স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে পৌঁছাতে যেসব সূচক অর্জন করতে হয়, তার প্রত্যেকটি সূচকেই ব্যাপক সাফল্য অর্জন করেছে বাংলাদেশ। মাথাপিছু আয়, মানবসম্পদ সূচক এবং অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা বা সঙ্কট এ তিন সূচকের ওপর ভর করেই উন্নয়নশীল দেশের কাতারে প্রবেশ করতে হয়।

বিশ্বের যেকোন দেশকেই এলডিসি থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হওয়ার স্বীকৃতি দিয়ে থাকে জাতিসংঘ। আর এ বিশাল পরীক্ষার মূল্যায়ন করে সিডিপি। পুরো প্রক্রিয়াটি করতে ছয় বছর সময় লাগে। ইআরডি’র সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা এ কথা জানিয়েছেন।

ইআরডি কর্মকর্তারা জানান, নিউইয়ার্কে পাঁচ দিনব্যাপী জাতিসংঘ সদর দপ্তরে কমিটি ফর ডেভেলপমেন্ট পলিসির (সিডিপি) ত্রিবার্ষিক পর্যালোচনা সভা শেষ হয়েছে শুক্রবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) রাতে। সভায় চূড়ান্তভাবে বাংলাদেশকে এলডিসি থেকে উত্তরণের সুপারিশ করা হয়েছে। সুতরাং দেশ স্বাধীনতার ৫০ বছর পরে এসে স্বল্পোন্নত বা এলডিসি থেকে রেহাই পাচ্ছে বাংলাদেশ। 

স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীলে উত্তীর্ণ হওয়াকে দেশের সুবর্ণজয়ন্তী এবং মুজিব শতবর্ষের একটি বড় অর্জন বলে মনে করছেন অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) কর্মকর্তারা। বিশ্বে বর্তমানে ৪৭টি দেশ স্বল্পোন্নত দেশের তালিকায় রয়েছে।

ইআরডি’র কর্মকর্তারা জানায়, জাতিসংঘের তথ্য অনুয়ায়ী বিশ্বের সবগুলো দেশকে তিন ক্যাটাগরিতে ভাগ করা হয়েছে। এগুলো হচ্ছে- উন্নত, উন্নয়নশীল ও স্বল্পোন্নত বা এলডিসি। এলডিসি থেকে উত্তোরণে জাতিসংঘ মাথাপিছু আয়, মানবসম্পদ সূচক এবং অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা বা সঙ্কট সূচকের হিসেবে ভিত্তিতে করে থাকে।

এর আগে ২০১৮ সালে এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের প্রাথমিক যোগ্যতা অর্জন করে। ২০২১ সালে চূড়ান্ত সুপারিশ পাওয়ায় নিয়ম অনুযায়ী ২০২৪ সালে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে মিলবে উন্নয়নশীল দেশের স্বীকৃতি। এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের সব শর্ত পূরণ হওয়ায় এবারের বৈঠক শেষে সিডিপি বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদার স্বীকৃতির জন্য চূড়ান্ত সুপারিশ করেছে।

উন্নয়নশীল দেশ হতে কোন কোন সূচকে কত পয়েন্ট লাগে?
উন্নয়নশীল দেশ হতে একটি দেশের মাথাপিছু আয় হতে হয় কমপক্ষে ১২৩০ মার্কিন ডলার, ২০২০ সালে বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় ছিল ১৮২৭ ডলার। মানবসম্পদ সূচকে প্রয়োজন হয় ৬৬ পয়েন্ট, এ সূচকে বাংলাদেশের বর্তমান পয়েন্ট ৭৫.৩। যেকোন দেশ অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা সূচকে ৩৬ পয়েন্টের বেশি থাকা দেশগুলোকে স্বল্পোন্নত দেশের তালিকাভুক্ত হয়। এর মানে ৩২ পয়েন্টে কোন দেশ আসার পর উন্নয়নশীল দেশের যোগ্যতা অর্জন হয়। সেখানে বাংলাদেশের পয়েন্ট এখন ২৫ দশমিক ২। বাংলাদেশের সঙ্গে নেপালকেও উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের সুপারিশ করা হয়েছে।

পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য (সিনিয়র সচিব) সচিব ড.শামসুল আলম বলেন, ‘যেহেতু স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের স্বীকৃতি পেয়েছি, সেহেতু বৈদেশিক ঋণের ক্ষেত্রে অনুদান, নো ইন্টারেস্টসহ আর কিছু সুবিধা সংকুচিত হবে। তবে এগুলো কমলেও আমাদের কোনো সমস্যা হবে না। কারণ আমরা সবকিছুতে স্বয়ংসম্পূর্ণ বিধায় উন্নয়নশীল দেশের কাতারে প্রবেশ করেছি। সুতরাং আমরা এখন স্বাবলম্বী। যার ফলে সাহায্য-সহায়তা আর না হলেও চলবে।’

তিনি বলেন, ‘এখন আর কেউ গরিব বলে কথা বলবে না। আমাদের শক্তিশালী রিজার্ভ আছে। প্রতিনিয়তই রেমিট্যান্স আসছে। বর্তমানে দেশের অর্থনীতি শক্তিশালী। এজন্য অনুদানসহ অন্যান্য সুবিধা ছাড়া আমরা চলতে পরবো। এতোদিন প্রাথমিকভাবে থাকলেও সিডিপি চূড়ান্তভাবে আমাদের উন্নয়নশীল দেশের জন্য সুপারিশ করেছে। এরপর নিয়ম অনুযায়ী আগামী তিন বছর পর জাতিসংঘ আমাদের আনুষ্ঠানিকভাবে উন্নয়নশীল দেশের স্বীকৃতি দেবে।’
 
মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্যদিয়ে ১৯৭১ সালে বিশ্বে বাংলাদেশ নামক স্বাধীন মানচিত্র জন্ম নেয়। বাংলাদেশ স্বাধীনের পর মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জার এ দেশকে তলাবিহীন ঝুড়ি উপাধী দিয়েছিল। বাংলাদেশের জন্মের প্রায় ৫০ বছর পর এসে বিশ্ব দরবারে উন্নয়নের রোড মডেলের পরিচিতি লাভ করেছে সোনার বাংলা। এখন বাংলাদেশ তলাহীন ঝুড়ি না উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

এসআর/এসএম