‘বিপিসির ডিজি সেলিমের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অঢেল সম্পদের অভিযোগ’– শিরোনামে গত ২৫ আগস্ট ঢাকা পোস্টে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। প্রকাশিত সংবাদের প্রতিবাদ জানিয়েছেন বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) মহাব্যবস্থাপক (হিসাব) এ টি এম সেলিম।

গত ২৯ আগস্ট এ টি এম সেলিমের পক্ষে পাঠানো প্রতিবাদলিপিতে বলা হয়, ‘বিপিসির ডিজি সেলিমের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অঢেল সম্পদের অভিযোগ’ সংক্রান্ত একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। যা মিথ্যা, বানোয়াট, ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্যমূলক। এ সংবাদ জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করতে পারে। তাই আমি এর তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং এ সংক্রান্ত আমার বক্তব্য তুলে ধরছি।

নিয়োগ সংক্রান্ত : আমার নিয়োগ নিয়ে যে অভিযোগ তুলে ধরা হয়েছে তা মিথ্যা, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন। আমি যথারীতি লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণের মাধ্যমে উত্তীর্ণ হয়ে সহকারী ব্যবস্থাপক পদে যোগদান করি। আমার চাকুরীতে নিয়োগকালীন কোনো সময়ে কামাল উদ্দিন বিপিসিতে সচিব কিংবা অন্য কোনো পদে দায়িত্বে ছিলেন না। আমি এ বিষয়ে চ্যালেঞ্জ করছি। তাছাড়া আমার নিয়োগ নিয়ে কোনো সমস্যা থাকলে দীর্ঘ ২২ বছরের মধ্যে তা উত্থাপিত হতো।

মংলা অয়েল ইনস্টলেশন প্রকল্প সংক্রান্ত : মংলা অয়েল ইনস্টলেশন প্রকল্পটি বিপিসি'র অর্থায়নে বাস্তবায়ন করা হয়নি। প্রকল্পটি তিনটি তেল বিপণন কোম্পানির অর্থায়নে বাস্তবায়ন করা হয়। কোম্পানিগুলোর মধ্যে পদ্মা অয়েল কোম্পানি লি. ওই প্রকল্পের বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠান এবং পদ্মা অয়েল কোম্পানি লি. এর ডিজিএম ওই প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক ছিলেন। বিপিসি’র পক্ষে এর পরিকল্পনা বিভাগ প্রকল্পের কাজ তদারকি করে থাকে। যেহেতু প্রকল্পটি তিনটি তেল বিপণন কোম্পানির অর্থায়নে বাস্তবায়িত হয়েছে; সেহেতু উক্ত প্রকল্পের কোনো হিসাব বিপিসি’র অ্যাকাউন্টে অন্তর্ভুক্ত নাই। বিপিসি’র পরিকল্পনা বিভাগই বিল অনুমোদন নেয়। হিসাব বিভাগ শুধুমাত্র ভাউচার প্রস্তুতের কাজে সহযোগিতা করে। প্রকল্পের নামে একটি পৃথক ব্যাংক হিসাব রয়েছে যেখানে তিনটি তেল বিপণন কোম্পানি টাকা জমা রাখে। ঠিকাদার বিলের সব পেমেন্ট প্রকল্প পরিচালক থেকে বুঝে নিতেন। বিপিসি’র তহবিল থেকে ওই প্রকল্পের কাজে এখনও কোনো অর্থ ব্যয় করা হয়নি। যে সব ভাউচার পাওয়া যায়নি সেগুলো ২০১৫ সালের ভাউচার। তখন আমি হিসাব বিভাগের মহাব্যবস্থাপকের দায়িত্বে ছিলাম না।

এছাড়া ভাউচার সংরক্ষণ করা মহাব্যবস্থাপকের কাজ নয়। এটি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার দায়িত্ব। সম্প্রতি সরকারি নিরীক্ষা অধিদপ্তর প্রকল্পের যাবতীয় কাগজপত্র (বিল/ভাউচার) সংরক্ষণের দায়িত্ব প্রকল্প পরিচালকের বলে মন্তব্য করেছে। অধিদপ্তর প্রকল্প পরিচালককে প্রয়োজনীয় ভাউচার যথাযথভাবে সংরক্ষণ না করার জন্য জবাব দিতে বলেছে। প্রকল্পের কাজ সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়ন করা একটি সমন্বিত কাজ। এখানে প্রতিটি কাজে ব্যক্তিগতভাবে আমার নাম জড়ানো উদ্দেশ্যমূলক।

এসপিএম প্রকল্পের জমি সংক্রান্ত : ইস্টার্ন রিফাইনারির লি. এর এসপিএম প্রকল্পের জমি সংক্রান্ত যাবতীয় বিষয়াদি বিপিসি’র পরিকল্পনা বিভাগ, প্রকল্প পরিচালক ও জেলাপ্রশাসক, কক্সবাজারের তত্ত্বাবধানে সম্পাদন হয়ে আসছে। এসপিএম প্রকল্পের জায়গার জমি দেখারও সুযোগ হয়নি আমার। আমি চ্যালেঞ্জ করে বলতে পারি, আমি কোনোদিন এ সংক্রান্ত আলোচনায় কিংবা মিটিংয়েও ছিলাম না। তথাপি আমার নামে উদ্দেশ্যমূলকভাবে মিথ্যা প্রচার করা হয়েছে। 

স্ট্যান্ডার্ড এশিয়াটিক অয়েল কোম্পানি লি. এর ৩০০ কোটি টাকার অনিয়ম প্রসঙ্গে : স্ট্যান্ডার্ড এশিয়াটিক অয়েল কোম্পানি লি. এর একটি পরিচালনা পর্ষদ আছে যেখানে পরিচালক আছেন চারজন। এছাড়া একজন প্রধান নির্বাহী আছেন। তারাই কোম্পানির সবকিছুর দায়িত্বে আছেন। ওই পরিচালনা পর্ষদ ও প্রধান নির্বাহীর পরিবর্তে বিপিসি’র মহাব্যবস্থাপক (হিসাব)-কে কোথায় ক্ষমতা দেওয়া আছে তা বোধগম্য নয়। যে অটোমেশন নিয়ে লিখা হয়েছে সে অনুযায়ী যদি অটোমেশন এর দায়িত্ব কোনো বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের নিকট দেওয়া হতো সেক্ষেত্রে বিপিসি’র টাকা ৮/১০ দিন বেসরকারি অটোমেশন প্রতিষ্ঠানের নিকট থেকে যেত যা ক্ষতিকর ও ঝুঁকিপূর্ণ বিধায় দুর্নীতি দমন কমিশনের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় কর্তৃক ১৩/০৫/২০১৯ তারিখের ২৮.০০.০০০০.০১৩.০১০.৩৪.১৯.৬৭ নং স্মারকমূলে বন্ধ করা হয়েছে। এতে আমাকে জড়িয়ে সংবাদ প্রচার উদ্দেশ্যমূলক বটে।

ফয়েজ লেক এলাকায় ছয়তলা ভবনের মালিক হওয়া প্রসঙ্গে : ফয়েজ লেক আবাসিক এলাকায় আমার নামে ছয়তলা ভবনের মালিক হওয়ার যে তথ্য তুলে ধরা হয়েছে তা সম্পূর্ণ রূপে মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। ওই ভবনের দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলা ডুপ্লেক্স করে আমার শ্বশুরের পরিবার থাকেন। চতুর্থ তলা তার একমাত্র মেয়ে অর্থাৎ আমার স্ত্রীর নামে হেবামূলে লিখে দেন এবং বাকি ফ্লোরগুলো তিনি ভাড়া দেন। ফলে ছয়তলা ভবনের মালিক হওয়ার যে তথ্য আমার বিরুদ্ধে প্রকাশ করা হয়েছে তা সম্পূর্ণ উদ্দেশ্যমূলক।

চট্টগ্রাম শহরে একাধিক বাড়ি থাকা সংক্রান্ত : চট্টগ্রাম শহরে আমার একাধিক বাড়ি থাকার সংবাদটি মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। চট্টগ্রাম শহরে আমার নামে কোনো বাড়ি নাই। আমার বাবা তার সব ছেলেকে বাড়ি করার জন্য আলাদা আলাদা জমি লিখে দেন। তারা সেখানে যার যার বাড়ি করছেন। আমার বাবা আমার জন্যও একটি জমি বাড়ি করার জন্য রেজিস্ট্রি হেবামূলে লিখে দেন। আমি বিয়ের এক বছর পর থেকে শ্বশুর বাড়িতে থাকি। বাড়ি করার জন্য আমার বাবার দেওয়া জমিটি এখনও খালি পড়ে আছে। ফলে আমাকে জড়িয়ে প্রকাশিত এ সংক্রান্ত সংবাদ উদ্দেশ্যমূলক এবং আমাকে সামাজিকভাবে হেয় করার অপচেষ্টা মাত্র।

চকবাজারে কোটি টাকার দোকান প্রসঙ্গে : প্রকাশিত সংবাদ মতে চট্টগ্রাম নগরীর চকবাজার মার্কেটে ইডিইএস নামে আমার কোনো কাপড়ের দোকান নেই।

ঢাকা-চট্টগ্রামে বিপুল সম্পদ প্রসঙ্গে : প্রকাশিত সংবাদে ঢাকার অভিজাত এলাকা গুলশান- ১ ও ২, বনানী, ধানমন্ডি ও বারিধারায় আমার ১৬টি ফ্লাট আছে মর্মে উল্লেখ করা হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে ঢাকায় উল্লেখিত কোনো এলাকায় আমার নামে কোনো ফ্লাট নেই। এছাড়া চট্টগ্রামের হালিশহর, জিইসি মোড়, বহদ্দারহাটসহ বিভিন্ন এলাকায় ফ্ল্যাট ও জায়গা কেনার বিষয়গুলো সম্পূর্ণ মিথ্যা, ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্যমূলক। আমি এ বিষয়ে চ্যালেঞ্জ করছি।

টাকা পাচার করে অস্ট্রেলিয়ায় সেকেন্ড হোম করা প্রসঙ্গে : অস্ট্রেলিয়ায় কিংবা বাংলাদেশে আবদুল করিম নামে আমার কোনো বন্ধু নেই। সুতরাং আবদুল করিম নামের বন্ধুর নিকট টাকা পাচার/কিংবা অস্ট্রেলিয়ায় বাড়ি করার প্রশ্নই ওঠে না। এ বিষয়ে আমি নির্দ্বিধায় চ্যালেঞ্জ করছি।

পারিবারিক কাজে অফিসের গাড়ি ব্যবহার প্রসঙ্গে : আমি প্রাধিকার অনুযায়ী অফিসের গাড়ি ব্যবহার করে থাকি। এ সংক্রান্ত সংবাদটি ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্যমূলক।

ব্যাংকে হাজার কোটি টাকার আমানত, তবুও ঋণ প্রসঙ্গে : বিপিসি আমানত থাকা অবস্থায় ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়ার যে তথ্য দেওয়া হয়েছে তা মিথ্যা ও বানোয়াট। গত ৭/৮ বছরের মধ্যে বা অদ্যাবধি বিপিসি ব্যাংক থেকে কোনো ঋণ নেয়নি। যেখানে ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়া হয়নি, সেখানে ২৭৮ কোটি টাকা সুদ দেওয়ার প্রশ্নই আসে না। ভুল তথ্যের ভিত্তিতে প্রকাশিত সংবাদটি উদ্দেশ্যমূলক এবং আমাকে ব্যক্তিগতভাবে হেয় করার অপচেষ্টা মাত্র।

হোয়াটসঅ্যাপে যোগাযোগের চেষ্টা প্রসঙ্গে : হোয়াটসঅ্যাপে আমি অবশ্যই জবাব দিয়েছি এই বলে যে, ‘আমি মহান আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ করছি, আল্লাহ যেন যারা প্রতিহিংসার বশবর্তী হয়ে এ ধরনের নোংরামি করছে, তাদের হেদায়েত দান করেন।’

এমএআর/