বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) উপাচার্য অধ্যাপক ডা. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেছেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে যখন অন্নদাশঙ্কর রায় জিজ্ঞেস করেছিলেন কখন বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখেছিলেন। বঙ্গবন্ধু তখন ঘোষণা করেছিলেন, ১৯৪০ সালে। অর্থাৎ বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের স্বাধীনতার অনেক আগেই ঘোষণা দিয়েছিলেন। ১৯৪৬ সালে বঙ্গবন্ধু বিহারের দাঙ্গা দমন করেছেন।

বুধবার (৩১ আগস্ট) তথ্য ভবন মিলনায়তনে অ্যাসোসিয়েশন অব টেলিভিশন চ্যানেল ওনার্স (অ্যাটকো) আয়োজিত জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ ও চিরঞ্জীব বঙ্গবন্ধু শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, ১৯৬৬ সালের বঙ্গবন্ধুর ছয় দফা ঘোষণার মাধ্যমেই স্বাধীনতার গোড়াপত্তন করেন। কারণ ছয় দফায় একই দেশে দুটি অঞ্চলের জন্য দুটি মুদ্রা ব্যবস্থাপনা ঘোষণার মাধ্যমেই স্বাধীনতার পরোক্ষ ঘোষণা করা হয়েছে।

শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, পৃথিবীর ইতিহাসে আছে কোন বিরোধী দল দেশ শাসন করেন? বঙ্গবন্ধু বিরোধী দলের হয়েও দেশ শাসন করেছেন।

তিনি আরও বলেন, বঙ্গবন্ধু ৭ মার্চের ভাষণে বলেছিলেন, তোমাদের যা যা কিছু আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবিলা করতে হবে। এখন বাংলাদেশের শত্রু কারা? যারা ১৯৭১ স্বাধীনতার বিরোধী ছিল, ৭৫-এ ইনডেমনেটি অধ্যাদেশ জারি করেছিল, ইনডেমনেটি জারি করেছিল মোস্তাক, জিয়া সেটিকে আইনে পরিণত করেছিল।

আলোচনা সভায় অ্যাসোসিয়েশন অব টেলিভিশন চ্যানেল ওনার্স (অ্যাটকো) সভাপতি অঞ্জন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য আলহাজ্ব আমির হোসেন আমু, তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন অ্যাটকো সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ইকবাল সোবহান চৌধুরী।

অনুষ্ঠানে আমির হোসেন আমু বলেন, মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীনতা অর্জন শুধু একটি পতাকা বা মানচিত্র বিশ্বের জায়গা করে নেওয়ার জন্য নয়, শোষণমুক্ত একটি দেশ বিশ্ব দরবার উপস্থাপন করার জন্য। দেশটাকে বঙ্গবন্ধু গণতান্ত্রিক পদ্ধতির মাধ্যমে সাজাতে চেয়েছিলেন।

তিনি বলেন, গণতান্ত্রিক ধারায় একটি দেশ সাজাতে চেয়েছিলেন বলেই তিনি নয় মাসের মধ্যে একটি সংবিধান প্রণয়ন করেন। সেই সংবিধানের মাধ্যমে নির্বাচন দেওয়া হলো। সেটি নিয়েও প্রশ্ন তুলেছিল একটি পক্ষ। কিন্তু বিতর্কিত করতে পারেনি নির্বাচনকে। যখন আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে, যখন দ্রব্যমূল্য মানুষের ক্ষমতার মধ্যে, যখন সবকিছু সঠিক পথে চলছিল ঠিক তখনই বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়েছিল।

হাছান মাহমুদ বলেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যা তারাই করেছিল যারা দেশের স্বাধীনতা চায়নি। বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ড, তার পরিবারের হত্যাকাণ্ড আসলে তাদের হত্যাকাণ্ড নয় বরং স্বাধীনতাকে হত্যা। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিলেন জিয়াউর রহমান। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর জিয়াউর রহমান খুনিদের বিচারের পথ রুদ্ধ করে দিয়েছিলেন। শুধু তাই নয়, যাতে বিচার না হয় ১৯৭৯ সালে সংসদের প্রথম অধিবেশনে একটি আধ্যাদেশকে আইনে রূপান্তর করা হয়েছিল।

তিনি বলেন, জিয়াউর রহমান অনেক সেনা কর্মকর্তার ফাঁসি দিয়েছেন। ভোরবেলা কোনো বিচার ছাড়াই তাদের ফাঁসি দেওয়া হয়। অথচ তিন মাস পরে সামরিক আদালতে যা হয় এগুলো প্রমাণসহ বলতে পারি। এমন মানবাধিকার লঙ্ঘন বিশ্ব ইতিহাসে কত জায়গায় হয়েছে সেটি আমার প্রশ্ন। এখন তারা মানবাধিকারের কথা বলেন।

তিনি আরও বলেন, গুমের তালিকায় বেশ কয়েকজন খুনি ও আসামি রয়েছে। গুম হওয়া পরিবারের সঙ্গে সভা-সমাবেশে দাঁড়িয়ে বিএনপি আসামিদের পক্ষে দাঁড়িয়েছে। গুম হওয়া অনেকেই ফিরে এসেছে। আর যারা এখনো আসেনি তাদেরকে খোঁজার চেষ্টা করছে সরকার।

টিআই/ওএফ