জুলাই মাসে বাংলাদেশে সাধারণত গড়ে প্রায় ৫শ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়। ছবি : ঢাকা পোস্ট

গত ৪০ বছরের মধ্যে এবারের বর্ষায় বাংলাদেশে সবচেয়ে কম বৃষ্টিপাত হয়েছে বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে বিবিসি বাংলা। এতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের আবহাওয়া অধিদপ্তরের হিসেবে চলতি বছরের বর্ষাকালে অর্থাৎ জুলাই ও আগস্টে গত চার দশকের মধ্যে সবচেয়ে কম বৃষ্টিপাত হয়েছে। একই সঙ্গে এই দুমাসের মধ্যে অন্তত পনের দিন দেশের কোনো না কোনো জায়গায় দাবদাহের মতো পরিস্থিতি দেখা গেছে, যা অনেকটাই নজিরবিহীন।   

জুলাই মাসে বাংলাদেশে সাধারণত গড়ে প্রায় ৫শ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়। সেখানে এ বছর হয়েছে মাত্র ২১১ মিলিমিটার। আর আগস্টেও হয়েছে স্বাভাবিকের চেয়ে ৪০ শতাংশ কম। 

এ অবস্থার কারণে সর্বোচ্চ তাপমাত্রার পাশাপাশি সর্বনিম্ন তাপমাত্রাও বেড়ে গিয়েছিল। তাই দিনের পাশাপাশি রাতেও যথেষ্ট গরম অনুভূত হয়েছে।

কিন্তু হঠাৎ করে আবহাওয়ার এমন আচরণের জন্য মৌসুমি বায়ুর খেয়ালি আচরণকেই দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞরা। 

আরও পড়ুন : দীর্ঘস্থায়ী লা নিনা, বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণিঝড়ের ঝুঁকি বাড়ছে 

আবহাওয়াবিদ বজলুর রশীদ বলছেন, গত মাস ও এ মাসে অনেকগুলো লঘুচাপ হয়েছে কিন্তু এগুলো দ্রুত বাংলাদেশের ওপরে আসতে পারেনি। পরপর যে কয়েকটি নিম্নচাপ হয়েছে, সেগুলোর কারণে উত্তর প্রদেশ, বিহার হয়ে পাকিস্তানে পর্যন্ত পর্যাপ্ত বৃষ্টি হয়েছে। গত সপ্তাহের আগেও পাকিস্তানে ব্যাপক বৃষ্টি হয়েছে।  

গত ৩ আগস্ট ঢাকা পোস্টে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, এবারের জুলাইয়ের মতো এত কম বৃষ্টি আগে হয়নি। ২০২০ সালের জুলাইয়ে দেশে গড় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ছিল ৫৫৩ মিলিমিটার। আর গত বছরে তা ছিল ৪৭১ মিলিমিটার। 

গত ১৮ মার্চ ঢাকা পোস্টে ‘জলবায়ু পরিবর্তন : ঝুঁকি মোকাবিলায় আমরা কি সক্ষম?’ শীর্ষক একটি কলামে ড. কবিরুল বাশার লিখেছিলেন, বাংলাদেশ নাতিশীতোষ্ণ তাপমাত্রার দেশ হিসেবে পরিচিত হলেও বিগত কয়েক বছরে তাপমাত্রার অস্বাভাবিক আচরণ সেই পরিচিতি ম্লান হয়ে যাচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বাংলাদেশে বৃষ্টিপাত হ্রাস পাবে বলে বিজ্ঞানীদের আশঙ্কা। বিগত কয়েক বছরে বাংলাদেশে বৃষ্টিপাতের মৌসুম এবং ধরন পরিবর্তিত হয়েছে। 

বৃষ্টিপাত কমে যাওয়া এবং অসময়ে বৃষ্টিপাত কৃষিনির্ভর বাংলাদেশের শস্য এবং ফসল উৎপাদনে ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। বৃষ্টিপাত কমে যাওয়ার ফলে ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর নেমে গিয়ে খরায় আক্রান্ত হবে বিপুলসংখ্যক মানুষ, এর মধ্যে বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের লোকই বেশি। এরকম খরায় কত মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হবে, তার ব্যাপারে বিভিন্ন উৎস থেকে আলাদা আলাদা উপাত্ত পাওয়া যায়। কারো মতে, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে ২০৫০ সালে নাগাদ খরায় উদ্বাস্তু হবে প্রায় ৮০ লাখ মানুষ। 

এনএফ