অর্থ পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে দিতে বলা হয়েছে।
এ বিষয়ে সহজ এর পক্ষ থেকে প্রতিষ্ঠানটির জনসংযোগ ব্যবস্থাপক ফারহাত আহমেদ বলেন, সম্প্রতি বাংলাদেশ রেলওয়ের টিকিটিং কার্যক্রম ও সেবা বিষয়ক বিভিন্ন ইস্যুতে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে অভিযোগ জমা হচ্ছে। যার পরিপ্রেক্ষিতে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর থেকে বাংলাদেশ রেলওয়ের সঙ্গে টিকিটিংবিষয়ক চুক্তিবদ্ধ প্রতিষ্ঠান সহজ-সিনেসিস-ভিনসেন জেভিকে সম্পৃক্ত করা হচ্ছে।
প্রথমত, সহজ-সিনেসিস-ভিনসেন জেভি ভোক্তাদের কাছে সরাসরি কোনো টিকিট বিক্রি করে না। রেলের যাত্রীরা বাংলাদেশ রেলওয়ের টিকিট কেনার জন্য বাংলাদেশ রেলওয়ে পরিচালিত রেলসেবা অ্যাপ এবং অফিসিয়াল ওয়েবসাইট ব্যবহার করে। অর্থাৎ এ টিকিটগুলো মূলত বাংলাদেশ রেলওয়ে বিক্রি করে। এখানে আমরা শুধুমাত্র বাংলাদেশ রেলওয়েকে প্রযুক্তিগত সহায়তা দিয়ে থাকি। উল্লেখিত অভিযোগের বিষয়ে আমরা ভোক্তার কাছ থেকে বাংলাদেশ রেলওয়ের টিকিটিং ওয়েবসাইটে উল্লেখিত ই-মেইলে কোনো অভিযোগ আসেনি এবং আমাদের উক্ত অভিযোগের ব্যাপারে অবহিত না করেই পরবর্তীতে ভোক্তা অধিদপ্তর, ঢাকা জেলা কার্যালয় বরাবর অভিযোগটি দাখিল করা হয়, যা শুনানি শেষে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর তাদের আইন অনুযায়ী রায় প্রদান করে এবং রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
এসআই/এসএম