বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট দলের অধিনায়ক ও অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানের বেটউইনার নিউজে শুভেচ্ছাদূত হিসেবে যোগদানের সংবাদে বেটউইনার ডট কমে জুয়াড়ির সংখ্যা বেড়ে যায় প্রায় ১০ গুণ। বৃহস্পতিবার ওই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত তিনজনকে গ্রেপ্তারের পর এমনটি জানিয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।

গ্রেপ্তার হওয়া তিনজনকে জিজ্ঞাসাবাদে সিআইডি জানতে পারে, সাকিব আল হাসান ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর হিসাবে যোগ দেওয়ার পর বাড়তে থাকে জুয়ারির সংখ্যা। আর তা বাড়তে বাড়তে প্রায় ১০ গুণে গিয়ে ঠেকে। এ বছরের মে থেকে আগস্ট পর্যন্ত চার মাসে তাদের মাধ্যমে অন্তত পাঁচ কোটি টাকার লেনদেন হয়।

সম্প্রতি বেটউইনারের কার্যক্রম নিয়ে সিআইডির সাইবার টিম মাসব্যাপী অ্যানালাইসিস করে কয়েকজন বাংলাদেশি এজেন্টকে শনাক্ত করে। বুধবার কুমিল্লা জেলার কয়েকটি এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের দুই বাংলাদেশি এজেন্ট ও নগদের এক কর্মচারীকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তাররা হলেন, আবু বক্কর সিদ্দিক (৩০), আব্দুল্লাহ আল আউয়াল (২৬) ও মো. তোরাফ হোসেন (৩৭)। 

সিআইডি জানায়, বেটউইনার মূলত অ্যাপসভিত্তিক একটি অনলাইন বেটিং (জুয়া) সাইট। রাশিয়া থেকে এটি পরিচালিত হয়। স্পোর্টস, বেটিং ও ক্যাসিনোর জন্য এটি বিখ্যাত। বাংলাদেশের জুয়াড়িদের অন্যতম জনপ্রিয় ওয়েবসাইট এটি।

সাইটটি বাংলাদেশে এজেন্ট নিয়োগ করে মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস ব্যবহার করে অনলাইন গ্যাম্বলারদের (জুয়ারি) সঙ্গে জুয়ার টাকা লেনদেন করে। পরে এসব টাকা ক্রিপ্টোকারেন্সিতে (বিন্যান্স মাধ্যম) রূপান্তর করে রাশিয়ায় পাচার করে। 

গত ২ আগস্ট ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান নিজের ফেসবুক পেজে ঘোষণা দেন, নিউজ বেটউইনার নামের একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন। এর পর থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ তাকে নিয়ে শুরু হয় বিতর্ক, নানা সমালোচনা। এশিয়া কাপের আগে সাকিব চুক্তি থেকে সরে আসেন। তবে  চুক্তি থেকে সরে আসার আগেই শুধুমাত্র সাকিবের যোগ দেওয়ার খবরে প্রায় ১০ গুণ জুয়াড়ি বেড়ে যায় বেটউইনারে।

বেটওইনারের কার্যক্রম নিয়ে বিশেষ পুলিশ সুপার (এসএসপি) মো. রেজাউল মাসুদ বলেন, একজন জুয়াড়ি মোবাইল নম্বর অথবা ই-মেইলের মাধ্যমে বেটিং সাইটে বা অ্যাপসে অ্যাকাউন্ট ওপেন করেন। অ্যাকাউন্টের বিপরীতে একটি ই-ওয়ালেট তৈরি হয়, যাকে জুয়াড়িরা ইউএসডিটি বলা হয়। শুরুতে এর ব্যালেন্স শূন্য থাকে। এ ওয়ালেটে ব্যালেন্স যোগ করার অনেক মাধ্যম রয়েছে, যার মধ্যে বিকাশ, নগদ, রকেট, উপায় ও ট্রাস্ট এজিয়াটা অন্যতম। এগুলোর যেকোনো একটি ক্লিক করলে সেখানে একটি এজেন্ট নম্বর দেখায়। যে নম্বরে ন্যূনতম ৫০০ টাকা দিলে কিছুক্ষণের মধ্যে ই-ওয়ালেট বা ইউএসডিটি ব্যালেন্সে যুক্ত হয়ে যায়। এ টাকা বা ব্যালেন্স দিয়ে ইউজার পরে জুয়ায় অংশ নিতে পারেন।

তিনি আরও বলেন, মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসের এজেন্টরা জমা করা টাকা তুলে বিন্যান্স নামক মানি এক্সচেঞ্জ অ্যাপের মাধ্যমে মার্কিন ডলারে কনভার্ট করেন। পরে বিন্যান্সের মাধ্যমে এ টাকা বিভিন্ন দেশে পাচার হয়ে যায়।

গ্রেপ্তার হওয়া তিনজনের বিরুদ্ধে পল্টন থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে বলেও জানান সিআইডির এ কর্মকর্তা।

এআর/আরএইচ